টাকা নিয়ে নুরের ‘অস্বচ্ছতা’

বিএনপি ভেঙে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করতে চাই না: রেজা কিবরিয়া

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া তার দলের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে আমি ভাঙতে চাই- এটা নুর বলে বেড়াচ্ছে। বিএনপি ভাঙা নিয়ে আমি কাজ করি না। আমার কোনও ইন্টারেস্ট নেই। আমার কোনও লাভ নাই। বিএনপি ভাঙলে লাভ হবে আওয়ামী লীগের। আমি আওয়ামী লীগকে কোনও সহযোগিতা করতে চাই না।’

বুধবার (২৮ জুন) সকালে গণঅধিকার পরিষদের (রেজা কিবরিয়া) দফতর উপ-কমিটির সহ-সমন্বয়ক শাহাবুদ্দিন শুভ ভিডিও বার্তার কথা উল্লেখ করে জানান, রেজা কিবরিয়া দলের জন্য পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন।

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘বিএনপি শক্তিশালী থাকুক, সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিক আমি সেটা চাই। কে কার পক্ষে এটা পরে বোঝা যাবে। আপনারা নিজেরাই দেখতে পাবেন। দিনে দিনে খবর বের হবে।’

সংগঠনে আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দলে টাকা দিয়েছি সাধ্যমতো। আমি ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা পাই না। সে জন্য দলের জন্য এত টাকা আমার পক্ষে খরচ করা সম্ভব না। টাঙ্গাইলে সেদিন আমি কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি যে কর্মীদের জন্য রিস্ক (ঝুঁকি) নিতে রাজি আছি সেটা প্রমাণ করেছি। ইনসাফ কায়েম কমিটিসহ যেকোনও সরকারবিরোধী সভায় আমি থাকতে রাজি আছি।’

‘আমি বিএনপির মিটিংয়ে যাই, এবি পার্টির মিটিংয়ে সরকারবিরোধী বক্তব্য রেখেছি। ইসলামি আন্দোলনের মিটিংয়ে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়েছি। আমি অনেক দলের মিটিংয়ে গেছি। ওগুলো নিয়ে তো কেউ উচ্চারণ করে না’ বলে অভিযোগ করেন রেজা কিবরিয়া।

গণঅধিকার পরিষদের চলমান সংকট প্রসঙ্গে ড. কিবরিয়া বলেন, ‘দলটা যুব সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এই উদ্যোগকে বাঁচাতে নুরুল হক নুরের হাতে এই দলটাকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কারণ, সেই এই চেতনাকে বিক্রি করেছে। ব্যবসা করেছে, নিজে ধনী হয়েছে।’

নুরের বিরুদ্ধে ‘টাকা পয়সার লোভ ও লেনদেনে অস্বচ্ছতার’ অভিযোগ এনে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘টাকা পয়সার প্রতি লোভটা বারবার সে প্রমাণিত করেছে। আমরা মনে করি ভবিষ্যতে এই দলটাকে যদি কোথাও পৌঁছাতে হয়, নুরুল হক নুর সঙ্গে থাকলে এটা হবে না। নুর আমার ওপর রেগে গেছে দুই কারণে। একটা হলো টাকা-পয়সা লেনদেনের স্বচ্ছতায় ওর কিছু সমস্যা আছে। এটা অনেক আগে থেকেই। ২০১৮ সালের আন্দোলনে ওর সঙ্গে যারা ছিল তারা জানে টাকা পয়সার ব্যাপারে ওর স্বচ্ছতার অভাব আছে।’

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের সঙ্গে কাজ করতে চাই না। আমি বিদেশি দালালদের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করতে আসিনি। গণঅধিকার পরিষদকে সব ধরনের বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব থেকে রক্ষা করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত রাখতে আমি বদ্ধপরিকর। দলের অর্থনৈতিক লেনদেনকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।’

নুরের ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মোসাদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কী এই প্রশ্ন করা হলে নুর তার পরিষ্কার উত্তর দেয়নি। একটা মিটিং সম্পর্কে আমরা জেনেছি। দেশে যখন সে ফেরত এলো তাকে কিছু করা হলো না। এটাতে আমাদের সন্দেহ জাগলো।

তিনি যোগ করেন, ‘যেখানে মেন্দি সাফাদির সঙ্গে একটা কনফারেন্সে দেখা করে শুধু ছবি তুলেছিলেন বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী, সেই অপরাধে এখনও তিনি জেলে আছেন। সেখানে নুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় না। সে কার জন্য কাজ করছে যে এই ধরনের প্রটেকশন তার আছে? এ রকম প্রকাশিত অপরাধে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইলে আক্রমণের সময় নুর পুলিশি হেফাজতে, পুলিশের গাড়ির মধ্যে বসে ছিল। পুলিশ তার অনেক যত্ন নিয়েছে, এটা খুব ইন্টারেস্টিং। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা খতিয়ে দেখা দরকার। সরকার, পুলিশ ও ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে নুরের কী সম্পর্ক এটা নিয়ে অনেক সন্দেহ মানুষের আছে।’

নিজের বিরুদ্ধে নুরের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে কিবরিয়া বলেন, ‘কয়েকটি বিষয় নিয়ে আমার মনে হয় কথা বলা দরকার। আরেকজন অনেক কথা বলছেন, এরা অনেক মিথ্যাচার করছে। এগুলোর প্রতিবাদে অনেক কিছু বলা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য আমার বাবা প্রাণ দিয়েছেন, এটা অনেকেই জানেন। আমি নিজে বড় চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি মানুষের জন্য কাজ করার জন্য। আমার বেতনের পরিমাণ নির্বাচন কমিশনের স্টেটমেন্টে পাবেন। নুর অভিযোগ করেছেন আমি ৩ লাখ টাকা বেতনে ইনসাফ কায়েম কমিটির হয়ে কাজ করেছি। এটা হাস্যকর। আমি রোজগার করেছি ৩৯ বছর। নুরুল হক নুর কতদিন করেছে হালালভাবে এই হিসাবটা তার দেওয়া দরকার।’ 

পাঁচ প্রস্তাব

গণঅধিকার পরিষদের (রেজা কিবরিয়া)  দফতর উপ-কমিটির সহ-সমন্বয়ক শাহাবুদ্দিন শুভ জানিয়েছেন, রেজা কিবরিয়া দলের পুনর্গঠনে পাঁচ দফা প্রস্তাবনা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে গণঅধিকার পরিষদে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান; সব কার্যক্রমে ব্যক্তিকে প্রাধান্য না দিয়ে, দলীয় গঠনতন্ত্রকে প্রাধান্য; এক মাসের মধ্যে উচ্চতর পরিষদ গঠন; নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কাউন্সিল; দলের সংকট নিরসনে গঠিত তদন্ত কমিটিকে নির্বিঘ্নে তদন্তকাজ পরিচালনায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন কিবরিয়া।

তিনি আশা করেন, কমিটি পূর্ণ নিরপেক্ষতার সঙ্গে প্রতিবেদন দেবে। তিনি এও জানান, তদন্ত কমিটির যেকোনও সুপারিশ তিনি সাদরে গ্রহণ করবেন।

আরও পড়ুন-

বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর রেজা কিবরিয়া: নুর