তবে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক বলেছেন তিনি এমন পরিস্থিতিতে ১০বার জিতলে ৯বারই ব্যাট করতেন। তিনি নিঃসন্দেহে এই পিচ সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তার দলের ব্যাটসম্যানরা সবাই দারুণ ফর্মে এবং বাংলাদেশের পেস বোলাররা তাদের গতি দিয়ে যে তেমন ঝড় তুলতে পারবে না, তা তিনি প্রথম টেস্টেই বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু তামিমবিহীন এই দলটির অধিনায়ক যদি ফাফ দু প্লেসিস হতেন এবং প্রথম টেস্টের এমন ফলাফলের পর তাকেও এমন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দ্বিধায় পড়তে হতো।
দলের পেস বোলিংয়ে শুভাশীষ ও রুবেলের সংযোজন ও পিচের হালকা ঘাস মুশফিককে আগে বল করার পক্ষে অনুপ্রাণিত করে থাকলেও দিন শেষে ওভার প্রতি প্রায় ৫ (৪.৭৫) গড়ে রান দিয়ে তাকে ইতিমধ্যেই ক্রিকেটপ্রেমিদের তীব্র সমালোচনার মুখে ফেলে দিয়েছে।
প্রায় গত তিন বছর ধরে বলা যায় হিথ স্ট্রিক ও বর্তমান বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ দলের পেস বোলারদের পেছনে যথেষ্ট তদারকি করেছেন। কিন্তু আগের বছরগুলোতে ঘরোয়া টেস্ট ম্যাচের সিরিজে সফলতার জন্য স্পিন সহায়ক উইকেট তৈরি করে আমরা যথেষ্ট সাফল্য পেলেও বেশিরভাগ টেস্টে দুই পেস বোলার এবং কোনও ম্যাচে পেসার না খেলানোর ঘটনাও আমাদের অজানা নয়। অধিকাংশ সময় নতুন বল এক প্রান্ত থেকে স্পিনার বল করাতে নতুন বলে আক্রমণ রচনা বা সারাদিনের ৯০ ওভারের মাঝে ২০ ওভার বল করারও অভিজ্ঞতা তাদের হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সম্প্রতি একটি ইনিংসে পেস বোলার হিসাবে মোস্তাফিজের মাত্র এক ওভার করার ঘটনা সব রেকর্ডকে হার মানিয়েছে।
স্পিন সহায়ক পিচে আমাদের পেস বোলাররা স্বাভাবিক কারণেই অবহেলিত ছিল। নিজেদের অভিজ্ঞতা অর্জন বা ভুলগুলি শুধরানোর সবচেয়ে কম সুযোগ তারা পেয়েছে। অর্থাৎ নেটে অনুশীলন করলেও ম্যাচ অভিজ্ঞতা চলে গিয়েছিল প্রায় তলানিতে। দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনে সেই পেস বোলিং বিভাগকে যখন ৯০ ওভারের মধ্যে ৬১ ওভার বল করতে হয়, তখন রাতারাতি তাদের কাছ থেকে ভালো ফলাফল প্রত্যাশা করাটা কতটুকু যৌক্তিক, সেটা ভেবে দেখতে হবে। প্রথম সেশনে অনেক উপরে বল করে তারা মার খেয়েছেন এবং তাদের দুর্ভাগ্য দুজন ইনফর্ম উদ্বোধনী জুটি তারা ভাঙতে পারেননি, বরং দেখতে হয়েছে গ্যাপ দিয়ে নেওয়া তাদের নিখুঁত বাউন্ডারিগুলো।
চা বিরতির কিছুটা আগে থেকে খণ্ডকালীন সময়ে তাদের চমৎকার রিভার্স সুইং ও শর্ট পিচ বলের সেশন ছিল উপভোগ্য। দু প্লেসিসের ক্যাচটি শুভাশীষ ধরতে পারলে হয়তো আরও সফলতার সুযোগ বেরিয়ে আসতো। প্রত্যাশার কাছাকাছিও তাইজুল বল করতে পারেননি। ফুলটস বল দিয়েছেন প্রচুর, সঙ্গে দুর্বল ফিল্ডিং ছিল দৃষ্টিকটু। দেশের পিচে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার কারণে অনেক বাজে লেন্থ ও লাইনের বলে প্রতিপক্ষের সমীহ কিংবা উইকেট পেলেও মিরাজ ও তাইজুল উপলব্ধি করতে পারছেন ভালো স্পিনারের কতারে সামিল হতে হলে আরও কতটা নিখুঁত বোলিং বল করতে হবে।
আমার বিশ্বাস প্রথম সেশনে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ঘোষণায় যাবে এবং এই টেস্টের চমৎকার ব্যাটিং সহায়ক পিচেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ব্যাট করবে। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ পেস বোলাররা এই পিচকে প্রাণবন্ত করে তুললে অবাক হব না। তবে লড়াইয়ের আমেজ বজায় রাখার জন্য প্রথম ইনিংসটাই থাকবে আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়।