অবশেষে এলো উইকেট

একটি উইকেটের জন্য কত চেষ্টা, কত অপেক্ষা। অবশেষে এলো কাঙ্ক্ষিত উইকেট। চতুর্থ দিনে ৬০ ওভার পর প্রথমবার উৎসব করলো বাংলাদেশ। দিনেশ চান্ডিমালকে আউট করে এই উপলক্ষ এনে দিয়েছেন এবাদত হোসেন।

আজ (বৃহস্পতিবার) মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করা লঙ্কানদের সংগ্রহ ১৫৭ ওভারে ৬ উইকেটে ৪৬৫ রান। তাতে লিড নিয়েছে ১০০ রানের। ব্যাট করছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ (১২৩*) ও নিরোশান ডিকবেলা (০)। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছে ৩৬৫ রান।

চতুর্থ দিনের সকাল থেকে বাংলাদেশের বোলারদের কঠিন পরীক্ষা নিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাথুজ ও চান্ডিমাল। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের জুটিতে শুধু চাপ বাড়ছিল স্বাগতিকদের। কোনও বোলারই সফল হতে পারছিলেন না। চান্ডিমাল দুই দফা ‘জীবন’ পেয়েছিলেন রিভিউ নিয়ে। একবার মুমিনুল হকের বল উইকেটকিপার লিটন দাসের গ্লাভসে জমা পড়লে ওঠে আউটের আবেদন। আম্পায়ার সাড়াও দেন। তবে রিভিউ নিলে দেখা যায় বল-ব্যাটে কোনও সংযোগ হয়নি।

বারবার হতাশ হওয়া বাংলাদেশ দল অবশেষে সাফল্য দেখে চা বিরতি থেকে ঘুরে এসে। তৃতীয় সেশনের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। এবাদতের স্লোয়ার সজোরে কাভারে খেলেছিলেন চান্ডিমাল। তবে জায়গা মতো পাঠাতে পারেননি। বুলেট গতিতে আসা বল দারুণ দক্ষতায় তালুবন্দি করেন তামিম। এরই সঙ্গে ভাঙে ম্যাথুজ-চান্ডিমালের ১৯৯ রানের জুটি। ফেরার আগে সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক পূরণ করেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি। ২১৯ বলে ১১ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় করেন ১২৪ রান।

আরেকটি বাজে সেশন বাংলাদেশের

দুটি সেশন পেরিয়ে গেলো। খেলা হলো ৫৮ ওভার। কিন্তু উইকেট নেই বাংলাদেশের। মিরপুরে কেবলই শ্রীলঙ্কার দাপট। কয়েকবার সুযোগ তৈরি হয়েছিল কিংবা আম্পায়ারের আঙুল উঠেছিল, কিন্তু ভাগ্য ও রিভিউ বাংলাদেশের পক্ষে না আসায় কেবলই হতাশার ছবি ফুটে উঠেছে। ফলে উইকেটশূন্য ‍দুটি সেশন পার করেছে স্বাগতিকরা।

বলের পর বল, ওভারের পর ওভার, কিন্তু সাফল্য নেই বাংলাদেশের। স্বাগতিকদের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে বড় সংগ্রহের পথে শ্রীলঙ্কা। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ম্যাথুজ ও চান্ডিমাল। চমৎকার ব্যাটিংয়ে দুজনই তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। ম্যাথুজ পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি আর চান্ডিমাল পূরণ করেছেন ১২তম সেঞ্চুরি।

খাদের কিনারা থেকে বাংলাদেশকে টেনে তুলেছিলেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। শ্রীলঙ্কার অবস্থা অবশ্য তেমন ছিল না। প্রথম ইনিংসে তারা দুর্দান্ত শুরু পায়। সেটি ধরে রেখে রানের চাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে। বিপরীতে দুটি সেশন উইকেটশূন্য কেটেছে বাংলাদেশের।

চতুর্থ দিনের সকালে দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়ার আশায় মাঠে নামে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের লক্ষ্য ছিল, যত দ্রুত লঙ্কানদের অলআউট করে লিড নেওয়া যায়। তবে সেই আশায় গুড়েবালি! উল্টো শ্রীলঙ্কাই লিড নিয়েছে। সফরকারীদের কোনও উইকেটই নিতে পারেনি চা বিরতির আগে। বাংলাদেশের বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার ম্যাথুজ ও চান্ডিমাল।

দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ম্যাথুজ। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলা সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও জ্বলে উঠেছেন। দারুণ সব শটে টেস্ট ক্যারিয়ারে আরেকটি শতক পূরণ করেছেন তিনি। মোসাদ্দেক হোসেনের বল লেগ সাইডে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে দেখা পান টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরির। ২৭৪ বলে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান ম্যাথুজ।

তার সঙ্গে সমানতালে লড়ে যাচ্ছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক চান্ডিমাল। লাঞ্চের আগেই পেয়ে যান টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম হাফসেঞ্চুরি। সেখানেই থামেননি এই ব্যাটার। অসাধারণ ব্যাটিংয়ে পেয়ে গেছেন শতক। এবাদত হোসেনের বলে টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকানোর পর সিঙ্গেল নিয়ে পৌঁছে যান তিন অঙ্কের ঘরে। ১৮১ বলে চান্ডিমাল পূরণ করেন সেঞ্চুরি। তার সঙ্গে ম্যাথুজ মিলে ষষ্ঠ উইকেটে গড়েছেন দেড়শ’ ছাড়ানো জুটি। তাদের ব্যাটে লিড বাড়িয়ে নিচ্ছে সফরকারীরা।

শ্রীলঙ্কার দাপটে বলার অপেক্ষা রাখে না চতুর্থ দিন মোটেও ভালো যাচ্ছে না বাংলাদেশের। সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ, মুমিনুল হক মিলে কয়েকবার সম্ভাবনা তৈরি করলেও কাজে আসেনি। ফলে উইকেটের দেখা নেই স্বাগতিকদের।

শ্রীলঙ্কা আগের দিনের ৫ উইকেটে ২৮২ রান নিয়ে শুরু করেছিল চতুর্থ দিনের খেলা।