এবার চার নম্বরে নেমেও যোগ্য সঙ্গ পেলেন না মুশফিক

lipu vai-2সব মিলিয়ে গলের চমৎকার এই উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল হতাশাজনক। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সমানতালে ব্যাটিং করতে না পারলে যে বিশাল চাপে পড়ে যেতে হবে, সেটা যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমিই জানেন। এই তৃতীয় দিনের সহজ উইকেটে রান করতে না পারার জন্য কিছুটা কৃতিত্ব হয়তো প্রতিপক্ষের বোলাররা পাবে, তবে তার চেয়ে কম দায় পড়বে না সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, লিটন দাস কিংবা মাহমুদউল্লাহর ওপর।

এই ইনিংসে সৌম্যর কাছ থেকে অনেক বড় রানের প্রত্যাশা ছিল। গত কয়েকটা ইনিংস মাঝারি কিংবা ছোট হলেও আস্থার সঙ্গে খেলেছেন। শুধু বাইরের বল ছাড়া ও অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলা কমাতে পারলে আজ (বৃহস্পতিবার) ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলার সুবর্ণ সুযোগ ছিল তার। হয়তো অন্য কোনও দিন হৃদয় দিয়ে লম্বা ইনিংস খেলতে চাইবেন, কিন্তু তার নাম হয়তো সে সময় প্রথম একাদশে নাও থাকতে পারে। তাকে দীর্ঘদিন ধরে দলে রাখার প্রতিদান দেওয়ার একটা ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের ভুলে সেটা তো হলোই না, সঙ্গে একটি চমৎকার ইনিংস উদযাপন করার সুযোগ হারালেন সঠিকভাবে মনোযোগ না দেওয়ার কারণে।

এই সিরিজে খেলতে যাওয়ার আগে ও পরে আলোচনার একটা বড় অংশে ছিল মুশফিকের ব্যাটিং অর্ডার ছয় নম্বর থেকে চার নম্বরে এগিয়ে আনা। দুটি বিষয় বেশি আলোচনায় ছিল। এক, মুশফিক তার ইনিংস আরও বড় করতে পারছেন না বেশিরভাগ সময়, যেহেতু অন্য প্রান্তে কেউ যোগ্য সঙ্গ দিতে পারছে না। দ্বিতীয়, তার কিপিংয়ে কোচ সন্তুষ্ট নন বলে তাকে কিপিং ছাড়তে হবে। আজ কিন্তু চার নম্বরে ব্যাট করার পরও এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে অন্য ব্যাটসম্যানদের বিদায় দেখতে হলো। মুশফিককে বাদ দিয়ে অন্য ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সের উন্নয়নে যে কোচকে আরও নজর দিতে হবে, হাথুরুসিংকে কি তা অনুধাবন করতে পেরেছেন?

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এই সিরিজটি সঠিক সময় ছিল না কিপিং থেকে মুশফিককে সরানোর। ৭ নম্বরে মোসাদ্দেক হোসেন কিংবা সাব্বির রহমানকেই রাখা উচিত ছিল। কিন্তু প্রতিটি সিরিজেই প্রধান কোচ কাউকে না কাউকে প্রথম একাদশে এনে দলের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্থ করছেন। আর তিনিই হয়ে উঠছেন অধিনায়কের অধিনায়ক। ম্যাচের কৌশল ও খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স বাড়ানোর কাজেই তাকে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত ছিল বোর্ডের। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংযোজন তাকে করেছে একরোখা। তবে এ কথাও সত্যি আমাদের ব্যাটসম্যানদের তাদের সামর্থ্য প্রয়োগ করতে না পারার ব্যর্থতার দায় নিতে হবে অবশ্যই। আমাদের পেস বোলারদের দলের দুঃসময়ে সমর্থন দেওয়ার মতো ব্যাটিং সামর্থ্য কোচকে বাড়াতে হবে।

দুজন সিমার ও বাকি স্পিনারদের নিয়ে হেরাথকে ১০০ ওভারও পরিশ্রম করতে হয়নি বাংলাদেশের ১০ উইকেট নিতে। তিনটি সহজ ক্যাচ ফেলার পরও ৩১২ রানে বাংলাদেশকে আউট করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক নিশ্চয় আনন্দিত।

তবে টিম ম্যানেজমেন্টের কথা মুশফিক মেনে নিলেও প্রয়োজনের সময় একমাত্র মেহেদী হাসান মিরাজ বাদে উইকেটে নিজের পাশে আর কাউকে না পেয়ে সম্ভবত হয়েছেন নিজের প্রতিই ক্ষুব্ধ। নিউজিল্যান্ড থেকেই অধিনায়ক তার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে যেভাবে লড়ে চলেছেন, এখন সময় এসেছে তার সতীর্থদের ব্যাট ও বল হাতে দলকে সামর্থ্যের সেরাটা দেওয়ার।

/কেআর/