ভাগ্যিস লাহোরের মতো হামলার শিকার হননি ক্রিকেটাররা!

শ্রীলঙ্কার এই বাসটির ওপরই চালানো হয়েছিলো হামলা।আরেকটু হলেই ক্রিকেট ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনার দৃশ্যায়ন হতে পারতো নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে। বাংলাদেশ দল অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও টিমের ভীতসন্ত্রস্ত ছবি জীবন্ত করে তুলেছে ২০০৯ সালে লাহোরে সফরকারী শ্রীলঙ্কার টিম বাসের ওপর সন্ত্রাসী হানার সেই নৃশংস চিত্র। কী ঘটেছিলো শ্রীলঙ্কার ওপর সেই দিন?

বিস্ময়কর হলেও সত্যি, সেই মর্মান্তিক সেই ঘটনাটি ঘটাতে সন্ত্রাসীরা বেছে নিয়েছিলো মার্চ মাসকে। ৩ মার্চের সেই ঘটনার মতো ২০১৯ সালের ঘটনাটিও ঘটেছে ১৫ মার্চে। ভাগ্যিস ক্রিকেটারদের ওপর হামলা হয়তো হয়নি। কিন্তু ঘটনার নৃশংসতা কেড়ে নিয়েছে ৪৯টি প্রাণ। যার মাঝে বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন ৩জন!

হামলার স্থান থেকে ৫০ গজ দূরে ছিলো তামিম-মুশফিকদের বাস। তৃতীয় টেস্টের ভেন্যু হ্যাগলি ওভাল মাঠের খুব কাছে আল নূর মসজিদে শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে সন্ত্রাসী হামলা হয়। অনুশীলন শেষে ওই মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন কয়েকজন। সেখানে তারা একটু আগে মসজিদে ঢুকলেই ঘটে যেতে পারতো স্মরণকালের নৃশংসতম ঘটনা। হতাহতের ঘটনায় সেই নৃশংতা কোনওভাবেই কম নয়। কিন্তু ক্রিকেটীয় বিচারে তামিমদের ওপর হামলা হলে তা হয়ে দাঁড়াতো আরও নৃশংসতম।

সংবাদ সম্মেলনের জন্য মসজিদে যেতে দেরি হওয়াতেই মূলত বেঁচে গেছেন মুশফিক-তামিমরা। মসজিদে প্রবেশের মুহূর্তে স্থানীয় এক নারী বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সতর্ক করেন গোলাগুলির কথা জানিয়ে। আতঙ্কিত খেলোয়াড়েরা তখন দৌড়ে হ্যাগলি ওভালে ফেরত আসেন। ওখান থেকে বাংলাদেশ দলকে বিশেষ নিরাপত্তায় নভোটেল হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

তামিমদের এমন সন্ত্রস্ত চেহারাই ফুটিয়ে তোলে সব কিছু। কিন্তু লাহোরের হামলার ঘটনা ছিলো আরও ভয়াবহ। লাহোরে হোটেল থেকে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ম্যাচের জন্য কয়েকটি বাসে করে রওয়ানা হয় সফরকারী শ্রীলঙ্কান দল এবং ম্যাচ পরিচালনার জন্য বিদেশ থেকে আসা লোকজন।

১২জন বন্দুকধারী ঐ ক্রিকেট বহরটির আসার অপেক্ষায় ওঁত পেতেছিলো। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের মোড়ে গাড়িগুলো পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় সন্ত্রাসীদের বিনাবিচারে গুলি। প্রায় ১২ জনের মতো মুহুর্মুহু গুলি চালায় বহরটি ঘিরে। নিরাপত্তায় থাকা ৬ পুলিশ সদস্য নিহত হন ঘটনাস্থলে। সঙ্গে একটি বাসের চালকও নিহত হন। শ্রীলঙ্কার ৭ ক্রিকেটার ও সহকারী কোচ হন আহত।

লঙ্কান ক্রিকেটারদের প্রাণ সংশয় হতেই পারতো কিন্তু তাদের প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কৃতিত্ব তাদের বহনকারী বাসের পাকিস্তানি চালক মেহের মোহাম্মদ খলিলের। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যাওয়া সেই পরিস্থিতিতে অদম্য সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। সাবধানে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তাদের নিয়ে যান স্টেডিয়ামের ভেতরে। যেখানে খেলার কথা ছিলো দ্বিতীয় টেস্ট। সেই ঘটনায় লঙ্কান দুই ক্রিকেটার গুরুতরভাবে আহত হন। ঊরুতে গুলি লাগে থিলান সামারাবিরার। আর গুলির খোসা বুকে লাগে থারাঙ্গা পারানাভিতানার। নৃশংস সেই ঘটনার পর থেকে দীর্ঘদিন পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিষিদ্ধ।

ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় তেমন হতাহতের ঘটনার শিকার হতে পারতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও। পার্থক্যটা ছিলো লাহোরের হামলায় ক্রিকেটাররা ছিলো লক্ষ্যবস্তু। ক্রাইস্টচার্চের হামলায় লক্ষ্য বস্তু মসজিদ। কিন্তু মিনিট পাঁচেক আগে তামিমরা সেখানে থাকলে ঘটনা কী হতো তা ভাবার সাহস হয়তো করতে চাইবে না কেউ!