গত ১ মার্চ বেলা তিনটার দিকে শাহজাদপুর গ-১১/১, (৩য় তলা), প্রগতি সরণী রোডের জরাজীর্ণ একটি তিন তলা বাণিজ্যিক ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের উপরের ফ্লোরে বিএনএফের সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এটিই দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। তবে কার্যালয়ে ওঠার দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতেই লোহার গেটে তালা ঝুলানো। গেটের সামনে পড়ে আছে কয়েকটি বস্তা। ভবনটিতে থাকা অন্য ব্যবসায়ীরা জানান, মাসের পর মাস বন্ধ থাকে কার্যালয়টি। ৭-৮ মাস আগে একবার দলটির সভাপতি কার্যালয়ে এসেছিলেন। তখন তার সঙ্গে কিছু নেতাকর্মী ছিল। আবুল কালাম আজাদ বর্তমান সংসদের গুলশান এলাকার সংসদ সদস্য।
ভবনটির দ্বিতীয় তলায় রয়েছে বারিধারা ডেকোরেটরের দোকান। সেখানে কথা হয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার কাছে বিএনএফের কার্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন এই কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে একটা ছেলে আসে। কিছু সময় থেকে আবার চলে যায়।
তিন তলা এ ভবনের নিচতলায় রয়েছে মোটরসাইকেলের ওয়ার্কশপ, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও কাপড়ের দোকান। নিচতলার একজন দোকানির কাছে দলটির কার্যালয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৮-৯ মাস আগে একবার এমপিকে দেখেছি এখানে আসতে। এখন আবার শুনছি তৃতীয় তলা একটি সমিতিকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সত্য-মিথ্যা কিছু জানি না।
কার্যালয় বন্ধের বিষয়ে জানতে বিএনএফের সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদকে ফোন করা হলে তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, ‘আপনাকে কে বলেছে আমাদের কার্যালয় বন্ধ, এখনও খোলা আছে।’
পরদিন ২ মার্চ দুপুর ১টার দিকে আবুল কালাম আজাদের দেওয়া ঠিকানা তোপখানা রোডের ২২/১ বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের ভবনের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, একটি কক্ষের দরজায় স্কচটেপ দিয়ে সাঁটানো কাগজে লেখা–“বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট-বিএনএফ। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কার্যালয়।” তবে কক্ষটি ছিল তালাবদ্ধ।
এতে আবারও আবুল কালাম আজাদের কাছে কার্যালয় বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘১ মার্চ রাত ১০টা পর্যন্ত আমরা মিটিং করেছি। তাই পিয়ন এখনও ঘুমাচ্ছে মনে হয়। এ কারণে বন্ধ আছে।’
দলের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি দফতর সম্পাদক মো. শফিউল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন।’ পরে মো. শফিউল্লাহকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার সামনে দলের প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ আছেন। ওনার কাছে থেকে জেনে নেন।’ তখন আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আপনি এতকিছু কেন জানতে চান? আমরা তো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। আপনি এতকিছু কেন খোঁজ নিচ্ছেন? আপনাকে কোনও তথ্য দেবো না আমরা।’
জানা গেছে, বিএনএফের নিজস্ব ওয়েবসাইটও নেই। তবে ফেসবুকে একটি আইডি দেখা গেছে। সেখানে দলের পক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দেওয়ার ছবি, দলটির একমাত্র সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের সংসদের কথা বলার কিছু ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। এর বাইরে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দেওয়া আছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ থেকে আবুল কালাম আজাদ ৪৩ হাজার ৫৮৫ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনে আওয়ামী লীগের কোনও প্রার্থী ছিল না।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি থেকে ২০১০ বহিষ্কৃত হন দলটির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। এরপর ওই বছরই তিনি বিএনএফ নামের একটি দল প্রতিষ্ঠা করেন। একপর্যায়ে মতবিরোধ দেখা দিলে দলটি থেকে ২০১৪ সালে ২৭ মার্চ নাজমুল হুদাকে ‘বহিষ্কার’ করা হয়। এরপর ৭ মে নাজমুল হুদা সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনএফ বিলুপ্ত ঘোষণা করে এর নতুন নাম দেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ)।তবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল হিসেবে নাম রয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টেরই (বিএনএফ)।