ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ছিল ১৭ বছর। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ২০ দলীয় জোট ছাড়ে দলটি। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের আস্থা অর্জনে তৎপর ছিল দলটি। ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের কাছে আসন চেয়ে চিঠিও দিয়েছিল দলটি। ৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে গণভবনে গিয়েছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের ১২ নেতা। এছাড়া তফসিল ঘোষণার পর স্বাগতও জানায় দলটি। এছাড়া কওমি সনদের স্বীকৃতি আদায়, স্বীকৃতির পর সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েও মিছিল করে দলটির নেতারা। সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতাও হয় তাদের। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বা মহাজোটে না গেলেও নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয় দলটি। চারটি আসন চাইলেও তিনটি আসন পাওয়ার আশ্বাসও পেয়েছিল তারা।
তফসিল ঘোষণার পর যাচাই-বাছাই শেষে ৫৬ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা করে ইসলামী ঐক্যজোট। তবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪১ জন। কিন্তু মিত্র আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পায়নি দলটি। সবখানেই আওয়ামী লীগ নয়তো মহাজোটের আলাদা প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কাছে ইসলামী এক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর জন্য নরসিংদী-৩, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহর জন্য চট্টগ্রাম-৭, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনীর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসাইনের জন্য কুমিল্লা-১ আসনে মনোনয়নের নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে প্রতিশ্রুত তিনটির বদলে শুধু দলের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনীর একটি আসনের বিষয়ে আশ্বাস দেয় আওয়ামী লীগ। পরে সেখানেও দেখা দেয় জটিলতা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এ কারণে এই আসনে নির্বাচন করা থেকে সরে আসেন হাসানাত আমিনী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে লড়বেন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যও জিয়াউল হক। আসনটি থেকে জিয়াউল হকের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে মহাজোটের প্রতি আহ্বান জানিয়েও কোনও সাড়া পায়নি ইসলামী ঐক্যজোট।
সূত্র জানায়, ইসলামী ঐক্যজোটের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসাইন কুমিল্লা-১ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। যদিও আওয়ামী লীগ সেখানে সুবিদ আলী ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দিয়েছে। এছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী নরসিংদী-৩ আসনে নির্বাচন করার আগ্রহ দেখান। কিন্তু সেখানেও আওয়ামী লীগের নিজেদের প্রার্থী দেওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। সেখানকার আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। সেখানে শেষ দিনেও মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি আবদুল লতিফ নেজামী।
ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান নেজামী বলেন, ‘আমার লোকজন নির্ধারিত সময় ৫টার আগেই মনোনয়নপত্র নিয়ে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে যান। কিন্তু সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ৫টা ২ মিনিট বেজে গেছে দাবি করে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেননি। অথচ বিকাল ৫টার পর এমনকি সন্ধ্যা সোয়া ৬টাও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নিতে আদালতে যাবো।’
এদিকে আওয়ামী লীগ থেকে প্রত্যাশিত আসন না পাওয়ার ঘটনায় দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামীদ দল ছেড়েছেন। তিনি ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে ইসলামে যোগ দিয়েছেন।
আবদুল লতিফ নেজামী এ ব্যাপারে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দলীয় কর্মীদের মধ্যে সাময়িক হতাশা থাকলেও তা কেটে যাবে। ইসলামী ঐক্যজোট স্বতন্ত্র অবস্থানে রয়েছে, কোনও জোট বা মহাজোটে নেই। এ অবস্থানে থেকেই রাজনৈতিক কার্যক্রম চলবে।