পূর্ব ঘোষিত ৯ দফা দাবি আদায়ে বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলন গড়তে প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ১৫টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’।
রবিবার (১৫ অক্টোরর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জোটের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অবহেলা ও উদাসীনতা এবং দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রয়োজনে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা প্রকারান্তরে গিনিপিগে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থার অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক ও অনুৎপাদনশীল কাঠামো অটুট থাকায় একদিকে শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে শিক্ষার মান ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ মদদে প্রশ্নফাঁস শিক্ষার মূল ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃত করে একদলীয় বয়ান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে ধারণ না করে বিভক্তি ও বিভেদ সৃষ্টির নানা উপাদানে পরিপূর্ণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যেকোনও দুঃসময়ে এদেশের শিক্ষার্থীরা সবার আগে প্রতিবাদমুখর হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী চরিত্রকে দমনে সরকার দলীয় সংগঠন ছাত্রলীগকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে তৈরি করা হয়েছে এবং তাদের একচেটিয়া আধিপত্য জারি রাখতে যা খুশি তাই করার লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জবাবদিহিহীন বেপরোয়া ক্ষমতা ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী-দখলবাজ শক্তিতে পরিণত করেছে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান অবৈধ সরকারের কাছে ছাত্র সমাজ কিংবা দেশবাসীর পদত্যাগ ভিন্ন অন্য কোনও দাবি নেই। আমাদের দাবি, গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী আন্দোলনরত সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি। সরকারের পদত্যাগ, ভোটাধিকার এবং রাষ্ট্র ও শিক্ষাব্যবস্থার গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লড়াই তাই আজ এক সুতোয় গাঁথা।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ৯ দফা প্রস্তাবনা ঘোষণা করা হয়েছে। এই ৯ দফার ভিত্তিতে বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে ক্রিয়াশীল গণতান্ত্রিক ১৫টি ছাত্র সংগঠন সম্মিলিতভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে আমরা প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের কর্মসূচি
আগামী ১৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে অতি দ্রুত রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে জনমত সংগঠিত করা হবে।
এভাবেই গণতান্ত্রিক, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক বাংলাদেশের পক্ষে শক্তিশালী জনমত গঠন এবং রাজপথে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদীদের পতন নিশ্চিত করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য’ নামে নতুন এই জোট। ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সবর্জনীন শিক্ষা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ১৫টি ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে এই জোট আত্মপ্রকাশ করে। তবে এই ১৫ ছাত্র সংগঠনের মধ্যে নেই ছাত্র শিবিরের নাম।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ও ছাত্র অধিকার পরিষদ সাধারণ সম্পাদক আরিফুল আদিব, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড প্রমুখ।