ওভালে প্রতিক্ষণে ফিরছে কার্ডিফের স্মৃতি

জয় উদযাপন করে বাংলাদেশের ফটোসেশনকেনিংটন ওভালে প্রতিক্ষণেই যেন ফিরে আসছে কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্সের স্মৃতি। কার্ডিফে মাশরাফি-তাপস-আশরাফুল-আফতাবের দারুণ পারফরম্যান্সে সেই সময়ের পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, সালটা ছিল ২০০৫। এখন ২০১৭ সাল। এতো বছর পরও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওই একটি জয়ই রয়েছে বাংলাদেশের। সোমবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ওভালে ফের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই ম্যাচে ছায়া ফেলছে কার্ডিফে বাংলাদেশের অর্জিত সেই জয়ের স্মৃতি।

১২ বছর আগের ওই ম্যাচে মাশরাফি মুর্তজা ৩৩ রান দিয়ে নিয়েছিলেন একটি উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণাত্মক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে কোনও রান করার সুযোগ দেন নি তিনি। ওই ম্যাচের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে বর্তমান দলে আছেন মাশরাফি। তার নেতৃত্বে এবার লড়বে বাংলাদেশ। সেদিনের সুখস্মৃতি রোমন্থন করে মাশরাফির মন্তব্য, ‘সেই ম্যাচের ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র আমিই এই দলে আছি। সেটা এখন অতীত, সেই ম্যাচের কোনও প্রভাব এখন পড়বে না।’ 

কার্ডিফে ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪৯ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। জবাবে মোহাম্মদ আশরাফুলের সেঞ্চুরিতে ৪ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটের বিশ্ব কাঁপানো জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ।আশরাফুলের সেঞ্চুরি উদযাপনঅস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের অংশীদার ছিলেন জাভেদ ওমর বেলিম, নাফিস ইকবাল, তুষার ইমরান, মোহাম্মদ আশরাফুল, হাবিবুল বাশার সুমন, আফতাব আহমেদ, মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাসুদ, মাশরাফি মুর্তজা, তাপস বৈশ্য ও নাজমুল হোসেন। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া কার্ডিফে আরেকবার মুখোমুখি হওয়ার আগে এক যুগ আগের স্মৃতি আরেকবার জায়গা করে নিল তাদের মনে। ওই ম্যাচজয়ী দলের কয়েকজন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন তাদের কার্ডিফ জয়ের অনুভূতি। সঙ্গে সোমবারের ম্যাচে বাংলাদেশ দলের জন্য শুভকামনাও জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বাঁহাতি স্পিনার রফিক কার্ডিফে কোনও উইকেট পাননি। তবে ১০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে ভালোভাবেই চেপে ধরেছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেছেন, ‘যা চলে গেছে তা কি আর ফিরে আসবে? আমরা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিলাম। আমরা যে ওদের হারাতে পারি, তা প্রমাণ করেছিলাম। এবারও ওদের হারানো অসম্ভব নয়। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ ভালো খেলবে এবার। আর ভালো খেললে যে কোনও দলকেই হারাতে পারব আমরা।’

কার্ডিফ জয়ের অন্যতম নায়ক আশরাফুলের স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল সেই জয়, ‘আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সেটা সবচেয়ে বড় জয়ের স্মৃতি। ওই সময়ে আমরা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিলাম। আমাদের ক্রিকেটের অনেক বড় অর্জন সেটা। এবারও চাই বাংলাদেশ এমন কিছু করুক। শুরুটা ভালো এবং তিন বিভাগে সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে আমাদের ভালো সম্ভাবনা আছে।’বাংলাদেশের জয়ের মুহূর্তঅস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একমাত্র জয়ে বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাপস বৈশ্য। ১০ ওভার বল করে ৬৯ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৩ উইকেটে। আমেরিকা থেকে ফোনে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি এই ম্যাচে তিন বিভাগে ভালো করতে পারি, তাহলে ভালো ফল আসবে। আমি বলব, সবাই জয়ের জন্য মাঠে নামবে। একটা সময় আমরা আন্ডারডগ ছিলাম। ভালো খেলাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। এখন সময় বদলেছে। বিশ্বের যে কোনও দলের বিপক্ষে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা থাকে। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের ভালো বোলিংয়ের সামনে আমরা অনেক ভালো ব্যাটিং করেছি। আমাদের বোলিংটা ভালো হয়নি, কারণ উইকেট থেকে বোলাররা কোনও সহায়তা পায়নি। এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে গেলে প্রতিটা বিভাগে আমাদের অসাধারণ পারফর্ম করা লাগবে। এই দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ই দলের জন্য সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করে। আশা করি, আজ ভালো কিছুই হবে। ২০০৫ সালের ওই কীর্তি এখনও আমাদের চোখে ভাসে। সেটা কখনও ভোলার নয়। চাইব আজও এমন কিছুই যেন হয়।’

জাভেদ ওমর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এমন জয় আসলে সবাইকে উজ্জীবিত করে। আমি কোনোদিনও এমন জয়ের স্মৃতি ভুলব না। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সবার কাছে প্রত্যাশা, তারা যেন ইতিবাচক থেকে এবং চাপমুক্ত হয়ে মাঠে নামে। নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে অবশ্যই ইতিবাচক ফল আসবে।’

/এফএইচএম/এএআর/