ওয়ানডেতেও হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

সৌম্যর মতো অন্যরাও ব্যর্থদক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম দুই টেস্ট ও দুই ওয়ানডেতে বোলাররা কোনও সুবিধা করতে পারেনি। এসময়ে তুলনামূলকভাবে ব্যাটসম্যানরা ভালো খেলেছিল। কিন্তু তৃতীয় ওয়ানডেতে এই বিভাগেও তারা হতাশ করলো। প্রথমে বল হাতে, পরে ব্যাটিংয়ে দুর্দশার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। ৩৭০ রানের টার্গেটে নেমে ৪০.৪ ওভারে ১৬৯ রানে অলআউট হয়েছে তারা, শেষ ম্যাচ হেরেছে ২০০ রানে। টেস্টের পর ওয়ানডেতেও তাদের হোয়াইটওয়াশ করলো দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দুই ম্যাচে ১০ উইকেট ও ১০৪ রানে জিতেছিল তারা।

বাফেলো পার্কে রবিবার বাংলাদেশ সান্ত্বনার খোঁজে নেমেছিল। কিন্তু টস জিতে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিপদে ফেলতে পারেনি সফরকারী বোলাররা। বরং ১০০ ছাড়ানো দুটি শক্ত জুটিতে ৬ উইকেটে ৩৬৯ রান করে প্রোটিয়ারা।

মিরাজের উইকেট উদযাপনহাশিম আমলাকে শেষ ম্যাচে বিশ্রামে রেখেও দক্ষিণ আফ্রিকা কোনও সমস্যার মুখোমুখি হয়নি। কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে এদিন উদ্বোধনী জুটিতে নামেন তেম্বা বাভুমা। হাফসেঞ্চুরির আক্ষেপ থেকে গেলেও তিনি আউট হওয়ার আগে ১১৯ রানের শক্ত জুটি গড়েন। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ৪৮ রানে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন বাভুমা।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট পায় কিছুক্ষণ পরই। ১৫তম ফিফটি পাওয়া ডি কক ৬৮ বলে ৭৩ রান করে ফিরতি বলে মিরাজকে ক্যাচ তুলে দেন। তারপর আবার প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের দাপট। ফাফ দু প্লেসি ওয়ানডেতে অভিষিক্ত হওয়া এইডেন মারক্রামকে সঙ্গে করে ১৫১ রানের বড় জুটি গড়েন। কিন্তু পিঠে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন দু প্লেসি। ৬৭ বলে ১০ চার ও ১ ছয়ে ৯১ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হন স্বাগতিক অধিনায়ক। ওই ওভারেই ৬৬ রানে আউট হন মারক্রাম।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৭৬ রান করা এবি ডি ভিলিয়ার্স এদিন মাত্র ২০ রানে মাশরাফির দুর্দান্ত ক্যাচ হন। ৪৬তম ওভারে তাকে ফেরান রুবেল। পরের ওভারে তাসকিনের জোড়া আঘাত। নবাগত উইলেম মুলডার (২) ও অ্যান্ডিল ফেলুকোয়াইয়োকে (৫) মুশফিকের ক্যাচ বানান তিনি।

মারক্রামের হাফসেঞ্চুরি উদযাপনশেষদিকে ফারহান বেহারডিয়েন ও কাগিসো রাবাদার ঝড়ো ব্যাটিং প্রোটিয়াদের স্কোর সাড়ে তিনশর উপরে নেয়। ২৪ বলে চারটি চারে ৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন বেহারডিয়েন। ৩ চার ও ১ ছয়ে ১১ বলে ২৩ রানে খেলছিলেন রাবাদা।

মিরাজ ও তাসকিন দুটি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের সফল বোলার। 

৩৭০ রানের বড় টার্গেটে নেমে ৬১ রানেই বাংলাদেশ হারায় ৫ উইকেট। আগের দুই ম্যাচের সেরা পারফর্মার ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহিম ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। বরং বাফেলো পার্কে অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে সাকিব আল হাসান ছিলেন উজ্জ্বল। তিনি পেয়েছেন ক্যারিয়ারের ৩৫তম ফিফটি।

শুরুতেই ডেন প্যাটারসনের তোপে ইমরুল (১), লিটন দাস (৬) ও সৌম্য সরকারকে (৮) হারিয়ে বিপদে পড়ে সফরকারীরা। ২০ রানে তারা তিনজন ফেরেন সাজঘরে। এরপর ক্রিজে নেমে সাকিবের সঙ্গে মুশফিক প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহকে দ্রুত ফিরিয়ে আবারও সফরকারীদের চাপে ফেলে প্রোটিয়ারা।

হাফসেঞ্চুরির পথে সাকিবের একটি শটপ্রথম দুই ম্যাচে অপরাজিত ১১০ ও ৬০ রান করা মুশফিক শেষ ম্যাচে মাত্র ৮ রানে রাবাদার হাতে ক্যাচ দেন। সাকিবকে ক্রিজে সঙ্গ দিতে নেমে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাকে ফিরিয়ে প্রথম উইকেট পান উইলেম মুলডার। ২ রানে মাহমুদউল্লাহকে এলবিডাব্লিউ করেন এ পেসার।

এরপর সাব্বিরকে নিয়ে ৬৭ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন সাকিব। ৬৩ বলে ৬ চারে হাফসেঞ্চুরি পান বাংলাদেশি অলরাউন্ডার। তবে তাকে থামতে হয় ৬৩ রানে। ইমরান তাহিরের ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে জোরালো শট নিয়েছিলেন সাকিব, কিন্তু মিডউইকেট থেকে পেছনে দৌড়ে এসেও ক্যাচ নিতে পারেননি ডি ভিলিয়ার্স। তবে পরের ওভারেই এইডেন মারক্রামের প্রথম বলে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে বদলি ফিল্ডার জেপি দুমিনির হাতে ক্যাচ দেন সাকিব। ওই ওভারেই সাব্বির ৩৯ রানে ক্যাচ তুলে দেন প্রোটিয়া উইকেটরক্ষকের হাতে।

১৩৫ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর ব্যবধান কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন মাশরাফি মুর্তজা ও মিরাজ। কিন্তু তাদের ২৮ রানের জুটি ভেঙে দেন প্যাটারসন। মাশরাফি ১৭ রানে ডি ককের গ্লাভসে ধরা পড়েন। ৪১তম ওভারে তাসকিন (২) ও মিরাজকে (১৫) আউট করে গুটিয়ে দেন ইমরান তাহির।

দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে বল হাতে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন প্যাটারসন। দুটি করে পেয়েছেন মারক্রাম ও তাহির।