৩৪ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটসম্যান তুষারের স্বপ্নের সীমানা এখানেই শেষ নয়। বিকেএসপিতে ১৫৪তম ম্যাচ খেলছেন তিনি, তবে থামতে চান ২০০ ম্যাচ আর ১৫ হাজার রান করে। বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ক্রিকেট নিয়ে নিজের চিন্তা-ভাবনা-দর্শন-পরিকল্পনার কথা তুলে ধরলেন ৫টি টেস্ট আর ৪১টি ওয়ানডে খেলা তুষার।
বাংলা ট্রিবিউন: ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করে আপনার অনুভূতি কী?
তুষার: খুব ভালো লাগছে, বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এমন কীর্তি গড়ে আমি খুব খুশি। পাঁচ-ছয় বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রান করে যাচ্ছি। রান করতে তো খুবই ভালো লাগে, তবে ভালো ব্যাটিংয়ের পুরস্কার পেলে আরও ভালো লাগতো। প্রতিটি ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে ভালো করার। জাতীয় দলের হয়ে না পারলেও ঘরোয়া বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরে ভালো লাগছে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে। তবু ভালো খেলার প্রেরণা কোথা থেকে পান?
তুষার: ঘরোয়া ক্রিকেটে খেললেও জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা নিজের বা প্রতিপক্ষ দলে থাকেই। আমি আসলে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করি। তাদের চেয়ে বেশি রান করা বা বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামি।
তুষার: ঠিক তেমনটা না। আসলে একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে খেলতে হয়। আমি জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের প্রতিপক্ষ বানিয়ে লড়াই করি, আর লড়াইয়ে জেতার জন্য প্রতিনিয়ত তাদের মতো করে তৈরি করি নিজেকে।
বাংলা ট্রিবিউন: আরও কতদিন খেলতে চান?
তুষার: আরও তিন চার বছর খেলবো, তারপর হয়তো চিন্তা করবো কী করা উচিৎ। এভাবে রান করলে তো থামতে ইচ্ছে করে না (হাসি)। তবে একদিন তো থামতে হবেই। চেষ্টা করবো আরও কয়েক বছর খেলে যত বেশি সম্ভব রান করার।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার লক্ষ্য কী? আরও কত রান করতে চান?
তুষার: আমি অন্তত ২০০টা ম্যাচ খেলতে চাই। আশা করি, ২০০ ম্যাচ খেলতে পারলে ১৪-১৫ হাজার রান করতে পারবো। ১৫ হাজার রান করলে হয়তো থামার চিন্তা করবো। ফিটনেস ধরে রাখতে পারলে এই রান করা সম্ভব। মজার ব্যাপার হলো, যত রান করছি, ততই আমার রানের খিদে বাড়ছে। আসলে ব্যাটসম্যানরা যখন রানের মধ্যে থাকে, তখন অনেক কিছুই করা যায়।
বাংলা ট্রিবিউন: প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আপনার তিনটা ডাবল সেঞ্চুরি, কিন্তু আজও ট্রিপল সেঞ্চুরির দেখা পাননি। আক্ষেপটা দূর করতে পারবেন?
তুষার: ট্রিপল সেঞ্চুরির চিন্তা মাথায় আছে, তবে এটা খুব কঠিন। এই আক্ষেপ দূর করার চেষ্টা করবো।
বাংলা ট্রিবিউন: গত বছর দুটি সেঞ্চুরি আর দুটি ডাবল সেঞ্চুরি সহ এক হাজার ২৭০ রান করেছিলেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আপনারই ছিল সর্বোচ্চ রান। এ বছর আপনার লক্ষ্য কী?
তুষার: ফিট থাকলে এবছর আরও বেশি রান আর পাঁচটি সেঞ্চুরি করতে চাই।
তুষার: স্বপ্ন না দেখলে তো ক্রিকেটই খেলতাম না! কিছু দিন আগে নির্বাচকরা বলেছিলেন, বাংলাদেশ ‘এ’ দলে আমাকে নেওয়া হতে পারে। ‘এ’ দলে সুযোগ পেলে তার সদ্ব্যবহার করতে চাই। ওখানে ভালো করলে টেস্ট দলে ফেরার স্বপ্ন সত্যি হতে পারে। আমি এখনও টেস্ট খেলার আশা ছাড়িনি।
বাংলা ট্রিবিউন: ৩৪ বছর বয়সে ফিটনেস ধরে রাখার রহস্য কী?
তুষার: রহস্য কিছু নেই, পরিশ্রম করলে ফিটনেসের উন্নতি হবেই। খেলা না থাকলেও আমি মাঠে থাকি, অনুশীলন করি। সকালে রানিং করলে বিকেলে ফুটবল খেলি বা নেটে ব্যাটিং করি। শুধু ক্রিকেটের টানে প্রতিদিন নিজেকে ব্যস্ত রাখি। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মতো হয়তো সুযোগ-সুবিধা পাই না, কিন্তু নিজস্ব সুবিধা কাজে লাগিয়ে ফিট থাকার চেষ্টা করি।
বাংলা ট্রিবিউন: এতো রান করে নির্বাচকদের কি কোনও বার্তা দিচ্ছেন?
তুষার: নির্বাচকদের বার্তা দেওয়ার কিছু নেই। আমার কাজ হলো রান করা, আর আমি সেটাই ঠিকমতো করতে চাই।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার টেস্ট ক্যারিয়ার নিয়ে বিশ্লেষণ কী?
তুষার: পাঁচটা টেস্ট ম্যাচ খেলেছি। হয়তো তখন নিজেকে উজাড় করে দিতে পারিনি। তবে এখন নিজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন টের পাই। কীভাবে রান করতে হয়, কিভাবে খেলতে হয় বুঝতে শিখেছি। টেস্ট খেলার আসল বয়স ৩০ বছর। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা না থাকলে ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকে, কারণ লাল বলের ক্রিকেট অনেক কঠিন।
বাংলা ট্রিবিউন: জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার কারণ কী?
তুষার: ২০০৭ সালে ইনজুরিতে পড়ার পর আমাকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। ওই সময়ে জাতীয় দল দূরের কথা, ঘরোয়া ক্রিকেটেই ব্যাটিংয়ে ছন্দে ছিলাম না। পাঁচ বছর লেগেছে নিজেকে ফিরে পেতে, আর তখন জাতীয় দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সুযোগ পেয়ে যায়। সে ভালো খেলায় আমি আর সুযোগ পাইনি। আসলে ইনজুরির কারণে আমি পিছিয়ে পড়ি।