আরেকটি বছর ‘৫৩-তে’ই থাকতে চান আকরাম!

পাকিস্তান পেসার হাসানের সঙ্গে ওয়াসিম আকরামআরও একটা বছর তিপ্পান্নতেই আটকে থাকতে চান ওয়াসিম আকরাম। যে সমস্ত শুভানুধ্যায়ী ও ভক্ত তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাদের কাছে তার বিনীত আবেদন, যেহেতু এ বছরটার প্রায় এক চতুর্থাংশ কোভিড-১৯ ভাইরাস জনিত কারণে কোয়ারেন্টিনে কেটে গেছে, তাই এই জন্মদিনটা হিসেব থেকে বাদ দিন। আরেকটি বছর না হয় ৫৩তেই কাটল তার!

বলাই বাহুল্য যে আজ তার ৫৪তম জন্মদিনে পাকিস্তানি পেস বোলিং কিংবদন্তি নিছক রসিকতা করেছেন। সময়কে আটকে রাখার সাধ্য তো কারো নেই। তবে বাঁহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে যেসব কীর্তি আকরাম গড়েছেন, তা কখনও মুছে ফেলতে পারবে না সময়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৯ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৯১৬টি আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়েছেন, যা তাকে ইতিহাসের সফলতম বাঁহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। ২০১৩ সালে উইজডেন অ্যালমানাকের ১৫০তম বার্ষিকীতে ঘোষিত সর্বকালের সেরা টেস্ট দলে পাকিস্তানের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে নাম ওঠে তারই। শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরনের পর ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট প্রাপক, তবে ৫০০ উইকেটের মাইলফলকটা প্রথম ছুঁয়েছেন তিনিই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চারটি হ্যাটট্রিকের মালিক একমাত্র তিনিই, যার দুটি টেস্টে, দুটি ওয়ানডেতে। গতির সঙ্গে দ্রুতগতির আর্ম অ্যাকশন, সঙ্গে ছিল রিভার্স সুইং আদায় করার ক্ষমতা-আকরামের মতো সুইং বোলিং করতে পারেননি আর কোনও পেসার। এ জন্যই তাকে বলা হয় ‘সুইংয়ের সুলতান’- সুলতান অব সুইং।

টেস্ট ক্রিকেটের নবম সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী আকরামের টেস্ট উইকেট সংখ্যা ৪১৪, বাঁহাতি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৮ বছর বয়সে সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদের চোখে পড়েন আকরাম, সফরকারী নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে পাকিস্তানে ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড প্যাট্রন একাদশের হয়ে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েই চমকে দেন সবাইকে। ১৯৮৪ সালের নভেম্বরে রাওয়ালপিন্ডির সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে নেন ৭ উইকেট, কদিন পর কিউইদের বিপক্ষেই তার আন্তর্জাতিক অভিষেক।

২৫ টেস্ট ও ১০৯টি ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করেছেন আকরাম। যার মধ্যে ১২ টেস্ট ও ৬৬টি ওয়ানডেতে জিতেছে পাকিস্তান। অধিনায়ক হিসেবে আকরামের ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল দিক ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে হারানো, আর পাকিস্তানকে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে নেওয়া। ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব ল্যাঙ্কাশায়ারের অধিনায়ক হিসেবেও সফল ছিলেন তিনি। ল্যাঙ্কাশায়ারকে জিতিয়েছেন ইসিবি ট্রফি ও অ্যাক্সা লিগ, আর সারা মৌসুমে মাত্র পাঁচটি ম্যাচ হেরেও কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে দলকে করেছিলেন দ্বিতীয়।

বল হাতে এক জাদুকর, তবে ব্যাটিংয়ের হাতটাও খারাপ ছিল না। সর্বোচ্চ ৮৬ রানের একটি ইনিংস সমেত ওয়ানডেতে রান করেছেন ৩৭১৭। টেস্টে করেছেন ২৮৯৮ রান, যার মধ্যে আছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ২৫৭ রানের ইনিংস। টেস্ট ক্রিকেটে ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নামা কোনও ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইংনিস এটি এখনও।  ১৯৯৬ সালে শেখুপুরায় এই ইনিংসটি খেলার পথে ২২টি চার ও ১২টি ছক্কা মেরেছিলেন। সাকলায়েন মুশতাককে নিয়ে অষ্টম উইকেটে গড়েছিলেন ৩১৩ রানের জুটি।

২০০৩ বিশ্বকাপের পর অবসর নিয়ে কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন আকরাম, আর এখন তো যুক্ত আছেন ধারাভাষ্যে।

পাকিস্তানের ক্রিকেটে ৩ জুন তারিখটিরই অন্যরকম গুরুত্ব। একটি কারণ তো এই যে এটি ওয়াসিম আকরামের জন্মদিন। আরেকটি কারণ, ১৯৭১ সালে এই তারিখেই এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের।