আগের সব সাফল্যকে পেছনে ফেলেছে এ বিজয়

.১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে একটা বড় জয় পেয়েছিলাম, ইংল্যান্ডের মাটিতে হয়েছিলাম আনন্দে আত্মহারা। পরে অনিয়মিতভাবে আরও একদিনের ম্যাচ জিতেছি, কিন্তু অতি সাম্প্রতিককালে সেটা হয়েছে আরও ধারাবাহিক। অবশ্য সব ম্যাচ জেতার ঘটনা বা তার নায়কদের কথা চট করে চোখের সামনে ভেসে উঠে না। তবে এ যাবৎকালের সব সাফল্যকে পেছনে ফেলে এক নম্বরে উঠে এসেছে গতকালকের ম্যাচ বিজয়ের গল্প।

৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ইংল্যান্ডের মাটিতে এই ম্যাচ জেতার কথা যখন ক্রিকেট বোদ্ধা বা আমজনতার কাছে উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন মনে হচ্ছিল, তখন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ নতুন রূপে চেনাল তাদের মানসিক শক্তি ও ক্রিকেট মেধার কথা।

এই টুর্নামেন্টে তামিম দলের ব্যাটিং শক্তির মনোবল অটুট থাকার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আর গ্রুপের শেষ ম্যাচে সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে তার চমৎকার ইতি টানলেন সাকিব-রিয়াদ জুটি।

এমন প্রতিকূল অবস্থা থেকে এত বড় জুটি গড়ে এমন স্মরণীয় ম্যাচ জেতানো ইনিংস কোনও খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারে একটিও আসে না। অথবা এমন সুযোগ কদাচিৎ বড় মাপের কোনও খেলোয়াড়ের জীবনে দ্বিতীয়বার দেখা মিলতে পারে।

ইতিপূর্বেও লিখেছিলাম ও বলেছিলাম সাকিবের অবদান ছাড়া বড় ম্যাচ বাংলাদেশের জেতা মুশকিল। তিনি ফেরত আসলেন তার জীবনের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলে। আর ব্যাটিং অর্ডারে ৭,৮ ও ৬ নম্বরে মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো রিয়াদকে উঠিয়ে-নামিয়ে যেভাবে অবমূল্যায়িত করা হচ্ছে, সেটা অনেকের মতো আমাকেও ব্যথিত করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাট হাতে জবাব দেওয়ার সেরা ম্যাচটি রিয়াদ বেছে নেওয়ায় ও দল জয়ী হওয়ায় তৃপ্ত সবাই।

ইংল্যান্ডে অনুশীলন ও আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার অভিজ্ঞতার প্রতিদান দেওয়ার একটা বড় সুযোগ ছিল ‘পয়মন্ত’ কার্ডিফে। ইতিপূর্বে ভারতের সঙ্গে এলোমেলো বল করলেও তাসকিন গতকাল চমৎকার লাইনে বল করে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বেশি কঠিন সময়ের মুখোমুখি করেছেন। এর পর খেলার মাঝবিরতিতে যে স্বস্তি নিয়ে বাংলাদেশ দল ড্রেসিংরুমে ফিরেছে তার নায়ক ছিলেন মোসাদ্দেক সৈকত, তার ১৩ রানে ৩ উইকেটের স্পেলটি অসাধারণ। বল হাতেও তার উপর আরেকটু বেশি আস্থা যে দল রাখতে পারে, তার সুস্পষ্ট বার্তা তিনি প্রতিষ্ঠিত করলেন।

অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচের ফলাফলের আলোকে সেমিফাইনাল খেলতে পারব কি না সেটাকে পেছনে রেখে এই গ্রুপ ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ যে একটি জয় তুলে নিতে পারল তাকেই আমি আপাতত এগিয়ে রাখছি।

এই মাঠেই অস্ট্রেলিয়াকে ২০০৫ সালে হারানোটা সেই সময়ের আলোকে ছিল এক বিশাল অর্জন। সেই ম্যাচের একজন সৈনিক ছিলেন মাশরাফি এবং গতকাল এ ম্যাচে ছিলেন দলের সেনাপতি। অবস্থান দুই মেরুতে হলেও দুই অবিস্মরণীয় বিজয়ের সাক্ষী তিনি। গতকালের ম্যাচের জয়ের সার্বিক প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরও একধাপ উপরে টেনে তুলেছেন আন্তর্জাতিক বরেণ্য ধারাভাষকাররাও। আমরা হয়েছি আনন্দিত ও গর্বিত। অধিনায়ক মাশরাফি তার দল ও কর্মকর্তাদের অনেক অভিনন্দন।