এমন ছন্নছাড়া ব্যাটিং আর দেখতে চাই না

গাজী আশরাফ হোসেন লিপুপ্রথম ইনিংসের চরম লজ্জাজনক ব্যাটিংয়ের ঘোরে আবর্তিত ব্যর্থ ব্যাটসম্যানরা যথার্থ সাহায্যের হাতটুকু বাড়াতে পারল না ফিল্ডিংয়েও। নুরুল হাসান সোহান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহরা একাধারে ক্যাচ ফেলেছেন। তবে ক্লোজিং পজিশনে লিটন দাসের ধরা দৃষ্টিনন্দন তিনটি ক্যাচই ছিল স্পিন বোলিং ডিপার্টমেন্টের জন্য প্রেরণা। আবু জায়েদ রাহীকে অন্য প্রান্ত থেকে রুবেল বা কামরুল ইসলাম রাব্বি যথার্থ সমর্থন দিতে পারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হয়তো আরও আগেই অলআউট করা যেত এবং সেই সঙ্গে টেস্ট ম্যাচটির সমাপ্তিও হয়তো দ্বিতীয় দিনেই হয়ে যেত।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের গোছালো ব্যাটিং দেখে এবং নিজেদের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ের পর্যালোচনা করে দ্বিতীয় ইনিংসে এক লড়াকু বাংলাদেশকে দেখব বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। উইকেটে ঘাস থাকলেও প্রথম দিনের সকালের আর্দ্রতা ছিল না। প্রতিপক্ষের শিবিরে প্রথম ইনিংসে ৫ ওভারে ৫ উইকেট তুলে নেওয়া কেমার রোচ আহত। দ্বিতীয় ইনিংসের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল প্রতিপক্ষের বোলারদের সুইংকে পরখ করে খেলা ও শক্ত নতুন বলের বাড়তি বাউন্সের বিপক্ষে বল ছেড়ে দেওয়া এবং নিজেদের ডিফেন্সের কৌশল প্রয়োগ করে পিচে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করা।

তামিম ইকবালকে শুরু থেকেই আস্থাশীল মনে হয়নি। খুব সামান্য নিচু হওয়া বলে মুমিনুল হক সামনের পায়ে খেলার চেষ্টা না করে তার ভক্তদের ভীষণ হতাশ করেছেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দলনায়কের ব্যাটিং ছিল সম্ভবত সবচেয়ে পীড়াদায়ক। মুশফিক বিগত কয়েক বছর জুড়ে একই জায়গায় বোল্ড বা এলবিডাব্লিউ হয়েছেন বহুবার। এই দুর্বলতা দ্রুত ঠিক করতে না পারলে তা দলের জন্য এক অশুভ বার্তা।

বাংলাদেশের এই ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ের রূপকার নিঃসন্দেহে প্রতিপক্ষের বোলার ও উইকেট কিপার থেকে গালি অঞ্চলের ফিল্ডারদের চমৎকার ক্যাচিংয়ের সমন্বয়। আমাদের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা সিম বোলিং বান্ধব পিচে এখনও যে কী পরিমাণ পিছিয়ে, সেটা গত দুই দিনে দুইবার পরিলক্ষিত হলো। ব্যাটিংয়ের স্কিলের উন্নতির কোনও শেষ নেই। আর সীমিত স্কিল থাকলেও ভালো টেম্পারমেন্টের প্রয়োগের মাঝেও যে রান করা যায় সেটা আমরা ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের ব্যাটিংয়ে লক্ষ্য করলাম।

কিছু দিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সফর করেছে শ্রীলঙ্কা। প্রথম টেস্টে শ্রীলঙ্কানদেরও বেহাল অবস্থা ছিল এবং বারবাডোজের শেষ টেস্টের কিছু আউটের দৃশ্য গত দুই দিন অনেকবার দেখিয়েছে, আপনারাও অনেকে দেখেছেন। আমার ধারণা,  মূলত বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বা সদ্য নিয়োগ পাওয়া কোচ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য নিজেদের যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে পারেননি। অথবা আমাদের ব্যাটসম্যানরা তাদের মেধার ওপর অতি মাত্রায় আত্মবিশ্বাসী ছিল, কিন্তু ম্যাচের বাস্তবতা সূচের মতো বিঁধছে সকল সমর্থকের গায়ে। তৃতীয় দিনের নামাটা এখন শুধুই একটা আনুষ্ঠানিকতা।