আ.লীগের সঙ্গে জামায়াতেরও বিচার চায় বাসদ

সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ এক বিব্রতি দিয়েছেন।

রবিবার (১১ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রকারান্তরে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের প্রতিই মানুষের সহানুভূতি সৃষ্টি করবে।

তিনি বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা না দিয়ে ঢালাও মামলা দিয়ে মামলাকে প্রহসনে পরিণত করার চক্রান্ত বন্ধ করে জুলাই গণহত্যার জন্য দায়ীদের এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করার দাবি জানান।

বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত পনের বছরের শাসনে আওয়ামী লীগ দেশের সব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, অসংখ্য মানুষের গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। এখনও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জুলাই গণহত্যাসহ তাদের বিগত কর্মকাণ্ডের জন্য ন্যূনতম অনুশোচনাও নেই। কিন্তু তারপরও সন্ত্রাস দমন আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো অগণতান্ত্রিক আইনের মাধ্যমে নির্বাহী আদেশে কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা অথবা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার মতো যেকোনও সিদ্ধান্ত দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের পথে প্রতিবন্ধক। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন করে জুলাই গণহত্যাসহ সব রাজনৈতিক ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করার মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া সঠিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, গত ৫৪ বছর ধরে এদেশের মানুষ একাত্তরের গণহত্যার দায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে বিচার করার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কোনও সরকার এই উদ্যোগ নেয়নি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারও এই দাবিকে উপেক্ষা করে জামায়াত ইসলামের যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে। জুলাই গণঅভ্যূত্থানকালে সেই ফ্যাসিবাদী সরকারও সন্ত্রাস দমন আইনে নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে জনগণের মনোযোগ ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচারের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধ এবং মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার দায়ে জামায়াতে ইসলামীরও বিচার দাবি করেন তিনি।

ফিরোজ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সমাবেশে যারা বা যেসব সংগঠন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে স্লোগান উচ্চারণ করেছে এবং জাতীয় সংগীত গাইতে আন্দোলনকারীদের বাধা দিয়েছে তাদেরও চিহ্নিত করে বিচারপূর্বক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, প্রকৃত দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচার এবং প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার করে অতি দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু আমরা সরকারের দিক থেকে এর জন্য আস্থাশীল কোনও ভূমিকা লক্ষ্য করছি না। বরং সময়ে সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে মব তৈরি করে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করে সাম্রাজ্যবাদীদের নানা এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেওয়ার কৌশল হচ্ছে কিনা সেদিকে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।