ড. কামাল বলেন, ‘তাকে মৃত্যুদণ্ডের ভয় দেখালেও তিনি হাসিমুখে বলতেন, তোমরা আমার কাছ থেকে একটা কথাও বের করতে পারবে না। স্বাধীন হওয়ার পর ফিরে এসে তিনি দেশ গড়ার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছেন।’
গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘‘আমার মনে আছে, তখন জেলের জিওসি ছিলেন জেনারেল মোজাফফর উদ্দিন। তিনি আমাকে বললেন, ‘আমি বুঝে গেছি তোমার নেতা খুব বড় মাপের। বঙ্গবন্ধু যেভাবে কথা বলেছেন, এটা দেখে তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে। আমি খুব বিপদে আছি। তাকে গ্রেফতারের পর থেকে হাজার হাজার মানুষ আসছে ক্যান্টমেন্টের দিকে। স্লোগান দিচ্ছে জেলের তালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনবো। তোমরা বিক্ষোভকারীদের থামাও, এটা তো ক্যান্টনমেন্ট এলাকা। বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিলে অনেক লোক মারা যাবে, রক্তপাত ঘটবে।’ এরপর ক্যান্টনমেন্ট থেকে জিপ দিয়ে কয়েকজন গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ৩২ নম্বরের বাসায় নিয়ে এলো। এসব ইতিহাস তো আমরা দেখেছি। ফলে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে থেকে কেউ কোনও কথা বের করতে পারেনি।’’
বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্ব ছিল উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, ‘সেই নেতৃত্বের ফলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। তাই আজ আমরা মুক্ত, শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে স্মরণ করি।’
বঙ্গবন্ধু যে সংবিধানে স্বাক্ষর করেছেন, সেটি জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে মন্তব্য করে ড. কামাল বলেন, ‘আমি তো মনে করে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রত্যেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জাদুঘরে নিয়ে এই দলিল দেখানো উচিত। তাকে শ্রদ্ধা করতে হলে তার স্বাক্ষরিত সংবিধানকে মানতে হবে। তিনি যে আমাদের দেশের মালিক করে গেছেন, সেটা ছাড়তে পারি না। দেশের মালিক জনগণ, এটাই হলো স্বাধীনতার অর্থ। দেশ জনগণের, কোনও একক ব্যক্তির নয়। সেখানে স্বৈরতন্ত্র থাকার কোনও অবকাশ নেই।’
ড. কামাল বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনও ঘাটতি হলে মনে করতে হবে বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করা হচ্ছে। জাতির পিতাকে সবার ওপরে রাখতে হবে। আমরা সবাই তাকে শ্রদ্ধা করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত সংবিধানে বলা আছে, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। জনগণের সবচেয়ে বড় কতর্ব্য হচ্ছে তিনি যেটা দিয়ে গেছেন, সেটা রক্ষা করা। যে বা যারা এর (সংবিধান) বিরুদ্ধে কাজ করবে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। কারণ, তারা দেশ, সংবিধান ও স্বাধীনতার শত্রু। তাই আসুন, আমরা সবাই আজকে শপথ নিই, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, সেটা যেন পুরোদমে ভোগ করতে পারি। এজন্য আমাদের জেলায় জেলায় এবং থানায় থানায় সংগঠিত হতে হবে।’
সংবিধানকে সর্বোচ্চ আইন উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে কারও হাত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটাতে কোনও হাত দেওয়া যাবে না। আমরা কিছুটা আনন্দবোধ করতে পারি, আমাদের বিচারকরা ঝুঁকি নিয়েও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় জন্য কাজ করে গেছেন। আমরা সেদিন দেখলাম, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। এটি লজ্জার বিষয়।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোকাব্বির খান প্রমুখ।