স্বর্ণজয়ী শুটার সাদিয়ার পাশে দাঁড়াতে আহ্বান

দিনে ১৮ ঘণ্টা রাবারের এই পরিধেয় বস্তু গায়ে রাখতে হয় সাদিয়াকেসতীর্থরা অস্ট্রেলিয়ার গোল্ডকোস্টে কমনওয়েলথ গেমস মাতাচ্ছেন। সেখানে থাকতে পারতেন একসময়ের কমনওয়েলথ শুটিংয়ে স্বর্ণজয়ী সৈয়দা সাদিয়া সুলতানাও! কিন্তু ভাগ্যদেবীর ইচ্ছেটা হয়তো ভিন্ন ছিল। রহস্যময় কারণে শুটিং থেকে দূরে ছিলেন দীর্ঘদিন।  এখন তো জীবনের সঙ্গেই যুদ্ধ করে যাচ্ছেন আগুনে পুড়ে! সাবেক তারকা শুটার আগুনে পুড়ে এখন শয্যাশায়ী।  কবে সুস্থ হবেন? এ প্রশ্নের উত্তরে নির্ধারক হয়ে আছে ‘অনেক অর্থ’।  সেই অর্থ যোগানে হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার।

গত বছরের ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন বাসার চুলার আগুনে শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে যায় সাদিয়ার। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর এখন চট্টগ্রামের বাসায় আছেন তিনি, তবে স্বস্তিতে নেই।  পুড়ে যাওয়া শরীরের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন প্রতিনিয়ত। আগুনে পোড়া অংশের ক্ষত কিছুটা সারলেও আবারও সার্জারি প্রয়োজন। হাত, গলা ও বুকের পুড়ে যাওয়া অংশে সার্জারি না হলে ঠিকমতো হাঁটতেই পারবেন না জাতীয় দলের এই শুটার।

অবশ্য সার্জারি করাতেও লাগবে অনেক সময়। কারণ পুরোপুরি প্রস্তুত নয় তার পুড়ে যাওয়া ক্ষতগুলো। চিকিৎসকরা আরও কিছুদিন পর যেতে বলেছেন সাদিয়াকে।  তার বড় ভাই ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় সৈয়দ সাজ্জাদ উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বোনের সার্বিক অবস্থার অগ্রগতি নিয়ে জানান, ‘যে সব জায়গা পুড়ে গেছে সেই সব জায়গায় আবারও সার্জারি লাগবে। অস্ত্রোপচার না করা পর্যন্ত উন্নতি হওয়া জটিল। আরও দুই মাস পর সার্জারি করতে হবে।  এখন ব্যথা কীভাবে কমানো যায় সেই চেষ্টা চলছে। এর জন্য আলাদা পোশাকও পরতে হচ্ছে। ১৮ ঘণ্টা পরে থাকতে হচ্ছে রাবারের পরিধেয় বস্তু।’

পারিবারিক টানাপড়েনের মাঝেও চিকিৎসা চলছে সাদিয়ার। এমনিতেই চিকিৎসার পিছনে ব্যয় হয়ে গেছে ৬ লাখ টাকা। সতীর্থ শুটাররা তিন লাখ টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছেন। বাকিটা দিয়েছে পরিবার। এই অবস্থায় তার উন্নত চিকিৎসার জন্য আরও টাকার প্রয়োজন। তাই ক্রীড়াঙ্গনের সবাইকে পাশে দাঁড়াতে বলেছেন সাজ্জাদ, ‘সার্জারি না হলে সাদিয়া ভালো করে হাঁটতে পারবে না, পঙ্গু মনে হবে তাকে। তিন জায়গায় সার্জারি করতে হবে। ৬ লাখ টাকা এরই মধ্যে ব্যয় হয়েছে। এরপর থেকে তো খরচ হচ্ছেই।’

মেয়ের এমন দশা মেনে নিতে পারছেন না সাদিয়ার বাবা সৈয়দ সারওয়ার আলম। শেষ পদক্ষেপ হিসেবে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন এভাবে, ‘সাদিয়ার সেরে উঠতে উন্নত চিকিৎসা দরকার। আমার আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে। দেশ ও জাতির স্বার্থে আমার মেয়ের বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।’

যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত ছটফট করছেন সাদিয়া।  শয্যাশায়ী হয়েও বললেন, ‘শরীরে শক্তি পাচ্ছি না, সব সময় অস্বস্তি লাগে। দাঁড়াতে কষ্ট হয়, হাঁটতে পারি না। শুটিংয়ে ফিরতে পারবো কিনা জানি না।’

২০১০ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে শারমিন আক্তার রত্নার সঙ্গে জুটি গড়ে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের দলগত ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন সাদিয়া। সে বছর ঢাকায় এসএ গেমসেও স্বর্ণপদক উপহার দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। তার তিন বছর পর সবশেষ ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে সাফল্য পান বাংলাদেশ গেমসে।

এরপর থেকেই শুটিংয়ের বাইরে সাদিয়া।  গত চার বছর তিনি একেবারে আড়ালেই ছিলেন।  পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তিনি অসুস্থ। যদিও শুটিং থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণটা রহস্যই থেকে গেছে। সেই রহস্যের মাঝেই আগুনে পুড়ে আবার সংবাদ হয়েছেন।  সুস্থ হওয়াই তার জন্য এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ।  একসময় শুটিং রেঞ্জে লড়েছেন, আর এখন জীবনের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে স্বর্ণ বিজয়ী শুটারকে!