দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটা থাকুক ব্যাটসম্যানদের নিয়ন্ত্রণে

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু
ব্যাটসম্যানরা প্রথম দিন দায়িত্ব নিয়ে খেলা শেষ করেছে। আজকের দিনের এটা বড় প্রাপ্তি। বৃষ্টিটা না হলে আরও ৫০ ওভার খেলা হত। আমরা আরও বড় রান দেখতে পেতাম। হয়তো আজই মমিনুলের সেঞ্চুরি দেখা যেত!

তবে প্রথমদিন যে প্ল্যাটফর্মটা আমরা পেয়েছি। সেটাকে দ্বিতীয় দিনেও ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে প্রথম সেশনটা যদি ব্যাটসম্যানরা পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পার করতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ৩৫০ রান সংগ্রহ করা সহজ হয়ে যাবে। আর দিনের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বোলাররা চাইবে বাংলাদেশকে চেপে ধরতে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেই সুযোগ দেওয়া চলবে না। আমি চাই আজকের মতো দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটা থাকুক ব্যাটসম্যানদের নিয়ন্ত্রণে।

বৃহস্পতিবার সকালের মেঘলা আকাশ, ঝড়ো হাওয়া; এরপর টস হেরে বাংলাদেশ যখন ব্যাটিংয়ে নামলো তখন কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ভাবছিলাম প্রথম সেশনটা সামাল দেওয়াটা বাংলাদেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমন বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে মনসংযোগ দিয়ে ব্যাট করা সত্যিই খুব কঠিন। সেই সঙ্গে ঠাণ্ডা বাতাস, ঘাসের উইকেটের মধ্যে ব্যাটিং করাটা ব্যাটসম্যানদের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জেরও বটে। আমার মনে হয়, প্রত্যাশার চেয়ে খুব ভালোভাবে সামাল দিয়েছে দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা।

বেশ কিছুদিন নিউজিল্যান্ডে খেলার কারণে উইকেটের চরিত্র এবং বলের বাড়তি বাউন্সটা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা খুব ভালো ভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে। যার কারণে বেসিন রিজার্ভ স্টেডিয়ামে খুব বেশি সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের।

তামিম বরাবরই বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে পছন্দ করেন। বৃহস্পতিবারও নিউজিল্যান্ডের বোলারদের ওপর সেভাবেই চড়াও হয়েছিলেন। ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড কন্ডিশনে বোলারদের ওপর চড়াও হওয়াটা বেশ কঠিন। যে কন্ডিশনটাকে আমরা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মনে করি। আর সেখানে পুরোটা সময় তামিম নিউজিল্যান্ডের বোলারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে খেলেছে। আমি কখনোই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে দেখিনি। নিউজিল্যান্ডের বোলাররা যখন শর্টবল দিয়ে ব্যাটসম্যানদের আক্রমণ করতে চেয়েছে, তামিম উল্টো কাউন্টার অ্যাটাকে গিয়েছে। তখন ড্রেসিংরুমে তামিমের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং নিঃসন্দেহে ব্যাটসম্যানদের মনে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। তবে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে থেকে উইকেট-বাতাস-বৃষ্টি এগুলো নিয়ে অনেক শঙ্কিত ছিলাম। সেই প্রাথমিক কাজটা তামিম অত্যন্ত সুন্দর ভাবে করে দিয়েছে।

মমিনুল সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে উপেক্ষিত দীর্ঘদিন ধরেই। আমি মনে প্রাণে চাচ্ছিলাম আজকে যেন মমিনুলও রান পায়। আমার চাওয়া পূরণ হয়েছে। আমার মতো অনেকেই এই ক্রিকেটারের ভক্ত।

মমিনুলের জন্য সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। এই সীমিত সুযোগের যথাযথ ব্যবহার করে মমিনুল সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ফিরে আসবেন। যদিও মমিনুলকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যে সংস্করণটা আমরা সবচেয়ে কম খেলি সেখানে। দীর্ঘদিন তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করে টেস্টে ভালো খেলে মমিনুলকে সীমিত সংস্করণের ক্রিকেটে জায়গা করে নিতে হবে। এটা তারচেয়ে ভালো আর কেউ জানেন না। সেই সীমিত সুযোগটাকে তিনি সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন-এটাইতো স্বাভাবিক।

ইমরুলের ক্ষেত্রে বলবো আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে এই একই ফাঁদে ইমরুল বহুবার আউট হয়েছে। শর্ট বল মারার চেয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ছাড়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। না হলে, দলে ইমরুলের নিয়মিতভাবে টিকে থাকাটা কঠিন হবে।

সবমিলিয়ে আজকের ম্যাচে মোটামুটি একটা ভালো অবস্থানে থাকলেও কিছু জিনিস নিয়ে দুশ্চিন্তার ব্যাপার আছে। প্রায় ৪৫ ওভার খেলা হয়েছে। এর মধ্যে আমরা তিনটি উইকেট হারিয়েছি। সাকিবের ক্যাচটি ড্রপ না হলে চারটি উইকেট হতো।তারমানে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে, পুরো দিন খেলা হলে বাংলাদেশ হয়তো আরও বেশ কয়েকটি উইকেট হারাতো! ঠিক এখানেই আমাদের উন্নতি জরুরি। উইকেটে মুভম্যান্ট ছিল না। আমরা প্রচুর শটস খেলেছি। ওভারপ্রতি আমাদের রান প্রায় চার করে। আমাদের ক্যালকুলেটিভ রিস্কও আরও কিছুটা কমাতে হবে।

এই জায়গাটাতে উন্নতি করতে পারলে আমার মনে হয় আমরা আগামীকাল ভালো শুরু করতে পারব। যদি ভালো শুর হয়, তাহলে প্রথম ইনিংসে ৩৫০ রানের আশপাশে আমাদের দলের রানটা থাকবে। এটা বোলারদের লড়াই করার পুঁজি এনে দেবে।

তবে আজকে যেহেতু সাউদি-বোল্টরা বল থেকে মুভম্যান্ট পাননি। সেক্ষেত্রে আগামীকাল তাদের নজর থাকবে পুরনো বল থেকে রিভার্স সুইংটা আদায় করে নেওয়ার দিকে। যাতে করে বাংলাদেশ শুরু থেকেই চাপে থাকতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের ব্যাটসম্যানদের সতর্ক থাকতে হবে।

এই সিরিজে দল নির্বাচনে বিভিন্ন সময় আমাদের কিছু মত পার্থক্য ছিল। আজকে রুবেলকে মূল একাদশে না দেখতে পেয়ে আমি সত্যিই বিস্মিত হয়েছি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এর আগে এত কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পেস আক্রমণ ছিল কিনা আমার মনে পড়ছে না। তাসকিন-কামরুল-শুভাশীষ তিনজনের মিলে মাত্র দুটি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশ তাদের পেস আক্রমণ সাজিয়েছে। ১৭ বছর ধরে যেখানে বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে, সেখানে তিনজন পেসারের রয়েছে মাত্র দুটি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা! আশ্চর্য হলেও এটাই সত্য।

এই সিরিজে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ‍রুবেলকে দেখে আমার কখনোই মনে হয়নি যে ও ছন্দে নেই। আবার রুবেল ইনজুরিতেও নেই। তারপরও কেনও তাকে খেলানো হলো না-বিষয়টি ভেবে আমি আশ্চর্য হয়েছি। কোন জায়গায় রুবেলের সমস্যা কিংবা কেনও তার ওপর আস্থা রাখতে পারলো না টিম ম্যানেজম্যান্ট-বিষয়টি অনেক ভেবেও আমি পাইনি।

তারপরও আমি আশা করবো তরুণ এই তিন পেসার তারুণ্যের শক্তিতে জ্বলে উঠবে এবং বাংলাদেশের পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দেবে।

 /আরআই/এফআইআর/