‘থ্রি ডব্লিউ’দের শেষ কিংবদন্তি এভারটন উইকসের বিদায়

চলে গেলেন স্যার এভারটন উইকস। ছবি: ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজওয়েস্ট ইন্ডিজের বিখ্যাত ‘থ্রি ডব্লিউজ’-এর শেষ সদস্য হিসেবে বেঁচে ছিলেন স্যার এভারটন উইকস। ৯৫ বছর বয়সে তিনিও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর বুধবার মারা গেছেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন ‘থ্রি ডব্লিউজ’। এই ত্রয়ীর ব্যাটিং শক্তি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটকে নিয়ে যায় অন্য উচ্চতায়। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট তো বটেই, ক্রিকেট বিশ্বেও তারা নিয়ে আছেন আলাদা জায়গা। অন্য দুই ‘ডব্লিউ’- স্যার ক্লাইড ওয়ালকট ও স্যার ফ্রাঙ্ক ওরেল আগেই পৃথিবী ছেড়ে গেছেন। আর শেষ সদস্য হিসেবে চলে গেলেন উইকস।

’৪০-এর দশকের শেষ দিকে টেস্টে পা রেখে ক্রিকেট বিশ্বের চোখে বিস্ময়ের রেণু ছড়িয়েছিলেন উইকস। সঙ্গে ছিলেন অন্য দুই ‘ডব্লিউ’- ওরেল ও ওয়ালকট। এই ‍তিনজনের জীবন-পথ অদ্ভুত এক ‍সুতোয় গাঁথা। ১৯২৪ থেকে ১৯২৬ সালে মাত্র দেড় বছরের মধ্যে বার্বাডোসের দুই মাইলের মধ্যে তাদের জন্য। আরেকটি কাকতালীয় ব্যাপারও আছে, বলা হয়ে থাকে, তিনজন একই ধাত্রীর হাতে জন্ম নিয়েছিলেন। টেস্টেও পা রেখেছিলেন তারা ১৯৪৮ সালে তিন সপ্তাহের মধ্যে।

তিনজনই কাটিয়েছেন অসাধারণ ক্যারিয়ার। দারুণ রেকর্ডে নিজেদের সঙ্গে ক্রিকেটকে করেছেন সমৃদ্ধ। ওরেল ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম দীর্ঘমেয়াদী কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক, পরে হন জ্যামাইকার সিনেটার। অন্যদিকে ৫৬.৬৮ গড় নিয়ে টেস্ট থেকে অবসরে গিয়ে ওয়ালকট প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে বসেন আইসিসির চেয়ারে। তবে তিনজনের মধ্যে সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয় উইকসকেই।

অথচ ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকটা মোটেও সুখকর ছিল না তার। প্রথম তিন টেস্টে ব্যর্থ হলে বাদও পড়েন দল থেকে। তবে ভাগ্যের জোরে আবার ফিরে এসেছিলেন দলে। আরেক কিংবদন্তি জর্জ হেডলির চোটে শেষ টেস্টে সুযোগ পেয়ে যান উইকস। কিন্তু জ্যামাইকায় সেই টেস্টে মাঠে নেমে দুয়ো শুনতে হয়েছিল দর্শকদের! কারণ দর্শকেরা উইকসের জায়গায় দেখতে চেয়েছিলেন স্থানীয় ক্রিকেটার জন হল্টকে। উইকস বুঝতে পেরেছিলেন, এটাই হয়তো তার শেষ সুযোগ। একে ফর্মহীনতার চাপ, এর সঙ্গে নিজের সমর্থকদের বিরূপ আচরণ- দুটো চাপই উড়িয়ে দুয়োকে তালিতে পরিণত করেন তিনি ১৪১ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে।

এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া। ভারতের বিপক্ষে পরের চার ইনিংসেও পেলেন তিন অঙ্কের দেখা। সব মিলিয়ে টানা পাঁচ ইনিংসে সেঞ্চুরি করে গড়েন অনন্য এক রেকর্ড, যেটা এতদিনেও ভাঙতে পারেননি কেউ। টানা ছয় সেঞ্চুরিও হতে পারতো, যদি না আম্পায়ারের ‘ভুল সিদ্ধান্তে’ ৯০ রানে আউট হতেন!

খেলোয়াড়ি জীবনে এভারটন উইকসদ্রুততম ১ হাজার রানের রেকর্ডটাও তার দখলে, লেগেছিল মাত্র ১২ ইনিংস, কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের চেয়ে এক ইনিংস কম। উইকস তার ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ৫৮.৬১ গড় নিয়ে, অন্তত ২০ টেস্টে ব্যাট করেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু নয়জনের গড় তার চেয়ে বেশি।

১৯ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণিতে অভিষেকের পর ২২ বছর বয়সে টেস্টে অভিষেক তার। রেকর্ডের ডালি সাজানোর যে আভাস মেলেছিল তার ব্যাটে, চোট সেটা চালিয়ে যেতে দেয়নি। তাই ৩৩ বছরেই বিদায় জানাতে হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। চোটের সঙ্গে লড়াই করে ১০ বছরের খেলতে পেরেছেন ৪৮ টেস্ট, সেখানেই সেঞ্চুরি ১৫টি, করেছেন ৪ হাজার ৪৫৫ রান।

‘থ্রি ডব্লিউ’দের মধ্যে বয়সের দিক থেকে দ্বিতীয় ছিলেন উইকস। সবার বড় ওরেল ১৯৬৭ মাত্র ৪২ বছর বয়সে পাড়ি দেন না ফেরার দেশে। ২০০৬ সালে ৮০ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে যান ‘ছোট’ ওয়ালকট। আর বুধবার ওপারের বাসিন্দা হলেন শেষ সদস্য উইকস।