শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফেরার অনুরোধ সাকিবের

shakibরাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় আর সবার মতো সাকিব আল হাসানও মর্মাহত। ওই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘নিরাপদ সড়ক’ নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তিনি গর্বিতও। তবে আপাতত রাজপথ থেকে সরে তাদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।

টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ দল এখন ফ্লোরিডায়। কুড়ি ওভারের সিরিজের প্রথম ম্যাচ হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যস্ত সময় পার করলেও দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজপথে নামা ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের খোঁজ-খবর নিয়মিত রাখছেন সাকিব। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তিনি গর্বিত। তবে এখন রাজপথ থেকে ঘরে ফেরার অনুরোধ করেছেন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় দেওয়া পোস্টের শুরুটা করেছেন সাকিব এভাবে, ‘আমি এখন ফ্লোরিডায় আছি। আজ (শুক্রবার) এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমার তরুণ ফ্যানদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাই।’ এরপর লিখেছেন, ‘গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই স্কুল (আসলে কলেজ) শিক্ষার্থী দিয়া ও আব্দুল করিম নিহত হওয়ার ঘটনায় আমি প্রচণ্ড মর্মাহত ছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম তাদের সহপাঠী থেকে শুরু করে সারাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা দোষীদের শাস্তি দাবি ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে, তখন গর্ববোধ করেছি বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে। দেশে থাকলে আমিই তোমাদের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য চলে আসতাম।’

সাকিবের পোস্টআন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রশংসার জোয়ারে ভাসিয়ে পোস্টের পরের অংশে লিখেছেন, ‘তোমাদের সাধুবাদ জানিয়ে বলতে চাই, তোমাদের দাবি কার্যকর হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ছাড়াও নিরাপদ সড়ক আইন করতে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অবস্থায় তোমাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করবো, ক্লাসে ফিরে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে। তোমরা যা করেছো, তা এদেশে ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ অর্জন সফল হবে তোমাদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে।’

দাবি পূরণ না হলে নিজে আন্দোলনে নামার অঙ্গীকারও দিয়ে রেখেছেন সাকিব পোস্টের শেষ অংশে, ‘তোমাদের দাবি পূরণ হয়েছে এবং হচ্ছে। ব‍্যত‍্যয় ঘটলে আমাকে পাবে তোমাদের সঙ্গে।’

প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে (র‌্যাডিসন হোটেলের উল্টো দিকে) বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর সড়কের বাঁ-পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলো দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। পথচারীরা সঙ্গে সঙ্গে আহতদের নিকটস্থ কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে গুরুতর আহত কয়েকজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা জাবালে নূর পরিবহনের ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় ও শতাধিক বাস ভাঙচুর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এ ঘটনায়  সংশ্লিষ্ট চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ ও নৌপরিবহনমন্ত্রীর অনৈতিক বক্তব্যের প্রতিবাদসহ ৯ দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। গত পাঁচ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা রাজধানীর সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। বুধবার (১ আগস্ট) বিকালে বাস মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে  শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। একই দিন সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) রাজধানী সহ সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণার কথা জানানো হয়। ছুটি ঘোষণার পর বৃহস্পতিবারও তারা আন্দোলন করে। শুক্রবারও (৩ আগস্ট) তারা আন্দোলন করছে।