দরজায় কড়া নাড়ছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ১ জুন থেকে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে শুরু হচ্ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। ৮ দেশের এই উত্তেজনাকর লড়াইয়ের আগে কোন দলের কী অবস্থা, শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে থাকছে কে, কেনই বা ফেভারিট ধরা হচ্ছে তাদের- এই নিয়েই আমাদের বিশেষ আয়োজন। আজ থাকছে ভারতকে নিয়ে-
শেষ পর্যন্ত ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই ইংল্যান্ড গেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। উপলক্ষ-মাঠ এক, ভিন্ন কেবল সেনাপতি। চার বছর আগে স্বাগতিক ইংলিশদের হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ভারত মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে, আর এবার তারা শিরোপা ধরে রাখার মিশনে নামতে যাচ্ছে বিরাট কোহলির কাঁধে ভর দিয়ে। ধোনির অধিনায়কত্বে পাওয়া সাফল্য ধরে রাখতে পারবেন কোহলি- প্রশ্নটা কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বে।
সেই অর্থে ধরতে গেলে প্রতিপক্ষের সঙ্গে কোহলির লড়াইটা হবে ধোনির সঙ্গেও। চাপটা আরও বেশি হতে পারে স্কোয়াডে ধোনি নিজে আছেন বলেও। গত আসরে প্রথম একাদশে যারা ছিলেন, তাদের বেশিরভাগ খেলোয়াড় আছেন ২০১৭ সালের আসরেও। বরং চার বছরে তাদের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার হয়েছে আরও সমৃদ্ধ। তাই ধোনির নেতৃত্বে পাওয়া সিংহাসনটা ধরে রাখতে না পারলে কোহলিকে যে নিন্দুকেরা ছেড়ে কথা বলবে না, সেটা ভারতীয় ক্রিকেটের অতীত ইতিহাস থেকে দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট।
সে যাইহোক, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা পরিষ্কার ফেভারিট। ইংল্যান্ডের মাটিতে গত কয়েক বছরের সাফল্য ও ভারসাম্যপূর্ণ দল ভারতকে এগিয়ে রাখছে শিরোপা জেতার পথে। যদিও গ্রুপ পর্বেই কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কোহলিদের। ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচটাই তো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে। পেরোতে হবে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বাধা। ‘আন্ডারডগ’ হয়ে টুর্নামেন্টে যাওয়া শ্রীলঙ্কাও পাল্টে দিতে পারে তাদের হিসাব।
কেন্দ্রবিন্দু : ইংল্যান্ডের মাঠে ওয়ানডেতে ভারতের সাফল্যের হার ৫১ শতাংশ। যদিও গত পাঁচ বছরের হিসাব কষলে শতাংশটা বেড়ে যাবে অনেক। এই সময়ে খেলা ৯ ওয়ানডের ৮টিতেই জিতেছে ভারত, সাফল্যের হার যেখানে ৮৯ শতাংশ। সেই সঙ্গে ২০১৩ সালের ফাইনাল জেতার সুখস্মৃতি তো আছেই তাদের কোষাগারে। তাছাড়া দলটাও দুর্দান্ত। কোহলি ও ধোনি ছাড়াও এই আসরে আছেন যুবরাজ সিং, শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা ও আজিঙ্কা রাহানের মতো প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান। বোলিং ইউনিটটাও শক্তিশালী। সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলে দুর্দান্ত বোলিং করা ভুবনেশ্বর কুমারের সঙ্গে চোট কাটিয়ে ফেরা মোহাম্মদ সামি ইংলিশ কন্ডিশনের ফায়দা তুলে অবদান রাখতে পারেন দলের জন্য। দিনে দিনে উন্নতি করা উমেশ যাদবও হয়ে উঠতে পারেন তুরুপের তাস। আর স্পিন বিভাগে পরীক্ষিত রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার জুটি তো আছেই।
শক্তি : ভারতীয় ক্রিকেট মানেই ব্যাটসম্যানদের ছড়াছড়ি। বিশ্বসেরা সব ব্যাটসম্যানদের জন্ম দিয়েছে দেশটি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির এই দলটাও ব্যতিক্রম নয়। কোহলি, ধাওয়ান, রোহিত, যুবরাজদের নিয়ে গড়া শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ গুড়িয়ে দিতে পারে প্রতিপক্ষদের। মিডলঅর্ডারে ধোনি-আজিঙ্কা রাহানেদের কার্যকরী ব্যাটিং বের করে নিয়ে এসেছে অনেক ম্যাচ।
দুর্বলতা : কন্ডিশনটাই বেশি ভোগাবে এবার ভারতকে। কেননা আইপিএলের কারণে মাত্র ১০দিন আগে ইংল্যান্ডে এসেছে তারা। সম্পূর্ণ আলাদা কন্ডিশনে মানিয়ে নিয়ে এই সময়টা মোটেও যথেষ্ট নয়। গত আসরে এখান থেকে শিরোপা জেতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল ইংলিশদের বিপক্ষে সিরিজ। এবার আইপিএল খেলে সরাসরি নামতে যাচ্ছে টুর্নামেন্টে। তাছাড়া আইপিএলে রান না পাওয়ায় অধিনায়ক কোহলির ফর্মটাও ভাবাচ্ছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
স্কোয়াড : বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, জসপ্রিৎ বুমরা, কেদর জাদব, দিনেশ কার্তিক, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ সামি, হার্দিক পান্ডিয়া, আজিঙ্কা রাহানে, উমেশ যাদব, যুবরাজ সিং।
প্রাপ্তি : চ্যাম্পিয়ন- ২০০২ (শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে) ও ২০১৩।
প্রতিপক্ষ : পাকিস্তান (৪ জুন), শ্রীলঙ্কা (৮ জুন), দক্ষিণ আফ্রিকা (১১ জুন)।
/কেআর/