সেলিম আহমেদ (ছদ্মনাম) অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি চাকরিজীবী। চাকরি শেষে রাজধানীতে নিজের গড়া ছোট একটা বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে থিতু হয়েছেন তিনি। বাসায় তিনি, তার স্ত্রী ও একজন গৃহকর্মী ছাড়া আর কোনও সদস্য নেই। সন্তানরা কাজ নিয়ে কেউ হয়েছেন প্রবাসী, আবার কেউ থাকেন দেশের অন্য কোনও প্রান্তে। করোনাকালে তাই দু’জনেই বেশ ভয়ে ছিলেন, অসুস্থ হলে তাদের দেখবে কে। সন্তানরাও বাবা-মাকে নিয়ে ছিলেন উদ্বিগ্ন। এরইমধ্যে ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ প্রথমে অসুস্থ হলেন সেলিম আহমেদ। জ্বর-কাশি দিয়ে শুরু। কয়েকদিনের মধ্যে তার স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে টেস্ট করে জানতে পারলেন তারা দু’জনেই করোনা পজিটিভ। দুই-একদিন ভুগিয়ে জ্বর ছাড়লেও শুরু হয় তাদের শ্বাসকষ্ট। এ অবস্থায় তাদের পাশে থেকে সেবা শুশ্রুষা করার মতো মানুষই মিলছিল না। দুর্যোগের এ সময় ফেসবুকে ‘সংযোগ: কানেক্টিং পিপল’ থেকে কেয়ারগিভার সাপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে জানতে পারেন সেলিম আহমেদের প্রবাসী ছেলে। তিনি যোগাযোগ করেন সংযোগের সঙ্গে। সেখান থেকে তিনি একজন মেইল কেয়ারগিভা রের সাপোর্ট পান। এভাবেই দূরে থেকেও বাবা-মায়ের সেবার ব্যবস্থা করেন প্রবাসী ছেলে। আর নিজেদের পাশে সন্তানের মতো কেয়ারগিভার পেয়ে এবং তার সাপোর্টে সেলিম আহমেদ ও তার স্ত্রীও এখন অনেকটাই সুস্থ।
এ শুধু সেলিম আহমেদের গল্প না, করোনা দুর্যোগের সময় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন অনেককেই কেয়ারগিভারের সাপোর্ট দিচ্ছে সংযোগ।
তরুণ-তরুণীরা সংযোগ মেডিক্যাল টিমের চিকিৎসকদের পরামর্শে ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের জরুরি বাস্তবতায় কেয়ারগিভার হিসেবে কাজ করছেন। ঢাকায় কেয়ারগিভার সেবা পেতে ০১৯১১৫৪৯৫১৯ ও চট্টগ্রামে ০১৬৮৪৮৪২১৮১ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে।
পেশা হিসেবে ‘কেয়ারগিভার’ আগামী সময়ের বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন, আহমেদ জাভেদ জামাল। তিনি বলেন, এখন কেযারগিভার হিসেবে যারা কাজ করতে আসছেন তারা সবাই শিক্ষিত তরুণ-তরুণী। এদের অনেকেই করোনার সময় চাকরি হারিয়েছেন বা যে সব শিক্ষার্থী টিউশনি করে পরিবারকে সাপোর্ট দিতেন তারাই অনেকে এখন কেয়ারগিভার হিসেবে অসুস্থ রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। দুর্যোগ সময়ে শিক্ষিত তরুণদের এই অংশগ্রহণের কারণে পেশা হিসেবে কেয়ারগিভার আগামী দিনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে যারা সংযোগের সঙ্গে কেয়ারগিভার হিসেবে কাজ করছেন, তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে। এদের অনেকেই আগামী দিনে আরও অনেককে কেয়ারগিভিং পেশায় আসতে অনুকরণীয় হয়ে উঠবেন।
সংযোগ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, করোনার ভয়াবহতার মধ্যেই গত বছরের মার্চে জন্ম নেয় সংযোগ : কানেক্টিং পিপল। তখন চারিদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুলতা। মাস্ক নেই। পিপিই নেই। দরিদ্র মানুষের ঘরে খাবার নেই। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। দিন নেই, রাত নেই, মোবাইলফোনে কল এলেই অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ মেডিক্যাল সাপোর্ট দিতে ছুটে যাচ্ছেন সংযোগের স্বেচ্ছাসেবীরা। কেউ ছুটছেন উত্তরার পথে। কেউ নারায়ণগঞ্জ। আবার কেউবা চট্টগ্রাম। করোনায় অসুস্থ মানুষের যাতে শ্বাসকষ্ট না হয় সেজন্যই কাজ করে যাচ্ছে সংযোগ।
পাশাপাশি কোভিড আক্রান্ত রোগীদের উদ্বেগ ও তাৎক্ষণিক পরামর্শ পেতে জরুরি ভিত্তিতে চালু হয়েছে সংযোগ মেডিক্যাল হেল্পলাইন। এই হেল্পলাইনের ০১৫১৫৬১৯৯১৪, ০১৭৭১৯৮২৬৬৯ ও ০১৫৮০৭৩৮৩৮১ নম্বরে ফোন দিয়ে ২৪ ঘণ্টাই বিনামূল্যে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া সংযোগ করোনা রোগীদের প্লাজমা দেওয়ার বিষয়েও কাজ করছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে প্লাজমা ও রক্ত দিয়ে সহায়তা করেছে সংযোগ।
প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করে ফেসবুক প্লাটফর্ম সংযোগ। এখন পর্যন্ত এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়েছেন ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ। করোনাকালে সংযোগ হাজারো চিকিৎসা কর্মীকে পিপিই পৌঁছে দিয়েছে। নন এমপিওভুক্ত কয়েক হাজার স্কুলশিক্ষককে করেছে নগদ সহায়তা। কোভিড, আম্পান আক্রান্ত, পাটকল শ্রমিক, বানিয়াশান্তা, হাওর এবং ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর প্রায় তিন হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে সংযোগ। এছাড়া অসহায় মানুষকে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা, চাকরির ব্যবস্থা করাসহ গরিব রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দিতে কাজ করছে সংযোগ। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করে এমন সৃজনশীল প্রতিযোগিতার আয়োজনেও পিছিয়ে নেই ‘সংযোগ: কানেক্টিং পিপল’।
আরও পড়ুন:
অক্সিজেনের খালি সিলিন্ডার বিনামূল্যে রিফিল করে দেবে ‘সংযোগ’
সংযোগের সহায়তায় রিয়াদুল মুসলিমাতের ছাত্রীরা পাবেন ফ্রি ন্যাপকিন
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের শীতবস্ত্র পৌঁছে দিলো সংযোগ
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে সংযোগের ‘বিজয় অলিম্পিয়াড’
ভাষা আন্দোলনের চেতনা ছড়িয়ে দিতে সংযোগের ‘অমর একুশে প্রতিযোগিতা’