ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করে আলোড়ন তৈরি করা বুলবুল বলেছেন, ‘২০ বছরেও আমরা প্রতিষ্ঠিত টেস্ট দল হতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়। কিছু কিছু ম্যাচ, যেমন মুলতান টেস্ট, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফতুল্লা টেস্ট, ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ভালো করেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারিনি। আবার বেশ কিছু ভালো ম্যাচও আমরা ভালো খেলে জিতেছি। তবে বেশিরভাগ ম্যাচেই আমরা দাঁড়াতে পারিনি। টেস্ট ম্যাচের মেজাজটাই এখনও রপ্ত করতে পারিনি। একুশ বছরে দাঁড়িয়ে আমাদের জন্য এটা সত্যিই শঙ্কার।’
বুলবুল মনে করেন, টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে বোর্ডের সুনির্দিষ্ট কোনও লক্ষ্য নেই। এই কারনেই এই সংস্করণে বাংলাদেশ সাফল্য পাচ্ছে কম, ‘টেস্ট ক্রিকেটে আমরা ২০ বছর পরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে চাই, সেই লক্ষ্য আমাদের ছিল না। ফলশ্রুতিতে আমরা এখনও কোথাও দাঁড়াতে পারিনি। এখনও আমরা কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও হারলাম। ভারত ও পাকিস্তানে গিয়ে হারলাম। একটা হারের বৃত্তের মধ্যেই আমরা আছি। আশা করি করোনাকাল শেষেই বোর্ড এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবে।’
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার পেছনে আরেক সাবেক অধিনায়ক পাইলট কেবল খেলোয়াড়দের দোষ দিতে নারাজ। তার মতে, ক্রিকেটের অবকাঠামোর উন্নয়ন না হলে এই ফরম্যাটে উন্নতি করা কঠিন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্য পেতে হলেও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে। শুধু খেলোয়াড়দের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা চেষ্টা করছে দেশকে কিছু দিতে। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে আমাদের অবকাঠামো যেমন, তাতে করে সত্যিই সাফল্য পাওয়া কঠিন। একজন পেসার জাতীয় লিগ কিংবা বিসিএলে কত ওভার বোলিং করে? ওখানে বোলিং করতে না পারার কারণে আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগে পেসাররা। ফলে জাতীয় দলে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে পারে না।’
ব্যক্তিগতভাবে অনেক ক্রিকেটার সাফল্য পেলেও দলীয়ভাবে টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্য খুব বেশি নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সাফল্য আসলেও সেটা প্রত্যাশিত নয়। পাইলট মনে করেন, ‘২০ বছরে আরও ভালো জায়গায় অবস্থান করা উচিত ছিল। ব্যক্তিগতভাবে অনেকের ভালো স্কোর আছে, ভালো ভালো অর্জন আছে। ঘরের মাটিতে ভালো কিছু জয় আছে। কিন্তু বিদেশে গিয়ে ওইরকম কিছু নেই। মূলত অবকাঠামোগত উন্নতি না হওয়ায় আমরা পিছিয়ে আছি। এ কারণেই আমরা টেস্টে উন্নতি করতে পারছি না। ক্রিকেটারদের দোষ দেখি না। পারিশ্রমিক তেমন থাকলে ক্রিকেটাররা অবশ্যই লম্বা সংস্করণের ঘরোয়া লিগ খেলতো। খেললেই অনেক টাকা, এটা ভাবনায় কাজ করতো। প্রত্যাশা করি টেস্ট মর্যাদার ২১ বছরে পা দিয়ে ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বোর্ড টেস্ট নিয়ে নতুন করে ভাববে।’
সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল অবশ্য মনে করেন, বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করেছে। তবে তিনি অভাব দেখছেন ধারাবাহিকতার, ‘এই ফরম্যাটে আমাদের উন্নতি যথেষ্ট ভালো। কিন্তু একটাই সমস্যা, আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে পারছি না। এটাই আসলে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। আমরা এখন ভালো টেস্ট দল, টেস্ট ম্যাচ জিতছি। বড় দলকেও হারিয়েছি। তবে এটা সত্য ২০ বছরে যতটা এগোনো দরকার ছিল, আমরা ততটা এগোতে পারিনি। আমাদের আরও উন্নতি করার জায়গা ছিল।’
সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘একটা জিনিস সবাইকে বুঝতে হবে, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড কিংবা ভারত দীর্ঘদিন ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে। আমরা ২০ বছরে তাদের সমান হয়ে যাব, এই ভাবনা ভুল। তবে কোনও সন্দেহ নেই যে আমাদের আরও উন্নতি করা উচিত ছিল।’