দীর্ঘকালীন ইনজুরি থেকে ফেরত এসে একটু খরুচে হলেও খেলার শুরু ও ডেথ ওভারে লাসিথ মালিঙ্কার উপস্থিতি ঠিকই নজর কাড়ল। তামিমকে হারানোর ধাক্কাটা অসম্ভব ভালোভাবে সামাল দিয়েছিলেন সাব্বির ও সৌম্য। উইকেটে তাদের আরও ৪ থেকে ৫ ওভার উপস্থিতি হয়তো ১৮০ রানের উপর নিয়ে যেত দলের রান। আরেকটু সচেতন হয়ে সঠিক লাইনে দৌড়ালে হয়তো রান আউট হতেন না সাব্বির। তাকে হারানোর পর সৌম্য যদি খেলায় আরও নজর দিয়ে সময়ের দাবির সঙ্গে তাল মিলিয়ে একদিক সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতেন, তাহলে দুই দিক থেকে এত উইকেট হারাতে হতো না আমাদের।
যে দুর্দান্ত পিচে সামনে বা সাইড স্ট্রোক খেলে অনায়াসে রান করা যায়, সেখানে এই অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্কুপ শট খেলে দলের নির্ভরযোগ্য এবং অধিনায়কের চাপমুক্ত মুশফিক অতি সস্তায় নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে দলকে একটা বাজে পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়ে আসেন। রান খরায় থাকা মুশফিককে রানে ফেরত আসতে হলে নতুন কোনও শটের উদ্ভাবন বাদ দিয়ে প্রচলিত ক্রিকেটীয় শটসের ওপর যত্নবান হওয়া উচিত।
যখন দলের ৬ ও ৭ নম্বর ব্যাটসম্যান রান সংগ্রহের তালিকায় উপরের জায়গা পায়, তখন দলের রান সংখ্যা ১৫৫-এর বেশি আশা করা যায় না। শ্রীলঙ্কার পাঁচজন বোলারের ২০ ওভারের সমন্বিত ব্যবহার দারূণ পেস পরিকল্পনার অংশ। প্রত্যেকের চাহিদা কে কতটুকু মেটাতে পেরেছেন, তা কোচ ও অধিনায়ক বেশ ভালোভাবে হিসাব-নিকাশ করতে পারবেন।
যে ম্যাচে সাকিবের ব্যাট ও বল কথা বলে না, মুস্তাফিজকে আলাদা করে চেনা যায় না এবং তামিম প্রথম ওভারেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন, সেই ম্যাচে লড়াই করাটা মাশরাফির জন্য যথেষ্ট কঠিন কাজ।
দলের একাদশে চার পেসার আমাকে অবাক করেছে। তার চেয়েও অবাক হয়েছি আমাদের বোলিং আক্রমণের শুরুটা যখন হয়েছে মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে। এই যদি পরিকল্পনা হয়, তাহলে এক পেস বোলার (তাসকিন আহমেদ) কমিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে খেলানো উচিত ছিল। তবে মাহমুদউল্লাহ ২ ওভারে ৬ রানের কম খরুচে স্পেলের পর তার বোলিং আর সচল না রাখাটা আমার বোধগম্য হয়নি। নতুন বলে ও দুই প্রান্তে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকলে, তাসকিন নিজেকে সেই পরিস্থিতির জন্য উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে দাবিদারের তালিকায় আরও পিছিয়ে পড়লেন। তার গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ও ক্যাচিংয়ে আরও উন্নতি করা জরুরি, যদি নিয়মিত একাদশে জায়গা পেতে চায়।
এত ভালো উইকেটে ১৫৫ রান করে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরাটা কঠিন ছিল। তার ওপর যদি উইকেট ফেলে একটা চাপ সৃষ্টি বা কম রান দিয়ে ব্যাটসম্যানদের বিচলিত না করা যায়, তাহলে খেলাটার ফল হয়ে যায় শুধু সময়ের অপেক্ষা।
অনেকদিন পর কুশল পেরেরা ফিট হয়ে যে অসাধারণ ইনিংস খেললেন, তাতে যোগ্য দল হিসেবেই শ্রীলঙ্কা আজ (মঙ্গলবার) অনায়াসে জিতেছে। বোলিংয়ে মুস্তাফিজকে ৪ ওভার ব্যবহার করা উচিত ছিল এবং একাই লড়ে যাওয়া মাশরাফি শেষ ওভারটা নিজের জন্য রাখতে পারতেন। অভিষিক্ত সাইফউদ্দিনও ভালো বোলিং করেছেন।
এই ফরম্যাটে আমাদের আরও শিখতে হবে। খেলোয়াড়দের নিজের সামর্থ্যের ওপর আরও বিশ্বাস রাখতে হবে। ম্যাচের আগে আচমকা মাশরাফির টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণাটা ভালো লাগেনি। যদিও আসল কারণ জেনেই বিস্তারিত আলোচনা করা উচিত।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফির অনেক বড় অবদান আছে। অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের সীমিত ওভার ক্রিকেটকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া এই খেলোয়াড় সবশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিজে ও তার দল সফল হোক, এই কামনাই থাকবে।
/কেআর/