বাংলাদেশ ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একজন পার্শ্বনায়কের নাম। কিন্তু ২০১৫ সালটা বদলে দিয়েছে তার ভূমিকা। রিয়াদ এখন নায়ক। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেছেন মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করে পার্শ্বনায়ক থেকে মূল নায়কের চরিত্রে উঠে আসেন তিনি।
এছাড়া বছরজুড়েই রিয়াদের ব্যাট কথা বলেছে বাংলাদেশের হয়ে। সর্বশেষ বিপিএলে তিনি মুগ্ধতা ছড়িয়েছেনে অধিনায়ক হিসেবে। বরিশাল বুলসকে ফাইনালে তুলে নেতৃত্বগুণের অনন্য প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি। দেশসেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকের অধিনায়কত্ব নিয়ে চলছে গুঞ্জন। এর মধ্যেই জাতীয় দলের ভবিষ্যত টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অনেকে সামনে আনছেন রিয়াদের নাম।
রিয়াদ নিজে অবশ্য তা মনে করেন না। তারপরও যদি সে রকম কিছু হয়, যদি মুশফিকের দায়িত্ব চলে আসে তার কাছে; তবে মুশফিকই দারুণ খুশি হবেন বলে বিশ্বাস রিয়াদের। অধিনায়কত্ব, নিজের ও দলের পারফর্মসহ আনও নানা বিষয় নিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মুঠোফোনে কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে।
জুটি গড়ার পথে মুশফিক-রিয়াদ
প্রশ্ন : গেল বছরটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা বছর হিসেবে ধরা হচ্ছে। আপনি কিভাবে দেখছেন?
রিয়াদ : কোনও সন্দেহ নেই এ ব্যাপারে। গেল বছরটি বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্মরণীয় একটি বছর হয়ে থাকবে। এমন সাফল্য আমাদের আরও ভালো খেলতে উৎসাহিত করবে। আমরা যেভাবে ক্রিকেট খেলছি, আমার বিশ্বাস নতুন বছরেও আমরা এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবো।
প্রশ্ন : ২০১৬ সালের পরিকল্পনা কিভাবে করেছেন?
রিয়াদ : আগের বছরের মতো পরিশ্রম ঠিকভাবে কাজে লাগালে আমরা আরও ভালো রেজাল্ট করতে পারবো এই বছর। সেই লক্ষ্যেই আমরা বছরের শুরু থেকে কাজ করবো। আমার বিশ্বাস নতুন বছর আমরা সবাই নিজেদের দায়িত্বটা আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করবো। নিজে সেভাবে এখনও কোনও পরিকল্পনা করিনি। ৩ তারিখ থেকে কন্ডিশনিং ক্যাম্প হবে। পুরো বছরে আমাদের অনেক ক্রিকেট খেলতে হবে। সবার আগে ফিট থাকা নিশ্চিত করতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনুশীলন শুরু করার পর পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তা করবো। আপাতত বলতে পারি এই বছর আগের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই। ২০১৫ সালকে ছাড়িয়ে যেতে চাই সাফল্যের বিচারে।
প্রশ্ন : ২০১৫ সালের সেরা ৩টি মুহূর্ত?
রিয়াদ: অনেক সেরা মুহূর্তই আছে। তার মধ্যে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে আমাদের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। এছাড়া প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয় এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ইমরুল-তামিমের ৩১২ রানের রেকর্ড জুটি।
প্রশ্ন : ব্যাটিংয়ে আপনার বদলে যাওয়ার রহস্য কী? অনুপ্রেরণা কী?
রিয়াদ : এখানে রহস্যের কিছু নেই। সবাই আল্লাহর রহমত। ক্রিকেট খেলতে গেলে সব সময়ই চাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। জাতীয় দলের হয়ে খেললে চাপ ছাড়া খেলা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। এগুলো জয় করেই সাফল্য আনতে হয়। কখনও সফল হওয়া যায়, আবার কখনও যায় না। এই বছরটা মোটামুটি ভালোই হয়েছে আমার জন্য। এখন অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না। চাই সামনে তাকাতে। বছরের শুরুতেই অনেকগুলো ম্যাচ খেলতে হবে আমাদের। এখানে যেন আরও ভালো করতে পারি সেই চেষ্টাই থাকবে আমার। পরিশ্রম যেন আরও বাড়িয়ে দিতে পারি।
প্রশ্ন : বিপিএলে আপনার অধিনায়কত্ব নজর কেড়েছে। সবাই এটা নিয়ে কথা বলছে, প্রশংসা করছে। অধিনায়ক রিয়াদের দর্শনটা কেমন?
রিয়াদ: আমার মনে হয়, টিম ভালো পারফরম্যান্স করায় আমার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো সঠিক বলে সবার মনে হয়েছে। টিম খারাপ খেললে ভিন্ন চিত্রও হতে পারতো। এখানে আমার চেয়ে বেশি কৃতিত্ব দলের ক্রিকেটার এবং টিম ম্যানেজম্যান্টের। সবাই খুব হেল্পফুল ছিল। এই কারণে অধিনায়কত্ব করা সহজ হয়েছে। আমি খুব উপভোগ করেছি পুরোটা সময়। অধিনায়কত্বের দায়িত্বটা আমার পারফরম্যান্স ভালো করতেও সাহায্য করে। এটাকে আমি বাড়তি দায়িত্ব মনে করি না। মনে হয় দল আমার দিকে চেয়ে আছে; আমাকে ভালো পারফরম্যান্স করতেই হবে।
প্রশ্ন : হঠাৎ করে টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব আসলে নিতে প্রস্তুত কিনা?
রিয়াদ : এমন প্রস্তাব এলে তখন চিন্তা করা যাবে। এখনই এই সব নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। তবে একটা কথা বলতে পারি। আমরা সবাই পেশাদার। মুশফিক এবং আমি ক্রিকেট মাঠে সতীর্থ, এর বাইরে কিছু না। খেলার বাইরে আমরা আত্মীয়। সবাই যার যার জায়গা থেকে পেশাদারীত্বের মনোভাব নিয়েই থাকে। তবে এটা নিয়ে কথা বলার সময় এখন নয়। এমন ভাবনা বোর্ড ভাবছে কিনা সেটাও আমি জানি না। এটা নিয়ে কমেন্ট করা ঠিক হবে না। যদি কখনও দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাই। আমি সেটা গ্রহণ করতে প্রস্তুত। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, আমি যদি এমন দায়িত্ব পাই, মুশফিক খুশি-ই হবে!
প্রশ্ন : আজ থেকে নতুন একটি বছর? ভক্তদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?
রিয়াদ: সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশ দলকে সবাই যেভাবে সাপোর্ট করছে এটা অতুলনীয়। এমন সাফল্য যেন এই বছরও ধরে রাখতে পারি। আমরা যেন আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারি। আপনাদের প্রত্যাশা যাতে পূরণ করতে পারি সে জন্য দোয়া করবেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভ্ছো।
/এমআর/