ম্যাক্সওয়েল-ক্যারির ২০০ রানের জুটিতে সিরিজ অস্ট্রেলিয়ার

ব্যাটিংয়ে ঝলসে উঠেই অব দ্য ম্যাচ ও সিরিজ ম্যাক্সওয়েল -টুইটারবর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বেঁধে দেওয়া ৩০৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া যখন ৭৩/৫ হয়ে যায়, প্রায় সবাই তাদের সমাধি দেখে। কিন্তু এই ‘প্রায়’ শব্দটির মধ্যেও কিছু মানুষের আশা বেঁচে থাকে। কারণ যারা রান তাড়া করছিল, পাঁচ পাঁচবার বিশ্ব জয়ের মুকুট তারা মাথায় পরেছে। তা গভীর রাতে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা আশাবাদীদের নিরাশ করেনি। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনায় ৩ উইকেটে জিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজও জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

আমরা যদি ২-১-এ টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতি, তাহলে তোমরা ওয়ান ডে সিরিজটা জিতো ২-১ ব্যবধানে- এমন সন্ধিই কি ছিল ক্রিকেটের দুই আদি প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে! না হলে ঘটনাচক্রে দুটি সিরিজের ফল অভিন্নভাবে দুই পক্ষের দিকে যায় কী করে!

বুধবার রাতের তৃতীয় ওয়ানডেটির কথাই ধরুন। ম্যাচের প্রথম দুই বলে উইকেট খোয়ানো (রয় ও রুট) ইংল্যান্ডকে যখন নিজের ১০ম ওয়ানডে সেঞ্চুরি দিয়ে ৩০০ রান পেরোতে সাহায্য করেন জনি বেয়ারস্টো, তখনই ম্যাচটি তাদের হয়ে যায়। উইকেট এমন সহজও ছিল না যে তিনশো পেরোনোটা সহজ হবে। তারওপর ৭৩ রানেই চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ উইকেট। কিন্তু ওখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অ্যালেক্স ক্যারি। ম্যাক্সওয়েলকে বলা হয় ম্যাচ উইনার, কিন্তু প্রায়ই অসময়ে উল্টো-পাল্টা শট খেলে আউট হওয়ার ‘সুখ্যাতি’ও তার আছে। আগের ম্যাচটিতেই ভুল লাইনে ব্যাট চালিয়ে বোল্ড হয়েছিলেন ১ রানে। ২৩২ তাড়া করতে গিয়ে হারে দল। এ ম্যাচে তাই নিজেকে শুধরে ‘কিছু একটা’ করতে চেয়েছিলেন নিশ্চয়ই। সেটি এমনভাবেই করলেন যে ষষ্ঠ উইকেটে ২১২ রানের জুটি হলো ক্যারির সঙ্গে। ইংলিশ বোলার-ফিল্ডাররা রণোন্মত্ত, বাকি পাঁচ উইকেট নিয়ে জয়ের জন্য করতে হবে ২৩০, এ অবস্থায় দুশো রানেরও বড় জুটি। প্রায় অকল্পনীয়! ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয় একটু সুবিধা করে দিয়েছে, কিন্তু ম্যাক্সওয়েল-ক্যারি পাল্টা আক্রমণও করেছেন। সুবিধা নিয়েছেন লেগ সাইডের ছোট বাউন্ডারির। দুজনই সেঞ্চুরি করেছেন, ম্যাক্সওয়েল আগে। ৮৪তম বলে টম কারেনকে সীমানার বাইরে আছড়ে ফেলে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ছোঁয়া ম্যাক্সওয়েলের ১০৮ রানে ছিল চারটি চার ও সাত ছক্কা। পাঁচ বছরেরও বেশি আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সিডনিতে। সেঞ্চুরি যে করতে পারেন এই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে ফেলতে আবার তিন অঙ্কের দেখা। যা তাকে দিয়েছে ম্যান অব দ্য ম্যাচ এবং ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার।

৩৯তম ওয়ানডেতে পাওয়া ক্যারির প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিটির স্ট্রাইক রেট একশোর কম। কিন্তু তাতে কি এসে যায়? ১১৪ বল থেকে সাত চার ও দুই ছক্কায় সাজানো ১০৬ রান হয়তো তার দলকে আবার এই সংস্করণে বিশ্ব জয়ের মানসিকতা ফিরিয়ে দিল। বছর দুয়েক ধরে অস্ট্রেলিয়াকে ওয়ানডের পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভাবতে কষ্ট হচ্ছিল।

ম্যাক্সওয়েল-ক্যারি আউট হওয়ার আগে দলকে জয়ের কিনারায় পৌঁছে দিয়ে যান। কিন্তু কাজটা তখনও বাকি ছিল এবং কঠিন কাজ। শেষ ওভারে ১০ রান দরকার।  এ অবস্থায় আদিল রশিদের গুগলি ও লেগস্পিনে একটা ছয় ও চার মেরে দলকে দাগের ওপারে নিতে সাহস তো লাগেই। মিচেল স্টার্কের সেই সাহস ছিল। ম্যাচের প্রথম দুই বলে নিয়েছিলেন দুই উইকেট। এই দিনে তারও কিছু পাওয়ার ছিল!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩০২/৭ (বেয়ারস্টো ১১২,বিলিংস ৫৭, ওয়াক্স ৫৩*, জাম্পা ৩/৫১, স্টার্ক ৩/৭৪)। অস্ট্রেলিয়া: ৪৯.৪ ওভারে ৩০৫/৭ (ম্যাক্সওয়েল ১০৮, ক্যারি ১০৬, ওয়ার্নার ২৪, ওয়াক্স ২/৪৬, রুট ২/৪৬)।