নতুনরা যেন আমার মতো ভুল না করে: তাসকিন

তাসকিন আহমেদঅভিষেকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে রাতারাতি তারকা বনে যান তাসকিন আহমেদ। এই সাফল্যের সঙ্গে খ্যাতি মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল তার! যার ফলে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। গত কিছুদিন নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠা ইনজুরির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন ক্যারিয়ার গোছানোর। ছোট্ট এই ক্যারিয়ারে অনেক বাঁকবদলের পর ডানহাতি পেসারের উপলব্দি­- নতুন ক্রিকেটাররা যেন তার মতো ভুল না করে।

২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে শুরু তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত। ভারতের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে নিজের প্রতিভার জানান দেন তাসকিন। ওই পারফরম্যান্স সঙ্গী করে ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপে তিনিই ছিলেন দলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। পরের বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দারুণ ছন্দময় বোলিং করেছেন। কিন্তু ওই বিশ্বকাপে বোলিং অ্যাকশনের খড়গে ছিটকে চান টুর্নামেন্ট থেকে। অ্যাকশন শুধরে মাঠে ফিরলেও আগের তাসকিনকে আর দেখা যায়নি।

এই পেসার ও রুবেল হোসেনের সঙ্গে শুক্রবার রাতে ফেসবুক আড্ডায় বসেছিলেন তামিম। সেখানেই উঠে আসে তাসকিনের ক্যারিয়ার-প্রসঙ্গ। ২৫ বছর বয়সী তরুণ পেসার শোনালেন নিজের ভুলে ভরা জীবনের গল্প। শুরুটা করলেন এভাবে, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বছরটি আমার খুবই ভালো গেছে। যখন, যেখানে খেলেছি ভালো খেলেছি। যেখানেই যেতাম, সবাই ছবি তুলতো, অনেক মানুষের ভিড় লেগে যেত। এক বছর হতে না হতেই বিশ্বকাপ খেললাম। বিশ্বকাপের আগে ও পরে মিলিয়ে অনেক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করার সুযোগ পেলাম। অন্যরকম একটা সময়। মাঠে নামলেই ভালো খেলছি। কখনোই মাথায় আসেনি খারাপ সময় কিংবা ইনজুরি আসতে পারে।’

তাসকিন জানালেন, প্রথম দুই বছর সিরিয়াস থাকলেও তৃতীয় বছরে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন, ‘প্রথম দুই বছর খুব সিরিয়াস ছিলাম। তৃতীয় বছরে যখন মাথায় ঢুকে গেল ভালোই খেলছি, বল করলে উইকেট পাই, দলে জায়গা পাকাপোক্ত, তখন আস্তে আস্তে নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া কমিয়ে দিলাম। জীবন মানে একটু বিশৃঙ্খল হয়েছে। পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ার পাশাপাশি ইনজুরিতে পড়লাম এবং দল থেকে বাদ পড়লাম।’

জীবনের কঠিন বাস্তবতা উপলব্ধি করে এখন নিজের পারফরম্যান্স উন্নতি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যচ্ছেন তাসকিন, ‘গত দুই বছরে দুইবার ওয়ানডে স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছি, টেস্টে চারবার, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাইনি। ইনজুরি ও নানা রকম পরিস্থিতির কারণেই সুযোগ পাইনি। আমাকে আরও উন্নতি করতে হবে অবশ্যই। চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য তার পরামর্শ, ‘আমি যেটি বুঝতে পেরেছি, ভবিষ্যতে যারাই ক্যারিয়ারের শুরুতে তারকা হয়ে যাবে, তাদের ফোকাস ধরে রাখা কঠিন হবে। নতুন তারকা যারা আছে, ওরা যেন এই ভুল কখনও না করে। ২-৩ বছর দারুণ পারফরম্যান্স করার পর সিরিয়াসনেস যেন আরও বাড়ে। পারলে নতুন অস্ত্র যোগ করতে হবে, ফিটনেস লেভেল বাড়াতে হবে।’

দ্রুত উপলব্দি করতে পেরেছেন বলে নিজেকে ভাগ্যবানও মনে করেন তাসকিন, ‘আমি বলব যে দ্রুতই শিক্ষা পেয়েছি। আশা করি, সিরিয়াস থাকব। আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনে আর কখনও কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে আপোষ করব না। জানি না পারফরম্যান্স কেমন হবে বা কালকে কেমন খেলব, কিন্তু যতদিন খেলব, ডিসিপ্লিনড থাকব ও পরিশ্রম করে যাব।’