গত বছরের অক্টোবরে আইসিসির বোর্ডে ওঠা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে এখন। সামনের মার্চের সভায় আসতে পারে চূড়ান্ত ঘোষণা। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর বোর্ড হিসেবে বিবেচিত বিসিসিআইয়ের এই পরিকল্পনায় মোটেও সায় নেই।
আইসিসির নতুন দুটি টুর্নামেন্ট কী? ৫০ ওভারের ‘চ্যাম্পিয়নস কাপ’ হবে আগের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আদলে। তবে দল থাকবে ৬টি। ১৬ ম্যাচের প্রতিযোগিতাটি আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২৫ ও ২০২৯ সালে। আর টি-টোয়েন্টি ‘চ্যাম্পিয়নস কাপ’ খেলবে শীর্ষ ১০ দল। ম্যাচ সংখ্যা ৪৮, যা কিনা এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চেয়েও বেশি। আর এটি আয়োজনের পরিকল্পনা ২০২৪ ও ২০২৮ সালে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির নতুন প্রতিযোগিতার সঙ্গে ২০২৬ ও ২০৩০ সালে রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৭ ও ২০৩১ সালে হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ।
গত বছরের অক্টোবরে আলোচনা শুরু হওয়া নতুন দুই প্রতিযোগিতা নিয়ে যুক্তি-তর্ক চলছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থাকার পরও একই সংস্করণের প্রায় একই ধাঁচের প্রতিযোগিতা আয়োজন কতটা যৌক্তিক? এও বলা হচ্ছে, প্রত্যেক বছর প্রতিযোগিতা থাকলে বিশ্বকাপ জেতার অনুভূতি কী আগের মতো থাকবে?
আইসিসির প্রধান নির্বাহী মানু সনি কিন্তু ইতিবাচক দিকই দেখছেন। তার দাবি, বেশি প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে সহযোগী দেশগুলোর উন্নয়নে বেশি করে সাহায্য করা যাবে। এই জায়গাতেই আপত্তি ধনী ক্রিকেট বোর্ডগুলোর। প্রত্যেক বছর আইসিসির টুর্নামেন্ট থাকলে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তাদের। আর সেটি হওয়ারই কথা। এত ব্যস্ত সূচির মধ্যে দ্বিপাক্ষিকর সিরিজের সময় বের করা কঠিন।
‘বিগ থ্রি’ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড নিজেদের মধ্যে সিরিজ আয়োজন করে আয় করে মোটা অঙ্কের অর্থ। ‘ছোট’ দেশগুলোর সঙ্গে সিরিজ আয়োজনের খুব একটা আগ্রহও দেখায় না তারা। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালুর পর এমনিতেই তাদের সব দেশের সঙ্গে খেলা ‘বাধ্যতামূলক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন যদি নতুন দুটি টুর্নামেন্ট যোগ হয়, তাহলে আর্থিক দিক থেকে আরও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে তারা।
বিসিসিআই খুব ভালো করে বুঝতে পারছে বিষয়টি। তাই আইসিসির নতুন প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। বিসিসিআইয়ের এক কর্তা ক্রিকইনফোকে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের জায়গায় পরিষ্কার। যদি গুরুত্বপূর্ণ বোর্ডগুলো তাদের মতামত উপস্থাপন করতে না পারে, তাহলে... আইসিসির টুর্নামেন্ট কি এমনি এমনি হয়ে যাবে? প্রত্যেক বছর টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা বিশ্ব ক্রিকেটে কাজ করবে না। আইসিসিকে বিষয়টি বুঝতে হবে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটার প্রভাব পড়বে আইপিএল, বিগ ব্যাশ ও অন্যান্য প্রতিযোগিতার ওপর। কোনও জায়গাই তো থাকবে না খেলার। তাছাড়া খেলোয়াড়রা কত খেলতে পারবে?’
নতুন প্রস্তাব আমলে নিয়ে আইসিসি এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করেছে টুর্নামেন্ট আয়োজনে আগ্রহী দেশগুলোর কাছ থেকে। তাছাড়া আইসিসির প্রধান নির্বাহী মানু সনি নিজে গিয়েছেন সদস্য ও সহযোগী দেশগুলোতে। বাংলাদেশেও এসেছিলেন তিনি। ২০২৩ থেকে ২০৩১ সালের চক্রে ২০ টুর্নামেন্ট আয়োজনের বিষয়টি বুঝিয়ে গেছেন। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জিম্বাবুয়ে, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ প্রায় সব বড় দেশগুলোতেই গিয়েছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী। যাননি শুধু ভারতে!
বিসিসিআইয়ের আপত্তির পরও যে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তাদের পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তার প্রমাণ এখানেই মেলে। ভারতের ক্ষুব্ধ হওয়াটাই তো স্বাভাবিক!