আ. লীগের বিচারের জন্য বিএনপি বেশি আগ্রহী: আমির খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যারা নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে তাদের জনগণের সঙ্গে কোনও সম্পৃক্ততা নেই। জনগণের ওপর তাদের কোনও আস্থা নেই। বাংলাদেশের সবাই আওয়ামী লীগের বিচার চায়। অন্য রাজনৈতিক দলের থেকে আওয়ামী লীগের বিচার আমরাই বেশি চেয়েছি। আমাদের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কেউ হয়নি। সুতরাং বিএনপি তো বিচারের জন্য বেশি আগ্রহী।

মঙ্গলবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত অন্তর্বর্তী সরকারের দশ মাস-গণতন্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

আমির খসরু বলেন, সরকারের কাজ হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিচারের আওতায় আনা। বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে এদের বিচার করতে হবে। তাহলে ১০ মাসে সরকার এদের বিচারের আওতায় আনতে পারছে না কেন। সরকার যদি তাদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়, আমরা তো তাদের বিচারের আওতায় আনবো। 

তিনি বলেন, আমরা সংস্কারের ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা দেখছি না, বিচারের ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা দেখছি। তারপরেও রোডম্যাপটা দিতে এত ভয় কেন। আর নির্বাচনকে নিয়ে এত ভয় কেন। যাদের নির্বাচন দিতে ভয়, অর্থাৎ জনগণের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। জনগণের ওপর তাদের কোনও আস্থা নেই। গণতান্ত্রিক অর্ডারের ওপর তাদের কোনও আস্থা নেই। এখানে আজকে বিভক্তিটা হলো, যারা গণতন্ত্র চায়, জনগণের মালিকানা চায়, যারা জনগণের আস্থা নিয়ে রাজনীতিতে বিশ্বাসী, সমর্থনে বিশ্বাসী, তাদের সঙ্গে যারা শেখ হাসিনার পথে চলছে, যে কারা নির্বাচিত না হলে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে না। এ প্রশ্নটা একেবারে পরিষ্কারভাবে সামনে চলে আসতেছে। আজকে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। 

বিএনপির এই নেতা বলেন, তাহলে তাদের গণতান্ত্রিক অর্ডারে ফিরে যেতে কোনও দ্বিধাদ্বন্ধ আছে! নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধ আছে! এবং নির্বাচনের বিপক্ষে সংস্কার এবং বিচারের বিষয়টা নিয়ে আসার অর্থ কী! এটা কোনও সাংঘর্ষিক বিষয় না। সবগুলো কিন্তু মিউচুয়াল এক্সক্লুসিভ। সবগুলো চলমান প্রক্রিয়া।

আমীর খসরু বলেন, পাঁচ-দশজন লোক নিজেদের বিজ্ঞ মানুষ হিসেবে মনে করে যে জনগণকে বাইরে রেখে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যবধানটা কোথায় আমি দেখতে পাচ্ছি না। গণতন্ত্রের স্পিরিট থেকে সরে গিয়ে অনির্বাচিত সরকারের দিনগুলো যতো দীর্ঘায়িত হবে, ততো বেশি অস্থিতিশীল হবে। তত বেশি মানুষ অধিকারহীন হবে। অনির্বাচিত সরকার যদি বেশিদিন ক্ষমতায় থাকে তাহলে তার আচরণ স্বৈরাচারের মতো হতে বাধ্য। সেটা অনির্বাচিত সরকার যে ফরমেটেই আসুক না কেন।

তিনি আরও বলেন, সংস্কারের ব্যাপারে কারও কোনও দ্বিমত দেখছি না। সংস্কার সংস্কার করে ওরা (অন্তর্বর্তী সরকার) গলা শুকিয়ে ফেলেছে। সকলে সংস্কারপত্র অলরেডি জমা দিয়েছি। ড. ইউনূস প্রথম থেকে বলছেন, যেখানে ঐকমত্য হবে, সে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। সংস্কারপত্র সবার জমা দেওয়ার পরেও কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, এ বিষয়গুলো জাতিকে জানানো হচ্ছে না কেন। এটা তো একটা রহস্যের ব্যাপার। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ড. ইউনূস বলেছেন বেশি হলে জুন আর কম হলে ডিসেম্বর। এখানে কম-বেশির প্রশ্নটা কোথা থেকে আসলো। উনিতো নিজেই বলেছেন, ঐকমত্য যেগুলো হবে, তার ভিত্তিতেই সংস্কার হবে। আবার বেশি আর কমের ইস্যুটা কোথা থেকে এলো। তাহলে কোনটা বেশি আর কোনটা কম, এটা কে নির্ধারণ করবে? 

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক শেখ আব্দুন নুরের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব বাবর চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সমন্বয়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর হোসেন মঞ্জু, গণধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান প্রমুখ।