দ্বিতীয় টেস্ট জিততে ইংল্যান্ডের লক্ষ্যটা ছিল ২৭৩। হাতে ছিল আরও দুই দিন। যেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটাও দুর্দান্ত ছিল কুকদের। কিন্তু মিরাজের স্পিনে তৃতীয় দিনে আর দাঁড়াতেই পারেনি ইংলিশরা। অলআউট হয়ে গেছে ১৬৪ রানে।
এক কথায় এশিয়াতে নিজেদের রেকর্ডই ভাঙতে হতো ইংলিশদের। কারণ চতুর্থ ইনিংসে সর্বাধিক ২০৯ রান সফলভাবে তাড়া করেছিল ইংলিশরা। কিন্তু মিরাজের স্পিনে সেই অসাধ্য সাধন করতে পারলো না ইংলিশ সিংহরা। হেরে গেছে ১০৮ রানে। দ্বিতীয় টেস্টে বাঘের থাবায় কুপোকাত হয়ে সিরিজ সমতা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে ইংলিশদের।
অবশ্য খেলতে নেমে ওপেনিংয়ে জুটি গড়েই আসে ১০০ রান। ছন্দে ছিলেন দুই ওপেনারই। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ডাকেট। যদিও চা পানের বিরতির পর ভোজবাজির মতো পাল্টে যায় ইংলিশদের ব্যাটিং। মিরাজের স্পিনে খেই হারিয়ে আসা যাওয়ার মিছিলে মেতে উঠেন ইংলিশরা। পর পর দুই ওভারে ফিরে যান হাফসেঞ্চুরি করা ডাকেট (৫৬) ও রুট (১)। ২৩.১ ওভারে মিরাজের বলে বোল্ড হন ডাকেট। ২৪.১ ওভারে সাকিবের বলে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন রুট। এরপরের ওভারে কুককেও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আম্পায়ার ধর্মসেনা! মিরাজের বলে লেগ বিফোরের আবেদন করে বাংলাদেশ। সঙ্গে সঙ্গে আঙুল তুলে দেন তিনি। ইংল্যান্ড রিভিউ নিলে বেঁচে যান কুক।
উত্থান পতনের মাঝেই সিরিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন অ্যালিস্টার কুক। ৩১.২ ওভারে মিরাজের বল উঠিয়ে মারতে গিয়ে তামিমের হাতে তালুবন্দী হন গ্যারি ব্যালেন্স (৫)। একই ওভারের শেষ বলে আবারও উইকেটের পতন। ফিরে যান নতুন নামা মঈন আলী। যদিও শুরুতে ধর্মসেনা আউট দিলেও রিভিউ নেয় ইংল্যান্ড। কিন্তু তাতেও বাঁচতে পারেননি মঈন। ৩৩.৫ ওভারেও আঘাত অব্যাহত রাখেন মিরাজ। এবার ফিরে যান উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া অ্যালিস্টার কুক। সিলি পয়েন্টে তার ক্যাচ লুফে নেন মুমিনুল হক। ৩৮তম ওভারেও মিরাজ জাদু থাকে অব্যাহত। লেগ স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বেয়ারস্টো। কিছুক্ষণ প্রতিরোধ দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন স্টোকস। কিন্তু সাকিবের বলে ৪২.৩ ওভারে বোল্ড হয়ে ফেরেন স্টোকস (২৫)। এরপরের বলে ফেরেন রশিদও। এলবিডব্লু হয়ে সাজ ঘরের পথ ধরেন তিনি। পরের বলে হ্যাটট্রিকের অপেক্ষায় ছিলেন সাকিব। কিন্তু সেটি না হলেও এক বল পরই ফেরেন জাফর আনসারি। শেষ দিকে ফিনকে ফিরিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে লেজ ছেঁটে দেন মিরাজ। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলা সাকিব নেন ৪ উইকেট।
এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯৬ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশের লিড দাঁড়ায় ২৭২ রান। আর ইংল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৭৩ রান। এই ইনিংসে তৃতীয় দিনের শুরুটা ভালোই করেছিলেন ওপেনার ইমরুল ও সাকিব। এই জুটিতেই লিড ছাড়ায় ১৫০, এরপর ১৭৬। আতঙ্ক ছড়াচ্ছিলো এই জুটি। কিন্তু ৪৫.১ ওভারে মঈন আলীর বলে সেই ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি ইমরুল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ ৭৮ রান করে লেগ বিফোর হয়ে বিদায় নেন তিনি। যদিও ৭৪ রানে বেঁচে গিয়েছিলেন ইমরুল। তার ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি জো রুট।
ক্যাচ মিসের ঘটনা ঘটেছে আরও। আনসারির ৪৯তম ওভারে ডিপ মিড উইকেটে স্লগ সুইপ করেছিলেন সাকিব। কিন্তু জায়গায় দাঁড়ানো বেন ডাকেট সেই ক্যাচ ধরতে পারেননি। একই ওভারে পরের বলে মুশফিকের এলবির আবেদন হয়েছিল। কুমার ধর্মসেনা আউট না দিলেও রিভিউ নেয় ইংল্যান্ড। তাতেও সফল হয়নি সফরকারীরা। এর মাঝেই পঞ্চম উইকেটে ৩৮ রানের জুটি গড়েন সাকিব ও মুশফিক। আর হাফসেঞ্চুরির দিকে যাচ্ছিলেন সাকিব। কিন্তু ৫৪.৫ ওভারে আদিল রশিদের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ৪১ রানে। পরের ওভারে ফিরে যান অধিনায়ক মুশফিকও (৯)। স্টোকসের বলে ব্যাটের কানায় লাগা বল তালুবন্দী করেন স্লিপে থাকা অ্যালিস্টার কুক।
এরপর দ্রুত গতিতে রান তোলার চেষ্টায় থাকেন সাব্বির রহমান (১৫)। কিন্তু মনোযোগ হারিয়ে রশিদের ৬০.৩ ওভারে এলবিডব্লু হয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে। এরপরেই মধ্যাহ্ন ভোজনে যায় বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে মধ্যাহ্ন ভোজনে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৭ উইকেটে ২৬৮ রান। বিরতির পর আবারও উইকেটের পতন ঘটে স্বাগতিকদের। আবারও আঘাত হানেন স্টোকস। ৫ রানে ফেরেন তাইজুল। আসা যাওয়ার মিছিলে এরপরে যুক্ত হয় অলরাউন্ডার মিরাজের নাম। রশিদের বলেই ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ২ রানে। এরপর কিছুক্ষণ দৃষ্টিনন্দন শট খেলে স্কোর বোর্ড সমৃদ্ধ করতে থাকেন শুভাগত ও রাব্বি। তবে দলীয় ২৯৬ রানে আদিল রশিদ রাব্বিকে তালুবন্দী করলে এখানেই শেষ হয় টাইগারদের দ্বিতীয় ইনিংস। এই জয়ে টাইগারদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ৩ উইকেটে ১৫২ রান নিয়ে খেলতে নামে স্বাগতিকরা। আগের দিন শেষ বলে আউট হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। অল্পের জন্য হাফসেঞ্চুরি মিস করে ফেরেন ৪৭ রানে।
এই টেস্টে টস জিতে প্রথম ইনিংসে ২২০ রান সংগ্রহ করে মুশফিক বাহিনী। জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রান করে ২৪ রানের লিড নেয় সফরকারীরা।
/এফআইআর/