পাঁচ প্রশ্নের উত্তরে মুশফিকের করোনা-ভাবনা

মুশফিকুর রহিমকরোনার প্রকোপে ঘরবন্দি মুশফিকুর রহিম। ঘরে থেকেই যতটুকু সম্ভব নিজেকে প্রস্তুত রাখার চেষ্টা করছেন দেশের সেরা উইকেটকিপার- ব্যাটসম্যান। শনিবার দাতব্য সংস্থা ‘এখোনি’- এর ঢাকার গল্পের দ্বিতীয় পর্বে মুখোমুখি হয়েছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। ‘এখোনি’ মহামারি পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পেশার মানুষের দিনকাল তুলে ধরছে। সংস্থাটি মুশফিককে পাঁচটি প্রশ্ন করেছিল। সেই পাঁচ প্রশ্নের উত্তরে মুশফিক জানিয়েছেন করোনাকালে তার ভাবনা-

প্রশ্ন: আপনি এই মহামারির সময়ে কী করছেন এবং সবচেয়ে বেশি কী মিস করছেন?

মুশফিকুর রহিম: প্রথমত, যে কারোর জন্যই দীর্ঘসময়ের জন্য ঘরে অবস্থান করা হতাশার এবং বিরক্তিকর। তবে আমি বলবো আমি আমার পরিবারের সঙ্গে দারুণ কিছু সময় কাটিয়েছি। সত্যি বলতে, ক্রিকেটার হিসেবে আমরা খুব অল্প সময় ছুটি পাই। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ১৫ বছরে আমি পরিবারের সঙ্গে এতটা সময় কাটাতে পারিনি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি এ বিরতি উপভোগ করছি এবং যারা এতে আক্রান্ত ও মারা গেছে তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এ মুহূর্তে আমি আমার ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড মিস করছি। বাইরে গিয়ে অনুশীলন করতে পারছি না।

প্রশ্ন: আপনার সতীর্থ মাশরাফি বিন মুর্তজা সম্প্রতি করোনা পজিটিভ হয়েছেন। খবরটা যখন শুনেছেন তখন কেমন অনুভব করেছিলেন?

মুশফিক: খুবই বেদনাদায়ক খবর ছিল এটি। যেভাবে ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছে আমাদের দেশে, মনে হচ্ছে আমরা অধিকাংশই ভাইরাসে আক্রান্ত। আমি মনে করি বাংলাদেশের মানুষ করোনাভাইরাস নিয়ে ততটা সুশিক্ষিত নয় এবং পরিস্থিতিটা নিয়ে সতর্কও নয়। বিশেষ করে বলবো, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নয়। মাশরাফি ভাই লিজেন্ড। ইনশাআল্লাহ তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। তার খবরটা শোনার পর থেকে আমি আরও বেশি সতর্ক হয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি সরকারের পক্ষে দেশের সবার খেয়াল রাখা কঠিন। ভ্যাসকিন আবিস্কার না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শুধু আমাদেরই নয়, আমাদের পরিবারকেও।

প্রশ্ন: খেলোয়াড় হিসেবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সঙ্গে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন?

মুশফিক: খেলোয়াড় হিসেবে আমার মনোযোগ এবং ধৈর্য ধরে রাখা খুব কঠিন। সত্যি বলতে, আমরা কেউই বলতে পারছি না কখন এবং কীভাবে এ মহামারি থেকে রক্ষা পাবো। সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকা চ্যালেঞ্জিং। খেলোয়াড় হিসেবে আমি আমার ফিটনেস লেভেল ঠিক রাখছি। পাশাপাশি ভালো একটি খাদ্যাভাস গড়ে তুলেছি এবং নিয়মিত হাত পরিষ্কার করছি। ইমার্জেন্সি কোনও কাজে বাইরে গেলে আমি মাস্ক পরছি এবং হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করছি। বাইরে থেকে ফিরে আমি দ্রুত আমার কাপড়-চোপড় ধুয়ে দিচ্ছি এবং সঙ্গে সঙ্গে গোসল করে নিচ্ছি। খেলোয়াড় এবং একজন নাগরিক হিসেবে আমার সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে। সরকারের সঙ্গে আমি সতর্কতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছি। গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি... এই তো।

প্রশ্ন: কোভিড আপনার কাজে কতটা বাধা সৃষ্টি করেছে?

মুশফিক: কোভিড-১৯ শুধু আমার কাজে বাধা সৃষ্টি করেনি...পুরো বিশ্বকে বাধা দিয়েছে। অ্যাথলেট হিসেবে আমি বাইরে যেতে পারছি না। ঘরের ভেতরে থেকে নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে আমি সবধরনের শারীরিক অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমি মাঠেও যেতে পারছি না। মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তে যেতে পারছি না। নিজের আত্মীয়দের বাসায়ও যেতে পারছি না, শপিংয়ে যেতে পারছি না...

প্রশ্ন: কঠিন এ পরিস্থিতিতে আপনি আপনার ভক্তদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?

মুশফিক: আমি মনে করি, আমরা এ ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে এর আগে কখনও পড়িনি। এজন্য আমরা জানি না এমন পরিস্থিতি কীভাবে সামলে উঠতে হয়। আমি যেটা বলতে চাই, এ মুহূর্তে আমাদের যতটা সম্ভব ঘরে থাকতে হবে। যদি আমরা বাইরে যাই, আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মহামারির এ সময়ে গরীবদের পাশে দাঁড়াতে হবে। অতীতের থেকেও বেশি প্রার্থনা করতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে হবে।