সৈয়দ ইবরাহিমের রহস্যজনক ‘শুকরিয়া ও দোয়া প্রার্থনা’ সভা

২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের ডাকে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে জিনজিয়ান রেস্টুরেন্টে আড়ম্বরপূর্ণ এ দোয়া মাহফিলে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষনেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উপস্থিত রাজনৈতিক নেতাদের কেউ-কেউ সভাটিকে ‘রহস্যজনক’ বলে জানিয়েছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেখানে উপস্থিত থাকবেন বলে শোনা গেলেও—তিনি সেখানে যাননি।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক রাজনৈতিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, শনিবার হঠাৎ করেই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন সৈয়দ ইবরাহিম। দোয়া মাহফিলের মূল বিষয়বস্তু ছিল, ‘২০২০ এর জন্য মহান আল্লাহ’র প্রতি শুকরিয়া ও ২০২১ সালের জন্য মহান আল্লাহ’র নিকট দয়া প্রার্থনা।’ শনিবার বেলা ১২টা থেকে দুপুর আড়াই পর্যন্ত সভাটি চলে, বলে জানা যায় বিভিন্ন নেতার সূত্রে।

বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত ১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টন-গুলিস্তান এলাকায় যারা সরকার পতনের দাবিতে কয়েক মিনিট বিক্ষোভে ছিলেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই এই দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

তবে বিএনপির মহাসচিবকে এ অনুষ্ঠানে যেতে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি শেষ মুহূর্তে সবকিছু জেনে তা বাতিল করেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধানমন্ডিতে কোনও অনুষ্ঠানে যাননি বিএনপির মহাসচিব। তিনি বাসায় ছিলেন, আজকে তার ভাগনে সুর কামাল ইন্তেকাল করেছেন।’

দোয়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী একাধিক নেতা জানান, জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও দলটির নেতা এহসানুল হক মিলন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মনজুসহ অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘দোয়া করে লাভ নেই। দোয়া করে কিছু হবে না। আমরা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই। ভোটাধিকার চাই। এটা আমাদের রাজপথে নেমে আদায় করতে হবে।’

জানতে চাইলে শনিবার সন্ধ্যায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  উনি (সৈয়দ ইবরাহিম) বললেন, ‘নববর্ষ এখনও আছে, নতুন বছরকে আবাহন করে দোয়া মাহফিল, তারপর খাওয়াব, আসেন’। আমি সভায় ত্রিশ সেকেন্ড কথা বললাম, ‘গেল বছর তো খারাপ, সামনের বছর ভালো হবে। এই সরকার যাওয়ার জন্য যেন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়, সবাই মিলে সে চেষ্টা করি।’

একজন নেতার দাবি, ‘কল্যাণ পার্টির যেখানে সংগঠন ও আর্থিক বিষয়টি সম্পর্কে সবার ধারণা আছে, সেখানে এত বিশাল মানুষের অংশগ্রহণে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। এর পেছনে ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক সংগঠনের যুক্ততা আছে বলে অনেকে ধারণা করছেন।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি-জোটের শরিক নেতা সৈয়দ এহসানুল হুদা, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি নেতা নিলুফার চৌধুরী মনি, সাবেক সচিব সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ,  কল্যাণ পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য ফোরকান ইবরাহিম,  ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের,  সাবেক রাষ্ট্রদূত আসাফউদ্দৌলা, কল্যাণ পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. ইকবাল মাহমুদ, বিএসএমএমইউএর সার্জারি বিভাগের সাবেক ডিন প্রফেসর সাইফুল ইসলাম, জাগপা মহাসচিব সাইফুল ইসলামসহ আরও অনেকে।