‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যে’র নতুন কর্মসূচি আসছে কাল, ছাত্রদের সাড়া মিলবে কি

সরকার পতনসহ বিভিন্ন দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’। আগামীকাল রবিবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি জানাবে ১৫টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বিত এই প্ল্যাটফর্ম। নতুন কর্মসূচি দিলেও সাধারণ ছাত্রসমাজের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে অনেক সংগঠনের প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে নামে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ সংগঠন হওয়ায় ছাত্রদলের অতীতের অভিজ্ঞতার কারণে সমন্বিত এই উদ্যোগে নতুনত্ব আসবে কি না, এ নিয়ে কয়েকটি সংগঠনের নেতারা দ্বিধায় রয়েছেন।

ভোটের অধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ আত্মপ্রকাশ করে। চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে ছাত্রদের সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন কাজ শুরু করে। গত আগস্টে প্রক্রিয়াটি একটি গঠনের মধ্যে আসে। এতে রাখা হয়নি ছাত্রশিবিরকে।

ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ১৫টি সংগঠন হলো— জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম, মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (বিজেপি-পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (খন্দকার লুৎফর), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

আত্মপ্রকাশের পর ৯ অক্টোবর ছাত্র কনভেনশন করেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য। নতুন করে মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি নিয়ে নামছে এই সংগঠনগুলো। শনিবার (১৪ অক্টোবর) ঐক্যের জরুরি বৈঠকে নতুন কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’।

ছাত্র ঐক্যে যুক্ত একাধিক সংগঠনের নেতারা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রবিবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রে রেখে কর্মসূচি সাজানো হচ্ছে।’

সংগঠনের নেতারা আরও বলেন, নামে ফ্যাসিবাদ থাকায় মূল চ্যালেঞ্জ ছাত্রদলের সামনে। ছাত্র আন্দোলনের ক্ষেত্রে ’৬৯ ও ’৯০-এর আন্দোলনে ছাত্রসমাজের আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৯-২০০০ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলসহ ওই সময়ে চারদলীয় ঐক্যজোটের ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বিত আন্দোলনেও সাড়া মিলেছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে এই উদ্যোগ কতখানি কার্যকর হবে, সেটা নির্ভর করবে ছাত্রদলের ওপর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রনেতা বলেন, ‘দু-একটি ইস্যুতে এখনও ছাত্রদলের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যেগুলো হয়তো আগামী দিনে ঠিক হয়ে যাবে।’

তবে কারও কারও প্রশ্ন, ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আছেন। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে পুরো ছাত্রদলের মুভমেন্ট গড়ে তোলার সুযোগ আছে কি না? একই সঙ্গে শীর্ষ চার নেতার মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল দৌড় চলছে ছাত্রদলে, যার সমাধান পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সূত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ নিয়ে কেউ নাম-পরিচয় উদ্ধৃত হতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে শনিবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মূল বিষয় হচ্ছে, ২০ বছর আগে ছাত্রদলের যে অবস্থা ছিল, গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের জুলুম-নির্যাতন ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার। ইতোমধ্যে সারা দেশে তাদের নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন আন্দোলনে, জীবন দিয়েছেন কয়েকজন। আর ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ হঠাৎ হয়নি। আমাদের ১৫টি সংগঠনের মধ্যে অনেক বৈঠক হয়েছে, অনেক আলোচনা হয়েছে।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘ছাত্রদলসহ আমরা ১৫টি সংগঠন গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলা, ভোটের অধিকারের দাবিতে এবং আন্দোলন-পরবর্তী ক্যাম্পাসে সহাবস্থান, ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে ছাত্রদল ঐকমত্য পোষণ করেছে, সেগুলোয় তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যে কারণে ছাত্র ঐক্যের আগামী দিনের আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রসমাজের সমর্থন ও অংশগ্রহণ আরও বেশি জোরালো হবে বলে বিশ্বাস করি।’