যথেষ্ট বড় সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ

গাজী আশরাফ হোসেন লিপুম্যাচটা একতরফা হয়ে গেল। হেরে গেলাম হয়তো বেশ বড় ব্যবধানেই। তারপরও ৮ জাতির এ টুর্নামেন্টে অনেক ফেভারিটকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে পৌঁছানোকে আমি যথেষ্ট বড় সাফল্য হিসাবে মনে করছি। ক্রিকেট খেলায় ভাগ্যর সহায়তা অনেক দলই কমবেশি পায়। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমাদের ১ পয়েন্ট ভাগাভাগি আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলেও, গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ ছিল যথেষ্ট উজ্জ্বল।

সেমিতে খেলার সুবাদে প্রথমবারের মতো ফাইনালে যাওয়ার রণকৌশল নিয়ে দলীয় আলোচনায় সকলের অংশগ্রহণ, নিজেদের ভাবনা শেয়ার করা, পরিস্থিতির আলোকে দলের চাহিদা প্রত্যেকে কীভাবে মেটাবেন সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং ম্যাচ শেষে এখন তার হিসাব হয়তো মেলানো শেষ করে ফেলেছেন খেলোয়াড় ও কোচরা। এমন সুযোগ বা পরিস্থিতির মুখোমুখি এতো বড় টুর্নামেন্টে এর আগে কখনোই হয়নি এবং সেই জায়গায় নিজেদের টেনে তোলাকেই আমি সবচেয়ে বড় দলীয় অর্জন মনে করছি।

সকালে টস হেরে এক ধাপ পিছিয়ে ম্যাচটা শুরু করেছি। প্রাথমিক ব্যাটিং বিপর্যয় কাটিয়ে ইনিংসের মাঝ অবধি চোখে চোখ রেখে লড়েছে দল। কিন্তু কেদার যাদবকে একটু বেশি ডট বল খেলে ফেলেছে তামিম ও মুশফিক। এই দুজন সেট ব্যাটসম্যানকে একজন খণ্ডকালীন বোলার অল্পসময়ের ব্যবধানে আউট করে দেওয়ায় ৩০০ রানের বেশি পৌঁছানোর বাস্তবসম্মত টার্গেট ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।

ব্যাট হাতে তামিম ও মুশফিকই ধারাবাহিক ছিলেন। কিন্তু কাল সময়মতো সৌম্য, সাব্বির, সাকিব বা মাহমুদউল্লাহরা অবদান রাখতে না পারায় ম্যাচের ভাগ্য আমাদের ব্যাটিংয়ের পরপরই কালো মেঘে ঢাকা পড়ে যায়। এই টুর্নামেন্টে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রাই নৈপুণ্যের দিক থেকে কমবেশি এগিয়ে ছিলেন। মোসাদ্দেকের নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৩ উইকেট ছিল একমাত্র ব্যতিক্রম। সৌম্য ও সাব্বিরের জায়গায় তাদেরকে যথার্থভাবে কোচের গড়ে তুলতে হবে অথবা ইমরুল ও মুমিনুলকেও এ দুটি জায়গায় বিবেচনা করা যেতে পারে ভবিষ্যতে।

কাল আগে বল করার সুযোগ থাকলে আমাদের বোলারদের উইকেট তুলে নেওয়ার সক্ষমতা দেখা যেতন। এছাড়া শুরুর পাওয়ার প্লে, মাঝপর্যায়ে ও ডেথ ওভারে বোলিংয়ের প্রকৃত মানের পরীক্ষা হয়ে যেত। এতে করে কোর্টনি ওয়ালশের জন্য বোঝা সহজ হতো প্রকৃত চাপে তার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাতে কে কত ভালো করছে বা ব্যর্থ হচ্ছে।

মাশরাফিকে অনেকদিন পর আগের ঢঙে ব্যাট চালাতে দেখলাম, নয়তো ২৪০ পার করা কঠিন হয়ে যেত। ৫০ ওভার বল করে ২৬৪ রান, এই উইকেটে ভারতকে আটকানো যাবে না। জিততে হলে শুরুর দিকেই দ্রুত উইকেটের পতন ঘটাতে হবে। এমন অবস্থায় বলের উজ্জ্বলতা ও বল শক্ত থাকা অবস্থায় তাসকিন ও রুবেলকে দিয়ে বোলিং শুরুটা করে একটা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে শুরু করতে পারতেন মাশরাফি। তারা ভালো না করলে তিনি নিজে পরে চলে আসতেন। তার একটানা ৮ ওভার বল করাটা বেমানান লেগেছে।

কম রান দেওয়ার মাঝে এই ম্যাচ জেতা সম্ভব নয় এবং ৪ পেস বোলার দলে থাকায় উইকেট পাওয়ার জন্য তাকে যথেষ্ট তৎপর মনে হয়নি। মোস্তাফিজ ও সাকিব মিলে যখন পুরা টুর্নামেন্টে মাত্র একটি উইকেট পাওয়ার সফলতা দেখায়, তখন আমাদের বোলিং দুর্বলতা বিপক্ষ দলের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। মাশরাফি যথার্থ সফলতা তার বোলিং ইউনিট থেকে পায়নি, এটা তার দুর্ভাগ্য। ফিল্ডিংয়ে সাব্বির, মোসাদ্দেক ও মিরাজের ক্ষিপ্রতার সঙ্গে অন্য সবার দূরত্ব কমাতে হবে।

ব্যাটিংয়ে তামিম এবার নিজেকে নিয়ে গেছেন ভিন্ন এক উচ্চতায়। দেশকে করেছেন গর্বিত। মুশফিক কিপিং গ্লাভস হাতে ছিলেন বেশ উজ্জ্বল। ব্যাট হাতে আরও ভালো করতে না পারার একটা আক্ষেপ নিয়ে ফিরবেন। সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর এযাবৎকালের পার্টনারশিপ থাকবে সবার স্মৃতিতে অম্লান। বল হাতে মাশরাফি ছিলেন সবার চেয়ে অনেক বেশি ধারাবাহিক। ত্রিদেশীয় সিরিজ ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কোনও খেলোয়াড়ের ইনজুরিতে না পড়ায় ট্রেইনারকে নেপথ্যে কাজ করার প্রশংসা জানাচ্ছি।

সব শেষে, নিকট অতীতে ইংল্যান্ডে জাতীয় দলের কোনও সফর না থাকার পরও আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দলনায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে প্রথম চারটি দলের তালিকায় টেনে তোলায় মাশরাফিকে ও দলের সকল খেলোয়াড়দের প্রতি রইলো অনেক শুভেচ্ছা।

/এফএইচএম/