‘তবুও তো আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে’


বিমানবন্দরে মেহেদী হাসান মিরাজদেশে ফেরার বিমানে উঠেও ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার আতঙ্ক মুছে যায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের 
মন থেকে। এমনকি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেও খেলোয়াড়দের চোখেমুখে ছিল মানসিক আঘাতের ছাপ। চোখের সামনে রক্তাক্ত মানুষের ছোটাছুটি, আর জীবন হারানোর ভয় কি এত সহজে ভোলা সম্ভব! এবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্রাইস্টচার্চের দুঃস্বপ্ন ভুলে যেতে চান মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকরা।

ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের সবাই একসঙ্গে ফিরলেও সংবাদ সম্মেলনে শুধু এলেন দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও টিম ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলট। খুব বেশি কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় ছিলেন না মাহমুদউল্লাহ।

সবার আগে বিমানবন্দর ছেড়েছেন তামিম ইকবাল। নিজের গাড়িতে ওঠার আগে এক পলকের জন্য দেখা গেছে তাকে, বোঝাই যাচ্ছিল গত দুইদিনে কী ঝড়টাই না গেছে তার উপর দিয়ে। ততক্ষণে মাহমুদউল্লাহ সংবাদ মাধ্যমে কথা শেষ করেছেন। আরেকটু আগে মসজিদে গেলে কী হতে পারতো, সেটা ভাবতেই আবারও শিউরে উঠেলেন তিনি। জীবন নিয়ে ফিরতে পেরে নিজেদের ভাগ্যবান বলেছেন অধিনায়ক।

সাংবাদিকদের কাছে স্বস্তি প্রকাশ করেন মুশফিকের বাবাসবার থেকে মুশফিকুর রহিম বেশি মুষড়ে পড়েছেন। ঘটনার পর থেকে হতভম্ব বাংলাদেশের সেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ঘটনার পর বাস থেকে নেমে পার্কের মধ্য দিয়ে হ্যাগলি ওভালে দৌড়ে ওভাবে পালানোর মুহূর্তটা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তিনি। চোখ বন্ধ করলেই যেন সেই দু:স্বপ্ন তারা করে ফিরছে মুশফিককে। গাড়িতে ওঠার আগে বলছেন, ‘আপনাদের দোয়াতে ভালো আছি। দোয়া করবেন।’

মুশফিকের বাবা মাহবুব হানিফ ছেলেকে নিতে বিমানবন্দরে এসেছিলেন। শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলার পর মুশফিকের পরিবার দুই চোখের পাতা এক করতে পারেননি। গোটা দলের দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কেটেছে তাদের। ছেলেদের কাছে পেয়ে বুক থেকে যেন অনেক বড় পাথর নেমে গেছে তার, 'ঘটনার পর থেকে প্রতিটি মুহূর্ত অস্বস্তিতে কাটিয়েছি। আমরা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। মুশফিক তো ফোন করেই কান্নাকাটি করেছে। ওতো এমনিতেই নরম মনের, তাই এমন পরিস্থিতে ভেঙে পড়েছে। আজকে দেখে একটু স্বাভাবিক মনে হয়েছে। আমাদের ছেলেদের কারও মনের অবস্থাই ভালো নয়। সবাইকে কাছে পেয়ে বুকে টেনে নিয়েছি। এই মুহূর্তে আমার চেয়ে সুখী কেউ নেই।'

উৎসুক সমর্থকদের ভিড়ে রাহী ও এবাদতমিরাজ, লিটন ও মোস্তাফিজদের চোখগুলো যেন স্বস্তি খুঁজে পেলো দেশের মাটিতে পা ফেলেই। মিরাজ বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সবার দোয়াতে বেঁচে গেছি আমরা। হয়তো এত সহজে এই ঘটনা ভুলবো না। তবুও তো আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে। অন্তত কিছুদিন তো সময় লাগবে স্বাভাবিক হতে।'

ক্রাইস্টচার্চে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফেরা ক্রিকেটারদের জন্য রাত ১০টা থেকেই বিমান বন্দরে লম্বা লাইন সাংবাদিকদের। এত সাংবাদিক ছিল যে, পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। যদি ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর বিমানবন্দরেও কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। সবকিছু ছাপিয়ে জয় হয়েছে আবেগেরই।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন ও রবিউল ইসলাম