২৭-২৮ জুন চট্টগ্রাম অভিমুখে লংমার্চ, এপ্রিলে নির্বাচন কেন বোধগম্য নয় বামজোটের

রাখাইনের ‘করিডোর’ ও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের লিজ প্রদান বন্ধের দাবিতে চলতি জুনের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠাতব্য ‘রোড মার্চ’ কর্মসূচি পালন করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। ‘জনমত উপেক্ষা করে করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর লিজ প্রদানের ক্ষেত্রে ডিপি ওয়ার্ল্ড ও সরকারের তৎপরতায় উদ্বেগও রয়েছে জোটের। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা কেন এপ্রিলে নির্বাচনের জন্য সময় বেঁছে নিলেন তাও বোধগম্য নয় জোটের। 

শনিবার (৭ জুন) বিকালে জোটের অন্যতম নেতা, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আগামী ২৭ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বাম, প্রগতিশীল, দেশপ্রেমিক দল, সংগঠনের উদ্যোগের লংমার্চ শুরু হবে।

রুহিন হোসেন উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনে বিদেশিদের যুক্ত যেতে পারে। বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আনা যেতে পারে কিন্তু বন্দর লিজ দেওয়া যাবে না। এটা দেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করে। দেশের জনগণ এই সিদ্ধান্ত মানে না। 

এদিকে, ঈদের আগের দিন প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বামজোট। শনিবার এক বিবৃতিতে জোট বলেছে, ‘ভাষণে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি, ডিসেম্বরে না হয়ে এপ্রিলে নির্বাচন কেন তা বোধগম্য নয়, ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ ফুটে উঠেছে।’

নেতারা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঈদের আগের দিন দেওয়া ভাষণে সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়ার কোন প্রতিফলন ঘটেনি বরং রাখাইনে করিডোর, চট্টগ্রামের নিউমুরিং কন্টিনেন্টাল টার্মিনালকে বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়ে ও ঐ বিষয়ে বিরোধিতাকারীদের নিয়ে যা বলা হয়েছে এবং যে সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগেরও বটে।’

বিবৃতিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)'র সিপিবি সভাপতি মো. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলীর নাম উল্লেখ করা হয়। 

বামজোট মনে করে, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে এসব কথার লেশমাত্র নেই। তিনি রাখাইনে করিডোর দেওয়ার প্রশ্নে যা বলতে চেয়েছেন, তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়— জনমত উপেক্ষা করে হলেও রাখাইনে করিডোর দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। 

‘সবচেয়ে খুব উদ্বেগের বিষয় হলো, তিনি চট্টগ্রামের বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়ে যে-সব কথার অবতারণা করেছেন তা কোন দেশ প্রেমিক মানুষ গ্রহণ করতে পারে না। এমনকি তিনি এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারী আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা প্রকারান্তরে ‘মব সন্ত্রাস’ কেই উসকে দিচ্ছে। সরকারের দায়িত্বপূর্ণ কোন পদে থেকে এ ধরনের উসকানি জনগণ গ্রহণ করবে না। বরং প্রত্যাখ্যান করবে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক। এই বন্দর বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়া অর্থ দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ওপর আঘাত হানার পথ পরিষ্কার করা। ইতিমধ্যে দেশের বামপন্থী গণতান্ত্রিক দল ও দেশপ্রেমিক সরকারের এই পদক্ষেপ রুখে দাঁড়াতে আগামী ২৭ ও ২৮ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড মার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কোন হুমকি ধামকি দিয়ে এই কর্মসূচি থেকে দেশ প্রেমিক জনগণকে পিছু হাঁটানো যাবে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং মানুষ এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এমনকি তারও আগে দ্রুততম সময়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর দেখতে চাইলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের এপ্রিল নির্বাচনের কথা বলেছেন। রোজা, পরীক্ষা, ধান কাটা, বর্ষা ইত্যাদি সার্বিক বিবেচনা ঐ সময়ে নির্বাচন মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বলেছি, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচিত সরকার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। 

‘কোন অজুহাতে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার অর্থ হলো কোন দল বা গোষ্ঠীর বিশেষ স্বার্থ রক্ষা করা। দেশকে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তির প্রভাব বলয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা। যা দেশকে দীর্ঘমেয়াদী সংকটে ফেলতে পারে।’

‘ভাষণে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি, ডিসেম্বরে না হয়ে এপ্রিলে কেন নির্বাচন তা বোধগম্য না। ভাষণে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাশ ফুটে উঠেছে।’

বামজোট মনে করে, অধিকাংশ দল ও জনগণের মতকে উপেক্ষা করে বিশেষ দল-গোষ্ঠীর স্বার্থে এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণার মধ্য দিয়ে ড. ইউনূস নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।