চান্ডিমালকে দেখেও শিখতে পারলেন না সাব্বিররা

lipu vai-2শততম টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখার এটাই যদি প্রথম দিনের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ প্রয়োগ হয়, তাহলে আমি সত্যিই ব্যথিত। শততম টেস্টে আসার আগে আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখে ও নিজে খেলে যে অভিজ্ঞতা, মেধা ও শিক্ষা একজন খেলোয়াড়ের ভাণ্ডারে জমা পড়ে, তার এমন বাজে অপচয় মাঠে বসে দেখতে হবে ভাবিনি।

বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের যদি বাড়তি প্রচেষ্টা থাকতো, তবে সেই বোলিং ধারে শ্রীলঙ্কাকে ২৭৫ রানের মধ্যেই আটকে রাখা যেত বলে আমার বিশ্বাস। দীনেশ চান্ডিমাল দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে উইকেটে তার সঙ্গীদের সাহস জুগিয়ে যেভাবে ৩০০ বলে ১৩৮ রান করলেন, সেটা দেখে আমাদের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা কোনও কিছুই শিখতে পারলেন না।

প্রথম টেস্টে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ছুড়ে দিয়ে এসেছিলেন উইকেট। আমার বিশ্বাস ছিল কোনও একজন ব্যাটসম্যান আজই (বৃহস্পতিবার) ভুল সংশোধন করে উইকেট আগলে রাখবেন এক প্রান্তের, কিংবা বেশ বড় একটি জুটি ভাঙার চেষ্টা করে ক্লান্ত হয়ে পড়বে লঙ্কান বোলাররা। একজন পেস বোলার খেলানোয় বোলিং বৈচিত্র্য হেরাথের কমে গেলেও স্পিনাররা সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন। এক সুরঙ্গা লাকমলই দেখিয়েছেন কিভাবে সকালে প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যাট করে বল হাতে পরিকল্পনার ছক অনুযায়ী ব্যাটসম্যানদের শর্ট পিচ বল করে আউটের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে হয়। প্রয়োজনীয় ব্রেক থ্রু দিয়ে দলের পাশে কিভাবে দাঁড়াতে হয়, সেটাও তিনি দেখিয়েছেন।

দ্বিতীয় দিনেও উইকেট যথেষ্ট ব্যাটিং সহায়ক ছিল। তামিমের কাছ থেকে লম্বা একটা ইনিংস ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু ৪৯ রান করেই হেরাথের বুদ্ধিমত্তার কাছে তিনি হেরে যান। সামনের পা আড়াআড়ি করে খেলা সংশোধন করতে না পারলে ভবিষ্যতেও সম্ভাবনাময় অনেক ইনিংস তার গন্তব্যে ঠিকমতো পৌঁছাতে পারবে না। সৌ্ম্য সরকারের চমৎকার আশা জাগানো ইনিংসের শেষ হয়েছে তার সফটহ্যান্ডে বল ডিফেন্স করার চেষ্টার আন্তরিকতার অভাবে।

প্রায় ৫০-এর মতো যার ব্যাটিং গড়, সেই মুমিনুল হকের জায়গায় সুযোগ পাওয়া ইমরুল কায়েস একবার জীবন পেয়ে যে শট খেলে দিনের শেষ প্রান্তে এসে আউট হয়েছেন, তাতে মনে হয়েছে নিজের বা দলের প্রয়োজনে কিভাবে খেলতে হয়, সেটা অনুধাবন করার মতো জ্ঞান তিনি রাখেন না।

নিউজিল্যান্ড সফরের সময়ও বলেছিলাম স্বাভাবিক ব্যাটিং অর্ডার বাদ দিয়ে নাইটওয়াচম্যান পাঠানোর তত্ত্ব সব সময় প্রয়োগ করা উচিতি নয়। এক বলে তাইজুল ইসলাম আউট হয়ে শ্রীলঙ্কাকে উজ্জ্বীবিত করেছেন, এতে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের সমর্থন দেওয়ার জন্য কমে গেল পেছনের দিকের ব্যাটসম্যানের সংখ্যা। সবশেষে টেস্ট ম্যাচে সাব্বির চার নম্বরে নেমে যে মেজাজে ব্যাটিং করলেন, তা সহ্য করা অনেক সময়ই খুব কষ্ট হচ্ছিল। দিনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি যে শট খেলে পাতানো ফাঁদে আউট হলেন, তা এক কথায় ক্ষমার অযোগ্য। কেউ যতক্ষণ সময়ের দাবি বুঝে তা মেটানোর জন্য নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, ততক্ষণ সেই ফরম্যাট থেকে তাকে বাইরে রাখাই উত্তম।

মুশফিক ১১৩ ওভার কিপিং করলেও গত রাতে বিশ্রাম পেয়েছেন। দ্বিতীয় দিনে করেছেন মাত্র ৩০ ওভারের মতো কিপিং। এমন একটা অবস্থায় নিজের ইচ্ছাই আবার ৬ নম্বরে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত মোটেই ভালো লাগেনি। সাকিব তার নিজস্ব স্টাইলে ঝুঁকিপূর্ণ ক্রিকেট খেলছেন, ক্যাচও দিয়েছেন। অবশ্য ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে তাকে নিয়েও লড়াই করার সুযোগ থাকবে মুশফিকের। তবে মোসাদ্দেক হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের পূর্ণ সমর্থন পেলে এখনও শ্রীলঙ্কার স্কোর টপকে যাওয়ার সুযোগ আছে। আগামীকাল (শুক্রবার) ২০ ওভার পার করতে পারলে নতুন বল নেওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে, আর সেটা থেকেই দ্রুত রান যোগ হতে পারে যদি স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা সেই মুহূর্তে উইকেটে থাকতে পারেন।

শ্রীলঙ্কার স্পিন বোলিংয়ে তরুণ সান্দাকানের সংযোজন বোলিং বিভাগের ধার বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বাড়তি কিছু রান দিলেও উইকেট তুলে নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাটসম্যানকে বিচলিত করার ক্ষমতা রাখেন। কাল তাকে ভালোভাবে সামাল দেওয়াটা হবে ব্যাটসম্যানদের অন্যতম প্রধান কাজ।

/কেআর/