তদন্ত আরও জোরদার করা হলে দেখা যায়, সঞ্জীবের সঙ্গে কথা বলা ওই বিদেশি আর কেউ নন, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রনিয়ে। ফোনে আড়ি পেতে জুয়াড়ির সঙ্গে তার কথোপকথন রেকর্ড করে ছেড়ে দেয় দিল্লি পুলিশ। একটি অপহরণ মামলার তদন্ত করতে গিয়েই ফাঁস হয় ম্যাচ পাতানোর ঘটনা, যেটি নতুন শতাব্দীর শুরুতে টালমাটাল করে দিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকে।
তদন্তের শুরুতে সঞ্জীবের ফোনে আড়ি পেতে অপরাধ দমন শাখা একটি কথোপকথনে তাকে বলতে শোনে, ‘আমার রুমে আসবে অধিনায়ক।’ কোন অধিনায়কের কথা বলা হচ্ছে, সেটা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে শিগগিরই জানতে পারে, ২০০০ সালের ১৪ মার্চ দিল্লির এক পাঁচতারকা হোটেলের ৩৪৬ নম্বর রুমে সঞ্জীব একটি মিটিং করবেন। হোটেলের নথিপত্র খুঁজে দেখা যায়, ক্রনিয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে তার। এতেই সন্দেহ জাগে, অর্থের বিনিময়ে ম্যাচ পাতাতে যাচ্ছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক!
প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে অনিল কুম্বলের বলে কোনও রান না করেই আউট হন ক্রনিয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ইচ্ছা করেই রান আউট হন। বিনিময়ে পান মূল্যবান সব উপহার। এ ঘটনায় একটি এফআইআর করে পুলিশ। এসব অভিযোগ শুরুতে অস্বীকার করলেও পরে ক্রনিয়ে স্বীকার করেন অর্থের বিনিময়ে ম্যাচ পাতিয়েছেন। অক্টোবরে সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হন তিনি। তদন্ত চলাকালে ২০০২ সালে আকস্মিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন ক্রনিয়ে। তিন বছর পর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান সঞ্জীব।
ঝিমিয়ে পড়া তদন্তটি আবার নতুন করে সামনে উঠে আসে ২০১৩ সালে আইপিএলের স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠলে। তখনকার পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার বৃহস্পতিবার বলেছেন, আইপিএল তদন্তের সময় একটি সংবাদ সংস্থা জানায় যে ওই মামলার চার্জশিটই দেয়নি পুলিশ। এরপরই ২০১৬ সালে শুরু হয় ক্রনিয়েকে দিয়ে ম্যাচ গড়াপেটা করানোর মূল হোতা সঞ্জীবকে ফেরানোর কার্যক্রম।
১৯৯২ সালে ভারত-যুক্তরাজ্য বন্দি-প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় বিচার প্রক্রিয়া চালাতে সঞ্জীবকে গত বৃহস্পতিবার দেশে ফেরায় পুলিশ। আদালত তাকে ১২ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার অনুমতি দিয়েছেন। জানা গেছে, ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের দুর্নীতি দমন ইউনিটও সঞ্জীবের সঙ্গে কথা বলবে। এ ব্যাপারে দিল্লি পুলিশের অনুমতি চেয়েছে তারা।