মুশফিকের ‘বিসর্জনে’ আশরাফুলের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস

২০০৭ বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে আশরাফুল খেলেছিলেন ম্যাচ জেতানো ৮৭ রানের ইনিংসআব্দুর রাজ্জাকের বলে মাখায়া এনটিনির ক্যাচ মাশরাফি মুর্তজা নিতেই উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশের সমর্থকরা। এই উল্লাসের সুবাস সুদূর গায়না থেকে ভেসে আসে বাংলাদেশেও। বিশ্ব মঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো বলে কথা! বর্তমান সময়ের কথা চিন্তা করলে হয়তো এই প্রাপ্তির আনন্দ ঠিক বোঝা যাবে না। ক্রিকেট বিশ্বে ‘বড়’ হতে থাকা সে সময়ের বাংলাদেশের কাছে এই অর্জন ছিল এককথায় অসাধারণ।

২০০৭ বিশ্বকাপের শুরুটাই আসলে বাংলাদেশের হয়েছিল স্বপ্নের মতো। ফেবারিট ভারতকে হারিয়ে শুরু, এরপর বারমুডাকে উড়িয়ে সুপার এইটে জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এই পর্বের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কাছে হারায় বাংলাদেশকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল বিদেশি মিডিয়ায়। তবে সমালোচনার জবাবটা হাবিবুল বাশাররা দিতে চেয়েছিলেন মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই। যেটি তারা করে দেখায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে।

এতদিন পর ওই ম্যাচ নিয়ে আলোচনার কারণ কী? কারণ অবশ্যই আছে। ১৩ বছর আগে আজকের দিনেই (৭ এপ্রিল) ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে ওয়ানডের শীর্ষ দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে সুপার এইটে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে টস হেরে মোহাম্মদ আশরাফুলের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ২৫১ রান স্কোরবোর্ডে জমা করেছিল বাংলাদেশ। এরপর স্পিনত্রয়ী সাকিব আল হাসান, আব্দুর রাজ্জাক ও মোহাম্মদ রফিক এবং পেসার সৈয়দ রাসেলের চমৎকার বোলিংয়ের সামনে ১৮৪ রানে অলআউট হয়ে যায় প্রোটিয়ারা।

স্মরণীয় ওই জয়ের ১৩ বছর পূর্তির দিনে স্মৃতিকাতর হয়ে উঠলেন ৮৩ বলে ৮৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা আশরাফুল, “ওই সময় দক্ষিণ আফ্রিকা র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর ছিল। এই ম্যাচের আগে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ১৭৪ ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ১০৪ রানে অলআউট হওয়ার পর আমাদের নিয়ে নানা কথা-বার্তা হচ্ছিল। অনেকেই বলছিল, ‘বাংলাদেশ খামোখা সুপার এইটে উঠছে।’ সবার বাজে মন্তব্য শুনে আমাদের কিছু একটা করার তাড়না ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে প্রথমবার হারানোর অনুভূতি সত্যিই ভুলবার নয়।”

তবে শুরুতে ঠিকই শঙ্কা জেগেছিল বাংলাদেশের। স্কোরবোর্ডে ৮৪ রান তুলতেই নেই ৪ উইকেট। কিন্তু আশরাফুলের দায়িত্বশীল ইনিংস বিপদ থেকে উদ্ধার করে বাংলাদেশকে। পঞ্চম উইকেটে আফতাব আহমেদের সঙ্গে ৭৬ ও সপ্তম উইকেটে মাশরাফির সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি গড়ে দলের স্কোরকে ২৫১-তে নিয়ে যান তিনি। ৮৭ রান করতে মেরেছিলেন ১২ বাউন্ডারি।

আশরাফুল বলছেন, চমৎকার এই ইনিংসে ভূমিকা আছে মুশফিকুর রহিমের। সেটা কিভাবে? আশরাফুলের ব্যাখ্যা, ‘ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতে আমরা ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলি। আফতাবের সঙ্গে শুরুতে একটা জুটির পর মাশরাফির সঙ্গে ছোটখাটো জুটিতে আমরা মোটামুটি ভালো একটা সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিলাম। তবে বড় সুযোগটা করে দিল মুশফিকই! ১ রান নিতে গিয়ে মুশফিক থেমে যায়। নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আমাকে রানআউট থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল মুশফিক। এমন ঘটনার পর নিশ্চিতভাবেই আমার দায়িত্ব দলের স্কোরকে বড় করা। ওভাবেই চেষ্টা করে সফল হয়েছি।’

কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি আছে। এর বাইরে আরও দুটি সেঞ্চুরি আছে তার। এরপরও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই ইনিংসটিকেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা হিসেবে দেখেন আশরাফুল, ‘আমি মনে করি এটা আমার ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা ইনিংস। অনেক ভালো ভালো ইনিংস আছে, সেঞ্চুরিও আছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই ইনিংসটি আমার ক্যারিয়ারসেরা।’

কেন? সেই ব্যাখ্যাও দিলেন আশরাফুল, ‘অনেক সময় অনেক ব্যাটসম্যান রান করেও সন্তুষ্ট হতে পারে না। কিন্তু আবার কম রান করেও সন্তুষ্ট হয়। ওই ম্যাচে আমি যেভাবে শটস খেলতে চেয়েছি, সেভাবে খেলতে পেরেছি। দারুণ সব টাইমিং হয়েছে। যত চার মেরেছি, সবই ব্যাটের মাঝখানে লেগেছে। ক্যারিয়ারে একটা ইনিংস বাছতে বললে আমি এই ইনিংসটাকেই বেছে নেবো।’