টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছাড়লো

ওমানের বিপক্ষে হাঁফ ছাড়া জয় পেলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। উদ্বোধনী ম্যাচে আইসিসির সহযোগী সদস্য স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে লজ্জার হার। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) ওমানের বিপক্ষে হারলেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হতো মাহমুদউল্লাহর দলকে। সহযোগী দুই সদস্যের বিপক্ষে এই বিদায়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের 'এপিটাফ' লেখা হয়ে যেতো। শেষ পর্যন্ত তা হতে দেননি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ওমানকে ২৬ রানে হারিয়েই মূল পর্বে খেলার সম্ভবনা বাঁচিয়ে রাখলো টাইগাররা।

১৮৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে 'অ্যাশেজ' হারে ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ড। এরপর ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে তাদের কাগজে 'এপিটাফ' ছাপিয়ে দেয়। সেবার ইংল্যান্ডে গিয়ে যেন ইংলিশদের খুন করেছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার আইসিসির সহযোগী সদস্য ওমানের মাটিতে খুন হতে বসেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল! কিন্তু দলীয় পারফরম্যান্সে বেঁচে গেলো মাহমুদউল্লাহর দল।

বিশ্বকাপের মূল পর্ব শুরু হচ্ছে ২৩ অক্টোবর। তার আগে ওমান থেকে চারটি দলকে আরব আমিরাতে যাওয়ার টিকিট কাটতে হতো। গ্রুপ ‘এ’ তে থাকা শ্রীলঙ্কা প্রত্যাশিত ভাবেই ম্যাচ জিতছে। কিন্তু গ্রুপ ‘বি’ তে থাকা বাংলাদেশে শুরুতেই স্কটিশেদের কাছে হোঁচট খায়। ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ে আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের সঙ্গে হেরে মূল পর্বে যাওয়ার সমীকরণটাই কঠিন করে ফেলে। সুপার-১২ তে খেলতে হলে ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিলো না বাংলাদেশের সামনে।

এমন সমীকরণ নিয়েই মঙ্গলবার রাতে ভয়, শঙ্কা আর উৎকণ্ঠার মধ্যেই মরুর বুকে ফুল ফুটিয়েছে বাংলাদেশ। ওমান সহযোগী সদস্য দেশ হয়েও বাংলাদেশের স্নায়ুর পরীক্ষা বেশ ভালো করেই নিয়েছে।

প্রথম পাওয়ার প্লেতে স্ট্রাইক রোটেট করতে পারেনি লিটন—নাঈম। প্রথম ৬ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৯। এখানেই মূলত পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ দল। ১১ ওভারের পর টানা তিন ওভারে নাঈম শেখ ও সাকিব আল  হাসান রানের গতি বাড়ালেও স্কোরবোর্ড বড় করতে সেটি যথেষ্ট ছিল না। তারপরও মনে হচ্ছিলো ১৭০- এর বেশি রান হবে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৪ রানের ইনিংস খেলা নাঈমের ব্যাটিং নিয়েও প্রশ্ন আছে। শুরুতে দলকে চাপে ফেলতে তারও দায় আছে। শেষ তিন ওভারে বাংলাদেশের ব্যাটাররা ১৬ রান তুলতেই হারান চার উইকেট। ফলে ১৫৩ রানের পুঁজি নিয়েই লড়াই করতে হয় ওমানের বিপক্ষে।

২০ ওভারের ক্রিকেটে ১৫৪ রান সহজ লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে দারুণ শুরু পায় ওমান। মাহমুদউল্লাহরা যেটি পারেননি সেটিই করে দেখিয়েছেন ওমানের ব্যাটাররা। প্রথম পাওয়ার প্লে ব্যবহার করে এক উইকেট হারিয়ে ওমান ৪৭ রান তুলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ১৩ তম ওভারের শেষ বলে জাতিন্দারকে ফেরানোর পর ম্যাচ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা চলে আসে। কিন্তু ভয় ছিল তাসকিন তার কোটা পূরণ করতে পারবেন কিনা। প্রথম তিন ওভারে ভালো বল করতে পারেননি এই পেসার। তবে নিজের শেষ ওভারে স্লোয়ার মেরে মাত্র চার রান খরচ করেন তিনি। বাকি কাজটুকু দারুণ ভাবে শেষ করেন মোস্তাফিজ ও সাইফউদ্দিন। এদিন মোস্তাফিজ বেশ খরুচে বোলিং করলেও ওমানের ব্যাটিংলাইনআপ ভেঙ্গে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তারই।

ব্যাটে-বলে অলরাউন্ডস পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জিতে নিয়েছেন সাকিব। যদিও এখানে সবচেয়ে বড় অবদান মেহেদী ও সাইফউদ্দিনের। অফস্পিনার মেহেদী নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ৪ ওভারে ১৪ রান খরচ করে একটি উইকেট নিয়েছেন। অন্যদিকে সাইফউদ্দিন ১৬ রান খরচায় নিয়েছেন একটি উইকেট। শুরুতে মাহমুদউল্লাহ-মোস্তাফিজের হাত ফসকে দুটি ক্যাচ মিস হলেও পুরো সময়টাতেই লড়াই করেই জিততে হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলকে।