ক্রীড়াঙ্গনে বিষয়টি নতুন নয়- এক দেশে জন্ম নিয়ে অন্য দেশের জার্সি গায়ে জড়ানোর। দুই ভাইয়ের দুই দেশে খেলার উদাহরণও তো আছে! ক্রিকেটেও আছেন অনেকে, যারা বিভিন্ন কারণে জন্মস্থান বাদ দিয়ে খেলেছেন অন্য দেশের হয়ে। এমন খেলোয়াড়দের নিয়ে একাদশ গড়েছে ‘আইসিসি ওয়েবসাইট’।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন এখন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস। ইংলিশদের অন্যতম সেরা ওপেনার ও অধিনায়কের জন্ম ১৯৭৭ সালে জোহানেসবার্গে। তবে জাতীয় দল হিসেবে ইংল্যান্ডকে বেছে নেওয়া এই ব্যাটসম্যানের অভিষেক ২০০৩ সালে। এরপর ব্যাটিং সামর্থ্য ও অধিনায়কত্বের দক্ষতা দিয়ে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে শেষ করেছেন খেলোয়াড়ি জীবন। তার নেতৃত্বে ইংলিশরা জিতেছে দুটি অ্যাশেজ।
ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা ১০০ টেস্টে ৪০.৯১ গড়ে স্ট্রাউস করেছেন ৭,০৩৭ রান। ওয়ানডেতে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও ১২৭ ম্যাচে করেছেন ৪,২০৫।
কোচ হিসেবে যতটা সফল হয়েছেন, খেলোয়াড় হিসেবে ততটা সাফল্য পাননি বব উলমার। এই ইংলিশ ক্রিকেটারের জন্ম কিন্তু ভারতে। ১৯৪৮ সালে ভারতের উত্তরাঞ্চলের কানপুরে জন্ম নেওয়া উলমার পরে চলে যান ইংল্যান্ডে। এরপর ১৯৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে ইংল্যান্ডের হয়ে তার অভিষেক হয় ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে।
‘থ্রি লায়ন্স’-এর হয়ে ১৯ টেস্ট ও ছয় ওয়ানডে খেলা উলমারের সব মিলিয়ে রান ১,০৮০। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেটার হিসেবে সেভাবে সাফল্য না পেলেও কোচ হিসেবে দারুণ সফল। ১৯৮৪ সালে খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানোর পর কোচ হিসেবে কাজ করেছেন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান জাতীয় দলে।
নিঃসন্দেহে তিনি জিম্বাবুয়ের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার তার ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন ’৯০-এর দশক ও নতুন শতাব্দীর শুরুতে। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে জন্ম নেওয়া এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জিম্বাবুয়ের হয়ে ১১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৬৩ টেস্টে ৫১.৫৪ গড়ে করেছেন ৪,৭৯৪ রান, আর ২১৩ ওয়ানডেতে তার রান ৬,৭৮৬। আর স্টাম্পের পেছনে থেকে টেস্টের ১৬০ ডিসমিসালের সঙ্গে ওয়ানডেতে করেছেন ১৭৩টি।
ক্রিকেটার ফ্লাওয়ার বিদায় নিলেও ২২ গজকে ছাড়েননি, শুরু করেন কোচিংয়ের কাজ। সেখানেও তিনি দারুণ সফল। ইংল্যান্ডের কোচের দায়িত্ব নিয়েই নিজের দক্ষতার প্রমাণ দেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া আরেক খেলোয়াড় কেভিন পিটারসেন। ১৯৮০ সালে নাতালের পিটারমরিটসবার্গে জন্ম তার। শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া লিগ খেললেও পরে চলে আসেন ইংল্যান্ডে। আর এখানেই শুরু করেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।
২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের জার্সিতে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া পিটারসেন পরের বছরই সুযোগ পেয়ে যান টেস্ট দলে। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি, দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে পরিণত হন ইংলিশদের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানে। ১০৪ টেস্টে ২৩ সেঞ্চুরিতে তার রান ৮,১৮১। আর ১৩৬ ওয়ানডেতে ৯ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৪,৪৪০ রান।
ক্রিকেটের অন্যতম গ্রেট নাম বাসিল ডি’অলিভেইরা। ইংল্যান্ডের জার্সিতে খেললেও এই অলরাউন্ডারের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। ১৯৩১ সালে কেপ টাউনে জন্ম নেওয়া ডি’অলিভেইরার টেস্ট অভিষেক ১৯৬৬ সালে। আর ওয়ানডেতে খেলেছেন ১৯৭১ সাল থেকে।
এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ৪৪ টেস্ট, যেখানে ৪০.০৬ গড়ে ২,৪৮৪ রানের সঙ্গে পেয়েছেন ৪৭ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৯৬৪ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত খেলে ১৯,৪৯০ রানের সঙ্গে নিয়েছেন ৫৫১ উইকেট।
অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের ব্যাটসম্যানের জন্ম ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে। ইংলিশ বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোটবেলাতেই অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান এই হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান। পরে সেখানেই শুরু করেন ক্রিকেট, ঘরোয়া লিগে দারুণ পারফর্ম করে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলেও জায়গা করে নেন।
১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা সামইন্ডসের টেস্ট অভিষেক ২০০৪ সালে। এই অলরাউন্ডার ২৬ টেস্টে ৪০.৬১ গড়ে করেছেন ১,৪৬২ রান, আর উইকেট ২৪টি। ওয়ানডেতে ছিলেন অবশ্য দুর্দান্ত, ১৯৮ ম্যাচে ৫,০৮৮ রানের সঙ্গে পেয়েছেন ১৩৩ উইকেট। সাইমন্ডস অস্ট্রেলিয়ার ২০০৩ ও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য।
জিম্বাবুয়ের এখনকার দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সিকান্দার রাজার জন্ম কিন্তু আফ্রিকার দেশটিতে নয়। ১৯৮৬ সালে এই অলরাউন্ডার জন্ম পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। ২০০১ সালে সিকান্দার পাড়ি জমান তার ‘নতুন দেশে’। জিম্বাবুয়েতে ঘরোয়া পর্যায়ে খেলা শুরু করা এই অলরাউন্ডার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নজরে পড়ে যায় নির্বাচকদের। এখন তিনি আফ্রিকার দেশটির হয়ে তিন ফরম্যাটেই খেলছেন।
অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত ১০ টেস্ট ও ৮৫ ওয়ানডের সঙ্গে সিকান্দার খেলেছেন ২৮ টি-টোয়েন্টি। এই ক্রিকেটারের সবচেয়ে বড় গুণ হলো যে কোনও পজিশনে ব্যাটিং করার সামর্থ্য আছে তার।
ওয়েলসে জন্ম নেওয়া প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে পাকিস্তানের হয়ে খেলছেন ইমাদ ওয়াসিম। ওয়েলসের সোয়ানসিতে জন্ম নেওয়া এই স্পিনার এখন পাকিস্তান দলের নিয়মিত মুখ। ১৯৯৮ সালে জন্ম নেওয়া ইমাদ ২০০৭ সাল থেকে খেলছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে ঝালিয়ে ২০১৫ সাল থেকে খেলছেন পাকস্তানের হয়ে।
খুব ছোটবেলায় পাকিস্তানে চলে আসা ইমাদ ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নেওয়ার আগে পড়ছিলেন মেডিসিন (এমবিবিএস) নিয়ে। কিন্তু পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পাওয়ার পর বদলে যায় তার মন। সেই থেকে ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকা ইমাদ এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের হয়ে ৩০ ওয়ানডে ও ২৫ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন।
সীমিত ওভার ক্রিকেটে ডেথ ওভারে ভীষণ কার্যকরী বোলার ক্রিস জর্ডান। ইংল্যান্ডের জার্সিতে আন্তর্জাতিক আঙিনায় খেললেও এই পেসারের জন্ম কিন্তু বার্বাডোসে। ১৯৮৮ সালে জন্ম নেওয়া জর্ডানের আন্তর্জাতিক অভিষেক ২০১৩ সালে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জার্সিতে অভিষেক হওয়ার পর তার টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট অভিষেক পরের বছর।
জন্ম জ্যামাইকার কিংস্ট্রনে, তবে ডেভন ম্যালকন খেলেছেন ইংল্যান্ডের জার্সিতে। ম্যালকন তার সময়ের অন্যতম সেরা পেসার ছিলেন। আর তার বোলিংয়ের সেরা মুহূর্ত ক্রিকেট বিশ্ব উপভোগ করেছে ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
১৯৮৯ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড ক্যারিয়ারে ৪০ টেস্ট ও ১০ ওয়ানডে খেলেছেন এই পেসার। যেখানে সব মিলিয়ে তার উইকেট ১৪৪টি। ম্যালকমের টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা পারফরম্যান্স দেখা গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওভাল টেস্টে, যেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৭ রান খরচায় ৯ উইকেট তুলে নিয়ে তিনি ইংল্যান্ডকে এনে দিয়েছিলেন ৮ উইকেটের জয়।
সীমিত ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম পছন্দের বোলার ইমরান তাহির। প্রোটিয়াদের জার্সিতে মাঠ মাতালেও ১৯৭৯ সালে এই স্পিনারের জন্ম পাকিস্তানের লাহোরে। তিনি কিন্তু ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন পাকিস্তানেই, এমনকি জন্মস্থানের হয়ে খেলেছেন ১৯৯৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও। তবে পরে পাড়ি জমান দক্ষিণ আফ্রিকায়।
৩৯ বছর বয়সী তাহিরের দক্ষিণ আফ্রিকা দলে অভিষেক ২০১১ সালে, ওয়ানডে দিয়ে। এখন পর্যন্ত ৮৫ ওয়ানডেতে এই স্পিনারের শিকার ১৩৯ উইকেট, ৩৬ টি-টোয়েন্টিতে পেয়েছেন ৫৭ উইকেট। টেস্টে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও ২০ ম্যাচে নিয়েছেন ৫৭ উইকেট।