জিডিপি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর জানাশোনা উদ্ভট: মান্না

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘প্রস্তাবিত অর্থবছরের বলা হচ্ছে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে। করোনার অভিঘাতের মধ্যে এই দাবি উদ্ভট, যা অর্থমন্ত্রীর অর্থনীতি সম্পর্কে জানাশোনাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। তবে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় একটি তথ্য নিজেও হয়তো বুঝতে পারেননি, এটা দিয়ে তিনি মূলত জিডিপি নিয়ে বড়াই করাকে একেবারে ফালতু বিষয়ে পরিণত করেছেন।’

শনিবার (৫ জুন) বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মান্না এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন দলের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

মান্না বলেন, ‘বাজেট বক্তৃতায় তিনি (অর্থমন্ত্রী) জানান, ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় যা ছিল ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এই দেশের কে না জানে ১৯৭৪ সালের ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের কথা। সেই দুর্ভিক্ষে সরকারি হিসাবেই ২৭ হাজার মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। বেসরকারি হিসেবে এক লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ মানুষ মারা যায়। বিরাট জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়ে থাকলেও অসংখ্য মানুষ না খেয়ে মারা যেতে পারে এটা সরকারের বোঝা উচিৎ।’ ভবিষ্যতে জিডিপি নিয়ে ‘ফুটানি করতে চাইলে’ ১৯৭৪-৭৫ এর জিডিপি প্রবৃদ্ধি আর দুর্ভিক্ষের কথা মনে রেখে ‘লজ্জিত হওয়া উচিত হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মাহমুদুর রহমান মান্না এও বলেন, ‘আরেকটি কথা- বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশ ডেটায় গেলে যে কেউ আরেকটি তথ্য দেখে নিতে পারেন, এই ভূখণ্ডের আরও দুটি উল্লেখযোগ্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৪৮ এবং ১০ দশমিক ৯৫ যথাক্রমে ১৯৬৮ এবং ১৯৬৪ সালে, আইয়ুব খানের আমলে। হ্যাঁ, ওই দুই বছর পূর্ব পাকিস্তানে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে এখনো পরিস্থিতি যেমন আছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কর্মসংস্থান নষ্ট হওয়ার কারণে মানুষের আয়, অভ্যন্তরীণ ভোগ যতটা কমে যাবে সেটা মাথায় রাখলে আগামী অর্থবছরে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নেয়াটা হাস্যকর। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য নেমে এসেছে ৩ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায়।’

তিনি বলেন, ‘এই বাজেটের চূড়ান্ত আকার (ব্যয়) ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা; অর্থাৎ এই বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। যে অকল্পনীয় উদ্ভট রাজস্বের উপর ভিত্তি করে এই ঘাটতি দেখানো হয়েছে সেটা এর আশপাশেও যাবে না। অর্থাৎ সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে যে ঘাটতি দেখাচ্ছে ঘাটতি হবে কমপক্ষে তার দ্বিগুণ ‘

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোমিনুল ইসলাম, জিন্নুর চৌধুরী দিপু, মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, মাহবুব মুকুল, জাহেদ উর রহমান, সাকিব আনোয়ারসহ নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।