দেশের প্রবীণ রাজনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মোহসীন মন্টুর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের শোক অব্যাহত রয়েছে। রবিবার (১৫ জুন) বিকালে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মোস্তফা মোহসীন গণফোরামের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
দলের সভাপতির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মৃত্যুতে রবিবার বিকালে হাসপাতালে ছুটে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপে মির্জা ফখরুল তার বন্ধুর সম্পর্কে অনেক আবেগঘন মন্তব্য করেন। রবিবার বিকালে হাসপাতালে যাওয়ার পর মোস্তফা মোহসীন মন্টুর দুই মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের সন্তানদের সান্ত্বনা দেন। আরেক মেয়ে অস্ট্রেলিয়া থাকায় দেখা হয়নি তার।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে কেরানীগঞ্জে নিজের এলাকায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে রবিবার রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি মসজিদে প্রথম জানাজা হয়। সোমবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে। এরপর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা শেষে তাকে বনানী গোরস্থানে দাফন করা হবে।
বিএনপি মহাসচিব হাসপাতালে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপে জানান, ঢাকা কলেজে ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখেন। আইয়ুব খান-বিরোধী আন্দোলনে তারা একসঙ্গে যুক্ত থাকার কথা জানান। ফখরুল বলেন, ‘আমরা সেই ছাত্রজীবন থেকে একসঙ্গে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। লড়াই করেছি।’
মৃত্যুর পর রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মরহুম মোস্তফা মোহসীন মন্টু তার জীবদ্দশায় একজন সংগ্রামী রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি দেশবাসীর কাছে ছিলেন একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে ছাত্রজীবন থেকেই নানা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। তার মৃত্যু রাজনৈতিক অঙ্গনে শূন্যতার সৃষ্টি হলো। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অসামান্য অবদান দেশের মানুষ চিরকাল স্মরণ করবে।
আপাদমস্তক ছিলেন একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিক: মঈন খান
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য ও গণফোরাম-এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মোহসীন মন্টু’র মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান। শোক বার্তায় ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, জননেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু আপাদমস্তক ছিলেন একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিক।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকামী, আজীবন সংগ্রামী ও গণমানুষের নেতা হিসেবে মোস্তফা মোহসীন মন্টু ছিলেন একজন সফল রাজনীতিবিদ এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন সফল মানুষ। তিনি আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ ও লালন করেছেন আপন মহিমায়। মোস্তফা মোহসীন মন্টু’র মৃত্যুতে দেশ হারালো এক বলিষ্ঠ দেশপ্রেমিককে।’
স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় ছিলেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু: আ স ম রব
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিএলএফ-এর কমান্ডার মোস্তফা মোহসীন মন্টুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন।
শোক বার্তায় বলা হয়, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় ছিলেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে গঠিত স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মোস্তফা মোহসীন মন্টুর অবদান অনস্বীকার্য।
শোকবার্তায় আরও বলা হয়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-বিএলএফ এর কমান্ডার ছিলেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু। সেসময় ঢাকা ঢাকায় সশস্ত্র সংগ্রামের দুর্গ গড়ে তুলতে তার ভূমিকা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।
মোস্তফা মোহসীন মন্টুর মৃত্যতে ইসলামী আন্দোলনের শোক প্রকাশ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ মোস্তফা মোহসীন মন্টুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকাহত পরিবার ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব বলেন, রাজনীতির উত্তাল সময়ে এবং দেশ গঠনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে তার অভিজ্ঞতা জাতিকে উপকৃত করতো। তার মৃত্যুতে জাতি একজন প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে। আমি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
দুঃসাহসী স্বাধীনতা সংগ্রামী মন্টু: জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির পক্ষ থেকে এক শোক বার্তায় দুঃসাহসী স্বাধীনতা সংগ্রামী, বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রবীন রাজনীতিক, গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
জাসদের শোক বার্তায় বলা হয়, ১৯৬০ দশকে পাকিস্তানি সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ূবের কঠোর সামরিক শাসনের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রাম এগিয়ে নিতে ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও কামরুল আলম খান খসরু জুটি যে দুঃসাহসী ভ‚মিকা পালন করেছেন তা কিংবদন্তিতুল্য হয়ে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে।
আরও বলা হয়, মোস্তফা মোহসীন মন্টু মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অবরুদ্ধ ঢাকা শহরে বিএলএফ-মুজিব বাহিনীর একজন কমান্ডার হিসেবে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জিয়া ও এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সংগ্রামেও মোস্তফা মোহসীন মন্টু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
মোস্তফা মোহসীন মন্টুর মৃত্যুতে ওয়ার্কার্স পার্টির শোক
গণফোরাম সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মোহসীন মন্টুর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওর্য়ার্কাস পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল।
শোক বার্তায় তারা বলেন, জননেতা মন্টু মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে বেঁচে থাকবেন। দেশের ক্রান্তিকালে অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ রক্ষার লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্টুর খুব প্রয়োজন ছিল। উনার চিরবিদায় জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হলো। গণফোরামের প্রতিটি সদস্য সহ পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা রইল।
বাংলাদেশ একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে হারালো: গণসংহতি আন্দোলন
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ‘মোস্তফা মোহসীন মন্টু বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল ধরে সক্রিয় থেকে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছেন। বিগত ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনেও তিনি ভূমিকা পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে হারালো।’ তারা মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
ঐক্যফ্রন্ট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মন্টু: এবি পার্টি
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টুর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)'র চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় নেতারা বলেন, মোস্তফা মোহসীন মন্টু ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম নায়ক। বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকে শুরু করে জনগণের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে ৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি জনগণের সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বিশেষ করে বিগত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
মন্টুর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে: বাংলাদেশ ন্যাপ
মোস্তফা মোহসীন মন্টুর ইন্তেকালে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ।
রবিবার (১৫ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের গণমানুষের মুক্তির সংগ্রাম, গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় মোস্তফা মোহসীন মন্টুর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
তারা বলেন, গত ফ্যাসিবাদী শাসন-বিরোধী গণআন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মোস্তফা মোহসীন রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আদর্শ: ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি
মোস্তফা মোহসীন মন্টুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো শোকবাণীতে তিনি বলেন, মোস্তফা মোহসীন মন্টু ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক রাজনীতিক। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা যিনি জীবনের সব পর্যায়ে স্বদেশ গঠনে সংগ্রামী ভূমিকা রেখেছেন, সাহসী ভূমিকা রেখেছেন।
এম এ আউয়াল বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য তার সঙ্গে একসঙ্গে রাজনীতি করেছি, রাজনৈতিক জোট করেছি। তিনি ছিলেন গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূর্ত প্রতীক, যিনি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনি আগামী দিনের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে একজন আদর্শ, যার দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভবিষ্যত দেশ গঠন করা সম্ভব হবে।’