১২৫৮ দিন পর সিংহাসনচ্যুত কোহলি, ভিভ-লারারা ছিলেন কতদিন?

বিরাট কোহলি ওয়ানডের এক নম্বর জায়গা ধরে রেখেছিলেন ১ হাজার ২৫৮ দিন। তার চেয়েও টানা বেশি দিন র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান ধরে রাখার কীর্তি আছে। এই জায়গায় কোহলির অবস্থান তৃতীয়। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে টানা সবচেয়ে বেশি দিন এক নম্বরে থেকেছেন, এমন পাঁচ ক্রিকেটার নিয়ে এই আয়োজন-

১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপে আমূল পাল্টে যায় ওয়ানডে ক্রিকেট। সে সময় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কালের বিবর্তনে ৫০ ওভারের ক্রিকেট হয়েছে আরও আকর্ষণীয়। আর টি-টোয়েন্টি যুগে ৩০০ রান দেখা এখন রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, ওয়ানডে ক্রিকেটও দখলে নিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা।

যুগে যুগে রথী-মহারথীদের মুগ্ধ করা পারফরম্যান্সে ২২ গজে ধ্বনিত হয়েছে ক্রিকেটের জয়গান। তাদের মধ্যে এমনও কিছু ব্যাটসম্যান আছেন, যারা ধারাবাহিকার চূড়ান্ত পর্যায়ে থেকে শাসন করেছেন ক্রিকেট বিশ্ব। হালের বিরাট কোহলি যেমন। সব সংস্করণেই তার দারুণ সাফল্য, তবে ওয়ানডে হলে তিনি যেন আরও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। টানা তিন বছর ৫০ ওভার সংস্করণের ব্যাটিং র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান ধরে রাখা যার বড় প্রমাণ। তবে তার সেই যাত্রার ইতি ঘটেছে। ওয়ানডের এক নম্বর জায়গা থেকে তাকে সরিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের বাবর আজম।

৫. ব্রায়ান লারা (১ হাজার ৪৯ দিন)

৯ মার্চ ১৯৯৬ থেকে ২১ জানুয়ারি ১৯৯৯

আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। সর্বকালের সেরাদের ছোট্ট তালিকাতেও তোলা হয় ব্রায়ান লারার নাম। শচীন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং ও জ্যাক ক্যালিসদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেকে অন্য উচ্চতায় তুলেছেন সাবেক ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান। ২৯৯ ওয়ানডেতে ৪০.১৭ গড়ে তার রান ১০ হাজারের ওপরে। ১৯ সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৬৩ হাফসেঞ্চুরি।

ক্রিকেট বিশ্ব টেস্টে তার ৪০০ রানের জন্য সবসময় স্মরণ করে। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটেও যে তার দাপট ছিল অন্য পর্যায়ে, সেটা খুব বেশি আলোচনায় আসে না। ক্যারিবিয়ানদের দুঃসময়ে একাহাতে লড়াই করা লারা ওয়ানডে ব্যাটিং র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিলেন টানা ১ হাজার ৪৯ দিন। ৯ মার্চ ১৯৯৬ সালে শীর্ষে বসে জায়গা ধরে রেখেছিলেন ২১ জানুয়ারি ১৯৯৯ পর্যন্ত।

৪. ডিন জোন্স (১ হাজার ১৪৬ দিন)

৪ জানুয়ারি ১৯৯০ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩

সেসময় ওয়ানডে ক্রিকেট রান তোলার গতি এতটা ছিল না। রানরেট ৪ থাকলেই খুশি থাকতো দলগুলো। কিন্তু ডিন জোন্স হেঁটেছিলেন অন্য পথে। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৬-৭ রান তুলতেন প্রতি ওভারে। গত শতাব্দীর শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের যে আমূল পরিবর্তন আসে, তার শুরুর দিকটায় ছিলেন জোন্স। ৫০ ওভার ক্রিকেটে স্ট্রাইক রোটেট করে দলের রান তোলার হার বাড়িয়ে দিতেন তিনি। ১৬৪ ওয়ানডেতে করেছেন ৬ হাজার ৬৮ রান, গড় ৪৪.৬২।

দারুণ পারফরম্যান্সে ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ের সিংহাসনেও ছিলেন লম্বা সময়। ১ হাজার ১৪৬ দিন, টানা সময়ের হিসেবে এখন পর্যন্ত চতুর্থ। ৪ জানুয়ারি ১৯৯০ সালে এক নম্বর স্থানে বসে টিকে ছিলেন ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩ পর্যন্ত।

৩. বিরাট কোহলি (১ হাজার ২৫৮ দিন)

২২ অক্টোবর ২০১৭ থেকে ১ এপ্রিল ২০২১

বর্তমান সময়ের সেরা ক্রিকেটার কে, এই প্রশ্নে বেশ কয়েকটি নাম আসবে। তবে প্রশ্নটা যদি শুধু ওয়ানডে নিয়ে হয়, তাহলে চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায় বিরাট কোহলি। ২৫৪ ওয়ানডেতে (চলমান) ১২ হাজার ১৬৯ রান, সেঞ্চুরি ৪৩টি, গড় ৫৯.০৭। অবিশ্বাস্য! তিনি যে র‌্যাংকিংয়েও চূড়ায় থাকবেন, সেটাই স্বাভাবিক। আগেও ছিলেন, তবে ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর সিংহাসন দখলের পর ওই জায়গা থেকে আর কেউ তাকে নামাতে পারেননি। তবে গত ১ এপ্রিল সিংহাসনচ্যুত হয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক। তাকে নামিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। টানা ১ হাজার ২৫৮ দিন এক নম্বর থাকার পর জায়গা হারিয়েছেন কোহলি।

২. মাইকেল বেভান (১ হাজার ২৫৯ দিন)

২২ জানুয়ারি ১৯৯৯ থেকে ৩ জুলাই ২০০২

আর একদিন কোহলি এক নম্বরে থাকলেই ধরে ফেলতেন মাইকেল বেভানকে। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে ছিলেন ১ হাজার ২৫৯ দিন। ২২ জানুয়ারি ১৯৯৯ থেকে ৩ জুলাই ২০০২ পর্যন্ত জায়গা ধরে রেখেছিলেন ‘দ্য ফিনিশার’। অস্ট্রেলিয়ার ১৯৯৯ ও ২০০৩ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম সদস্য বেভান। ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাটিং ও পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলার সামর্থ্য তাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ২৩২ ওয়ানডেতে তার করা ৬ হাজার ৯১২ রানের গড় ৫৩.১৭।

১. ভিভ রিচার্ডস (১ হাজার ৭৪৮ দিন)

৮ জানুয়ারি ১৯৮৪ থেকে ২০ অক্টোবর ১৯৮৮

১৯৭০ ও ১৯৮০’র দশকে সবচয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান ছিলেন স্যার ভিভ রিচার্ডস। তিনি এতটাই আগ্রাসী ছিলেন যে ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধেও হেলমেট পরার প্রয়োজন মনে করতেন না! টেস্টে তো ছিলেনই, ওয়ানডেও তার ব্যাটিং ছিল মুগ্ধ নয়নে দেখার মতো। ১৮৭ ওয়ানডেতে ৪৭ গড়ে করেছেন ৬ হাজার ৭২১ রান। ওই যুগে স্ট্রাইকরেট ৯০’র ওপরে! বলার অপেক্ষা রাখে না বোলারদের কীভাবে শাসন করতে তিনি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ বিশ্বকাপ জয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এই কিংবদন্তি। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই তিনি বসেছিলেন ওয়ানডের ব্যাটিং র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে। ছিলেন টানা ‍১ হাজার ৭৪৮ দিন! দিনের হিসাবে তার ধারেকাছেও কেউ নেই। ৮ জানুয়ারি ১৯৮৪ থেকে ২০ অক্টোবর ১৯৮৮ পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন সিংহাসন।