ওয়ালটনের মেডিকার্ট রোবট ব্যবহার করে চিকিৎসা দেওয়া যাবে রোগীকে

ওয়ালটন মেডিকার্ট রোবট-ইউভি-সি সিস্টেমকরোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় মেডিকার্ট রোবট ও জীবাণুনাশক রিমোট কন্ট্রোল ইউভি-সি সিস্টেম তৈরি করছে ওয়ালটন। রোবটটি ব্যবহার করে চিকিৎসা দেওয়া যাবে কোভিড-১৯ রোগীকে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় দেশের ইলেক্ট্রনিক্স প্রতিষ্ঠানটি।

প্রকৌশলীরা জানান, ওয়ালটনের তৈরি মেডিকার্ট রোবট ডিভাইসের মডেল ‘ডব্লিউআরএমসি-৪০০ এপি-২০২০’। এটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রিত একটি অটোমেটিক রোবট, যা ৪০০ মিটার বা ১৩০০ ফুট ব্যাস নিয়ে বিচরণ করতে পারে এবং স্বয়ংক্রিভাবে খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসা কিংবা অন্যান্য সরঞ্জাম বহনে সক্ষম। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিচালিত এই রোবট একবার পূর্ণ চার্জে ৬ ঘণ্টা চলতে পারে।

রোবটটি ব্যবহার করে আইসোলেশনে থাকা কোভিড-১৯ কিংবা অন্যান্য ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্তকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাবে। চিকিৎসক তার কক্ষে বা অন্যত্র বসে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন বা রিমোটের মাধ্যমে এটি পরিচালনা করতে পারবেন। এতে বিশেষ ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও স্পিকার যুক্ত আছে। এর মাধ্যমে চিকিৎসক ও রোগী পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।

চিকিৎসাক্ষেত্র ছাড়াও এই রোবট অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জনসমাগমের স্থান যেমন বিমান কিংবা নৌ-বন্দর, বাস-রেল স্টেশন, শপিং মল ইত্যাদি জায়গায় ব্যবহার করা যাবে।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য এসব উদ্ভাবন গত ১৪ মে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন কারখানা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সরকারের আইসিটি বিভাগের কাছে উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে চিকিৎসা সরঞ্জামগুলোর ফাংশনাল প্রোটোটাইপ তুলে ধরেছে প্রতিষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানে ছিলেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক লিয়াকত আলী, ইলেক্ট্রনিক্স অ্যাপ্লায়েন্স-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা, আরঅ্যান্ডডি প্রকৌশলী আলিম হাসান ফেরদৌস।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ওয়ালটন মেডিকার্ট রোবট ও জীবাণুনাশক আল্ট্রা ভায়োলেট সিস্টেম তৈরি করেছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে এগুলো কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো বাংলাদেশ এখন আর শুধু ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারকারী দেশ নয়, বরং উৎপাদন ও উদ্ভাবনকারী দেশ হিসেবে সারাবিশ্বে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে পারে।’

জীবাণুনাশক রিমোট কন্ট্রোল ইউভি-সি সিস্টেম প্রসঙ্গে প্রকৌশলী আলিম হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘এটি ২৫৩.৭ ন্যানোমিটার রশ্মি, যা যেকোনও বস্তুর পৃষ্ঠতলের ৯৯.৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত এই ইউভি ট্রলি হাসপাতাল, বাসাবাড়ি ও অফিসে ব্যবহার করা যাবে। ওয়ালটনের তৈরি ইউভি ট্রলিতে মানবদেহের জন্য আধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।’

ওয়ালটন আরও তৈরি করেছে জীবাণুনাশক রিমোট কন্ট্রোল ইউভি-সি থার্মাল জার্মিসাইডাল চেম্বার। এর মডেল ‘ডব্লিউ ইউভি-টি২৬০এল’। এটি ইউভি রশ্মি ও তাপের মাধ্যমে জীবাণু ধ্বংস করে। এতে রিসাইডুয়াল হিটার ব্যবহার হয়েছে। ফলে এটি ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত আদ্রতামুক্ত তাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম। এতে স্বয়ংক্রিভাবে তাপ ও সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া আছে মানবদেহের জন্য আধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। এর বিশেষ সেন্সর মানুষ কিংবা প্রাণীর উপস্থিতি থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইউভি-সি থার্মাল চেম্বার দিয়ে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, বাসনপত্র, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করা যাবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ওয়ালটনের তৈরি মেডিকার্ট রোবট ও জীবাণুনাশক রিমোট কন্ট্রোল ইউভি-সি সিস্টেম করোনা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশে তৈরি এসব গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম বিদেশে রফতানির সুযোগ রয়েছে। এর আগে ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন সরবরাহকারী যন্ত্র, ফেস প্রোটেকটিভ শিল্ড, সেফটি গগলস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি তৈরি করেছে ওয়ালটন।