স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে হেফাজত নেতারা বললেন ‘কিছু বলার নাই’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা। সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে হেফাজতের ৫/৬ জন শীর্ষ নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় ঢোকেন। রাত ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে তারা বেরিয়ে আসেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসা থেকে বের হয়ে আসার পর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বলেন হেফাজত নেতারা। এ প্রতিবেদকদ্বয় তাদের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।

হেফাজতের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি অসুস্থ। কথা বলতে পারছি না।’ পরে হেফাজতের মহাসচিব হিসেবে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা একটু কথা বলেছি।’

বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মামুনুল হকের ভাই মাওলানা মাহফুজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে, তবে আর কিছু বলার নাই।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে হেফাজত নেতারা

এরপর উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক তাদের কাছে কিছু বলার অনুরোধ জানালেও তারা দ্রুতগতিতে গাড়িতে উঠে চলে যান। এসময় মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি হাত নাড়িয়ে বক্তব্য প্রদানে অস্বীকার করেন।

এর আগে রাত ১০টার দিকে হেফাজতের শীর্ষ নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় ঢোকেন। এসময় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলটির নায়েবে আমীর মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজী, হেফাজতের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদী, মামুনুল হকের ভাই বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান (দেওনার পীর), মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী প্রমুখ।

এর আগে সোমবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে হেফাজতের পাঁচ শীর্ষ নেতা বৈঠক করেন। হেফাজতের পক্ষ থেকে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী।

হেফাজতের একজন নেতা সোমবার রাত পৌনে ১২টায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুপুরে বৈঠকের ফলোআপ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তার মধ্যস্ততায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠকটি হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। হেফাজতের নেতারা চাইছেন, আর কোনও নেতাকর্মীকে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার না করে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে আন্দোলনের নামে তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। তখনও হেফাজতের শীর্ষ নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ না করেই একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। তবে ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের প্রভাবশালী নেতা মাওলানা মামুনুল হক এক নারী সঙ্গীসহ আটক হলে নড়েচড়ে বসে সরকার।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাতেই হেফাজতের মধ্যম ও শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ রবিবার (১৮ এপ্রিল) মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় হেফাজতের প্রভাবশালী নেতা মাওলানা মামুনুল হককে।

সোমবার তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিবসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।

আরও পড়ুন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হেফাজতের শীর্ষ নেতারা