আইপিএলে ‘বিশ্বকাপ প্রস্তুতি’ ঠিক কতটা হলো সাকিবের

২০১৯ সালে আইপিএলে খেলা তিন ম্যাচের ব্যর্থতা সঙ্গী করে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ওয়ানডে বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সেই বিশ্বকাপে ব্যাট-বলে তাক লাগানো পারফরম্যান্স ছিল তার। দুই বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে আরেকবার বিশ্বমঞ্চে উপস্থিত হচ্ছেন তিনি আইপিএল খেলেই। এবারও ভারতীয় প্রতিযোগিতায় ভালো সময় যায়নি কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে। তাহলে ২০১৯ বিশ্বকাপ ও আইপিএলের হিসাব মিলালে এবারও কি বিশ্বমঞ্চে জ্বলে উঠবেন সাকিব?

অক্টোবরে ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসার কথা ছিল। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ বাদ দিয়ে গত মার্চে আইপিএল খেলতে ভারতে চলে যান সাকিব। তবে করোনার কারণে আইপিএল বন্ধ হয়ে গেলে কয়েক মাসের ব্যবধানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফেরে আইপিএলের বাকি অংশ। এমনকি ভারতের করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াতে বিশ্বকাপও চলে আসে আরব আমিরাতে। স্বাভাবিকভাবেই সাকিবের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়! শুক্রবার চেন্নাই-কলকাতার ম্যাচ দিয়ে শেষ হয় আইপিএল। প্রতিযোগিতাটি শেষে একটা প্রশ্ন সামনে চলেই এসেছে, সাকিবের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিটা কি যথার্থ হলো?

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপের ভেন্যুতে। আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে সাকিব দলের সঙ্গে শেষ প্রস্তুতির অংশ হতে পারেননি। আজ (শনিবার) দলের সঙ্গে একবেলা অনুশীলন করে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামবেন তিনি। কিন্তু যে প্রস্তুতির জন্য জাতীয় দলের ম্যাচ, জাতীয় দলের ক্যাম্প বাদ দিয়ে সাকিব আইপিএলে পড়ে থেকেছেন, সেখানে প্রস্তুতিটা আসলে কতটা হয়েছে, প্রশ্নটা এই কারণেই। সাকিব কি পেরেছেন পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশের তাঁবুতে যোগ দিতে?

শ্রীলঙ্কার টেস্ট সিরিজ বাদ দিয়ে আইপিএল বেছে নিয়ে সাকিব বলেছিলেন, ‘আমি বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য এই সময়টাতে আইপিএল খেলতে চাই।’ কিন্তু কলকাতার খেলা ১৭ ম্যাচের মধ্যে ৮ ম্যাচে সুযোগ পাওয়া সাকিবের প্রস্তুতি যথার্থ বলার সুযোগ নেই। অন্তত পরিসংখ্যান সেটিই জানান দিচ্ছে। ৮ ম্যাচে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে ৪৭ রান। বল হাতে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ৭.১৯ গড়ে বেশ খরুচে বোলিং করেছেন চলতি মৌসুমে। ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে ইতিবাচক মানসিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সাকিব যেভাবে আউট হয়েছেন, সেটিও ছিল দৃষ্টিকটু। জাতীয় দলকে ‘পায়ে মাড়িয়ে’ সাকিব আইপিএলে ব্যস্ত ছিলেন মূলত বিশ্বেকাপের প্রস্তুতির জন্যই। এমন পারফরম্যান্সের পর তার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

তবে আশার কথা হচ্ছে, সবসময় পরিসংখ্যান সত্য কথা বলে না! হয়তো আইপিএলে সাকিবের এই ব্যর্থতাই উজ্জীবিত করবে জাতীয় দলের জার্সিতে ভালো খেলতে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অনুষ্ঠিত ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে তিনটি ম্যাচ খেলেছিলেন সাকিব। তিন ম্যাচে ৯ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ২ উইকেট। ওইরকম ‘বাজে’ মৌসুম কাটিয়েও সাকিব বিশ্বকাপ মঞ্চে ছিলেন দূর্দান্ত। ৮ ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান করেন। বল হাতে নেন ১১ উইকেট।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপেও সাকিবের কাছ থেকে এমন কিছুই আশা করছে টিম বাংলাদেশ। ওয়ানডে বিশ্বকাপে সফল হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল আইপিএল। এবারও তেমন কিছুরই আশা। আইপিএলে ব্যাট-বলে পারফরম্যান্স না এলেও কন্ডিশন সম্পর্কে সাকিবের ধারণা পুরো দলকে উজ্জীবিত করবে এবং সুবিধা আদায় করে নিতে ভূমিকা রাখবে!