ছোটবেলা থেকেই মহসিন ক্রিকেট ভালোবাসেন। তাই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ক্রিকেটের প্রতি তার প্রগাঢ় ভালোবাসাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ক্রিকেটের প্রতি অগাধ ভালোবাসা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে মহসিন ভেঙেছেন একের পর এক সীমাবদ্ধতা। মাত্র আট মাস বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে দুই পায়ে চলার শক্তি হারান টঙ্গীর ছেলে মহসিন। তবে থেমে থাকেননি, হুইলচেয়ারে বসেই ক্রিকেট খেলা ও তার মতো অন্য ক্রিকেটারদের সংগঠিত করার কাজ ঠিকই করেছেন।
২০১০ সাল থেকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছেন মহসিন। নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও অন্য প্রতিবন্ধীদের এক ছাদের নিচে নিয়ে আসার পুরস্কার উঠেছে তার হাতে।
শনিবার সাভারের শেখ হাসিনা যুব কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নে ভূমিকা রাখা তারুণ্যনির্ভর ৩০টি সংগঠনের হাতে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
গাজীপুরের হুইলচেয়ার ক্রিকেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা মহসিন এই পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বললেন, ‘ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা এবং প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়বদ্ধতা আমাকে এমন কিছু করতে সাহায্য করেছে। দেশের জন্য কিছু করতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।’
২০১০ সালে ফেসবুকে নিজের ছবি পোস্ট করেন মহসিন। সেই থেকে বাংলাদেশে শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি হয়ে আছেন তিনি। ২০১৪ সালে ভারতে একটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মহসিনের নেতৃত্বাধীন দল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে সেবার পুরস্কারও পেয়েছিলেন এই অদম্য যুবক।
শনিবার সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আরেক নাতি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। মহসিনের সঙ্গে আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। অভিভূত মহসিনের মন্তব্য, ‘তার সঙ্গে কথা বলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আমি সত্যিই ভাগ্যবান, এমন সম্মান পেয়েছি।’
সামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও ক্রীড়া উন্নয়ন— এই তিনটি বিভাগে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষণা করা হয়েছে। মহসিন পুরস্কার পেয়েছেন শিশু বা প্রতিবন্ধীদের সহায়ক কার্যক্রমের আওতায়। তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। আর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক তুলে দেন সম্মাননা সার্টিফিকেট।
পুরস্কার হাতে নেওয়ার পর থেকেই একটা ঘোরের মধ্যে আছেন মহসিন। প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘সত্যি কথা বলতে, এই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি গর্বিত। আমি চাই আমাকে দেখে আমার মতো সমস্যা আক্রান্ত মানুষ মনোবল পাক, দেশ আর সমাজের সেবার এগিয়ে আসুক।’
কথা বলতে বলতে মহসিন ফিরে যান বছর খানেক আগে। ভারতে শিরোপা জিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন, ট্রফির পাশাপাশি পেয়েছিলেন এক কোটি টাকা পুরস্কার! তখনই স্বপ্ন দেখা শুরু মহসিনের, ‘প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছিলাম, তিনি আমার অনেক প্রশংসা করেছিলেন। স্বপ্ন দেখা শুরু তখন থেকেই। আর এখন আমার স্বপ্ন আকাশের মতো বড়!’