সিডনি ক্রিকেট ক্লাবটি এনএসডব্লিউ উইমেন্স প্রিমিয়ার ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় তিনটি দল পরিচালনা করে। যার ফাস্ট গ্রেডের দলটিতে খেলছেন বাংলাদেশের জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা।
২০১৬ সালের আগস্টে আয়ারল্যান্ড সফরে প্রথমবার জাতীয় দলে সুযোগ হয় সুমনার। তবে অভিষেকের জন্য অপেক্ষা করতে প্রায় দুই বছর। ২০১৮ সালের মার্চে ২০ বছর বয়সী অলরাউন্ডার আন্তজার্তিক অঙ্গনে পা রাখেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পচেফস্ট্রুমে। ওই সফরে দুটি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলেই থেমে যায় সুমনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার! স্পিনিং অলরাউন্ডার হলেও তিন ম্যাচের কোনোটিতেই বল হাতে দেখা যায়নি তাকে।
একে জাতীয় দলে জায়গা হারালেন, এর ওপর আবার ঘরোয়া ক্রিকেটও বন্ধ, ঠিক তখনই সিডনি ক্রিকেট ক্লাব থেকে প্রস্তাব আসে সুমনার কাছে। সুবর্ণ সুযোগটা লুফে নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি তিনি। মঙ্গলবার রাতে মুঠোফোনে অস্ট্রেলিয়া থেকে সেই গল্প শোনালেন সুমনা নিজেই, ‘আমি তখন জাতীয় দলের বাইরে ছিলাম। ওই সময় সিডনি ক্রিকেট ক্লাব থেকে আমার কাছে অফার আসে, ক্লাবের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী কিনা? তখন বাংলাদেশেও ঘরোয়া ক্রিকেটের অফসিজন চলছিল। যেহেতু কোথাও সুযোগ হচ্ছে না, তাই আমি তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেই।’
২০১৯ সালের শুরুর দিকে প্রস্তাব এলেও সুমনা অস্ট্রেলিয়া যান অক্টোবরে। যেতে দেরি হলেও মৌসুম ধরতে সমস্যা হয়নি তার, ‘২০১৯ সালের অক্টোবরে আমি খেলতে যাই। ২০১৯ সালের শুরুর দিকেই আমার কাছে অফার আসে। ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কিছুটা দেরি হয়। এছাড়া আমার এইচএসসি পরীক্ষাও চলছিল। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মৌসুম শুরু হয়, সেটা আমি ধরতে পেরেছি।’
বাংলাদেশ দলের জার্সিতে ‘আসল’ পরীক্ষা দেওয়া হয়নি সুমনার। তবে সিডনি ক্লাবে ব্যাট-বলে নিজেকে চিনিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজের পারফরম্যান্স বলতে গিয়ে অতীতে ফিরে গেলেন সুমনা, জানালেন জাতীয় দলের সুযোগ না পাওয়ার হতাশা কথা, ‘আমি মূলত অফস্পিনিং অলরাউন্ডার। জাতীয় দলে খেললেও বোলিং করার সুযোগ হয়নি। দুই ম্যাচে ব্যাটিং করেই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে যাই। এ নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ আছে আমার। আমি আমার আসল কাজটাই করে দেখাতে পারিনি। সিডনি ক্লাবে এই মৌসুমে ১২ ম্যাচ খেলে ১৯ উইকেট নিয়েছি। পুরো টুর্নামেন্টে বোলার হিসেবে আমি সেরা দশে ছিলাম। ব্যাটিংয়ে আমাদের দলের মধ্যে আমার রান তৃতীয় সর্বোচ্চ। ১২ ম্যাচে ২০০ প্লাস রান করেছিলাম।’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় হয়েছে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সালমা-জাহানারাদের খেলা মাঠে বসে দেখেছেন সুমনা। তবে কন্ডিশনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুবাদে সুমনা চেয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের অংশ হতে। কিন্তু এ ব্যাপারে টিম ম্যানেজমেন্টে থেকে কেউই তার কথা শোনেননি।
‘বিশ্বকাপের আগে আমি আমাদের কোচকে বলেছিলাম, আমি এই কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে ফেলেছি। আমাকে একটু দেখবেন? উনি বলেছিলেন, এখন আর কোনও সুযোগ নেই। সম্ভবত তখন দল ঘোষণা হয়েছিল। তারপরও বলেছিলাম, কোনোভাবে কি আমি দলের অংশ হতে পারি? যেহেতু অস্ট্রেলিয়াতে ক্যাম্পও করেছিল বাংলাদেশ দল। ৬-৭ মাস ধরে এখানে খেলার কারণে কন্ডিশন সম্পর্কে আমার ধারণা পরিষ্কার ছিল। আমি হয়তো কোনও না কোনও ব্যাপারে সাহায্য করতে পারতাম। কিন্তু টিম থেকে কোনও রেসপন্স পাইনি। এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও কেউ কোনও পরামর্শ নেয়নি।’- আক্ষেপ ভরা কণ্ঠে জানালেন সুমনা।
প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সিডনি ক্রিকেট ক্লাব। তাদের ওয়েবসাইটে দলটির গ্রুপ ছবিতে আছেন সুমনাও। ক্লাবের অন্য বিদেশিদের মতো তিনিও বেশ সম্মান পান, ‘এখানে আমি বেশ আনন্দেই আছি। বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে অন্যদের মতো আমাকেও বেশ মর্যাদা দেওয়া হয়। আমাদের কোচ ও ম্যানেজার সবসময় খোঁজ-খবর নেন। সব মিলিয়ে সিডনি ক্রিকেট ক্লাব আমার নতুন পরিবার। এই পরিবারে ভালোই আছি। তবুও মাঝে মাঝে মনটা খারাপ হয়ে যায়। দেশের জার্সিতে মাঠে খেলাটা সত্যিই আমি খুব মিস করি।’