নীলনকশার নির্বাচন হবে জেনে আগেই ভিসানীতি কার্যকর করেছে: গণতন্ত্র মঞ্চ

সরকার আবার একটা একতরফা, নীলনকশার, সাজানো নির্বাচন করতে চাচ্ছে। তাই নির্বাচনের ৩/৪ মাস আগেই মার্কিন ভিসানীতি কার্যকর করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দমন, নিপীড়ন, গ্রেফতার ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এবং অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে এসব কথা বলেন মঞ্চের নেতারা।  জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট গণতন্ত্র মঞ্চ।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব বলে মানুষ যাদেরকে চেনে তারা সবাই এই সরকারের উপর অনাস্থা জানিয়েছে। একারণেই নির্বাচনের ৩/৪ মাস আগেই ভিসানীতি কার্যকর করা হয়েছে। তার মানে কী? তারা আগেই বুঝতে পেরেছে এই সরকার আবার একটা একতরফা, আরেকটা নীলনকশার, আরেকটা সাজানো নির্বাচন করতে চাচ্ছে। আর এই খেলা বন্ধ করার জন্যই তারা তাদের কাজ করছে। আর আমরা রাজপথে আছি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের ভোটের অধিকার থাকতে হবে, সরকার সেই অধিকার নষ্ট করে দিয়েছে। পর পর দুইটি সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তৃতীয়বারের নির্বাচন সামনে। আমরা এবার ভোট দেবো। এবার সরকার চেষ্টা করলেই মানুষের ভোটের অধিকার কেঁড়ে নিতে পারবে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সততা, নিষ্ঠা, অঙ্গীকার, মানুষের প্রতি ভালোবাসার দরকার। আর এইসব কিছু নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ আপনাদের সামনে এসেছে। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করবো। সেটা কেবল ভোটের লড়াই নয়। আমরা যদি ক্ষমতায় যাই, তাহলে দেশ বদলে দেবো।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, সভা-সমাবেশের অধিকার কেড়ে নিয়ে— এখন যখন বিশ্বের কাছে মাথা হেঁট করেছেন তখন বলেন, সবাই মিলে সরকারকে সমর্থন করতে, তখন জাতীয়তাবাদের ধোঁয়া তোলেন। আপনাদের এই সমস্ত ভণ্ডামি বাংলাদেশের মানুষ আজ পরিষ্কার করে দিয়েছে। আপনাদের এই সমস্ত ভণ্ডামি আর মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার ষড়যন্ত্র মানুষ আর গ্রহণ করবে না। ক্ষমতায় টিকে আছেন কীভাবে আমরা সবাই জানি। দালাল, লুটপাটকারী, দেশবিক্রিকারী যারা আজকে রাষ্ট্র-প্রশাসনে বসে সরকারের আরেকটি নীলনকশার নির্বাচনকে জায়েজ করতে চান,  সফল করতে চান তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে হবে। তার জন্য আমাদের দরকার গণজাগরণ-গণঅভ্যুত্থান। image_6487327(2)

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এ দেশে আর কোনও নির্বাচন হবে না। একতরফা নির্বাচন আর কোনোভাবেই সম্ভব না এবং তা করতেও দেবো না। যারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে, তারা  ‘নব্য রাজাকার’ হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং ভবিষ্যতে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’’

রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সরকার-সংবিধানকে নিজেদের মতো পরিবর্তন করে, নিজেদের মতো বানিয়ে আজকে বলছে— সংবিধানের অধীনে ছাড়া বাংলাদেশে নির্বাচন করবে না। এই সংবিধান, এই আইন-কানুন, এই সরকার ব্যবস্থা, এই সংসদ— এদের সবগুলোকে সংস্কার করতে হবে। আর এই সংস্কার করার জন্য বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য এদের বিচার করতে হবে। এদেরকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আর এক মুহূর্তও চলতে পারে না।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব বলেন, নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন? আমরা তো কাউকে জিজ্ঞেস করিনি। জনগণের পক্ষ থেকে তো সংবাদ সম্মেলন করে জিজ্ঞেস করা হয়নি নিষেধাজ্ঞা কেন এলো? আপনারা (সরকার) প্রতিদিন কেন কথা বলছেন? প্রত্যেকে কথা বলছেন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে। তার মানে চোরের মন পুলিশ পুলিশ। সেজন্যই পাহারা দেওয়ার কথাটি আসে। আমরা এগুলো হতে দেবো না।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ মঞ্চের নেতাকর্মীরা।

সমাবেশ শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা পদযাত্রা করেন। পদযাত্রাটি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।